বদরুল আলম মজুমদার

  ১০ মে, ২০২২

বিএনপির লক্ষ্য এক দফা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো অভিন্ন সুরে কথা বলছে। নির্বাচনের আগে সরকারকে সরাতে এক দফার আন্দোলনে যেতে চায় বিএনপি। দলটি মনে করে, আন্দোলন করেই সরকারকে সরাতে হবে। কয়েক বছর ধরে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। চলতি সপ্তাহে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া প্রভাবশালী বিদেশি দূতাবাসগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও সম্পর্ক বাড়ানোকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি।

দলের শীর্ষপর্যায়ের ভাবনা অনুযায়ী, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এক দফার আন্দোলনে নামার আগে বিএনপি আরো কয়েক মাস জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়েই মাঠে ব্যস্ত থাকতে চায়। আর এ সময়ের মধ্যে সরকারবিরোধী দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ‘যুগপৎ কর্মসূচির ধরন ও নির্বাচন প্রক্রিয়া’ কেমন হবে; সেটি সাজিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টাও চালাবে দলটি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেছেন, বিএনপি জনগণের দল। এ কারণেই জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়ে তারা মাঠে রয়েছেন। এ ধরনের কর্মসূচি আগামীতেও থাকবে। একই সঙ্গে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতেও আন্দোলন চলবে। কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নেতাদের সঙ্গে টানা বৈঠক করেছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে মাঠপর্যায়ের সংগঠনকে কীভাবে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করা যায়, সে বিষয়ে নেতাদের মতামত নেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি কীভাবে দল গোছাতে চান; সেটিও নেতাদের জানিয়ে দেন। নির্বাহী কমিটির ওই বৈঠকের পর তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দল গোছানোর কাজে গতি আসে বলে নেতারা জানান।

ঢাকা মহানগর থেকে শুরু করে মেয়াদোত্তীর্ণ সব সাংগঠনিক ইউনিটকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে বিএনপিতে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এতে তৃণমূলে এক ধরনের উদ্দীপনা তৈরি হচ্ছে। বাড়ছে সাংগঠনিক প্রাণচাঞ্চল্য। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এসব কাউন্সিলে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আগামী দিনের করণীয় তুলে ধরছেন।

বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের এক নেতা বলেছেন, দলকে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যেতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব অত্যন্ত সুচারুভাবে পালন করছেন তারেক রহমান। প্রতি সপ্তাহে তিনি স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে মিলিত হচ্ছেন, তাদের মতামত নিচ্ছেন, কর্মসূচি ঠিক করছেন। এ রকম সাংগঠনিক তৎপরতা আগে কখনো দেখা যায়নি। একই সঙ্গে তিনি প্রায় প্রতিদিনই দলের সাংগঠনিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কর্মসূচিতে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত থাকছেন।

জানা গেছে, গেল রমজানে তারেক রহমান কেন্দ্র ও সাংগঠনিক জেলা মিলিয়ে ২০টির অধিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিয়েছেন। কূটনীতিকদের সম্মানে আয়োজিত বিএনপির ইফতার মাহফিলে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন তিনি। দলের নেতারা কূটনীতিকদের ওই অনুষ্ঠানে তারেক রহমানের শুভেচ্ছা বিনিময় ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেও উল্লেখ করেছেন।

সম্প্রতি ঢাকায় জার্মান ও তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। জানা গেছে, এসব বৈঠককে ‘রুটিন আলোচনা’ বলা হলেও দলীয়ভাবে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। দলের কূটনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত নেতারা বলেছেন, বহির্বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি হালকাভাবে নেওয়া হচ্ছে না। ইতোমধ্যে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ‘নির্বাচনের পর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত দলগুলোর সমন্বয়ে যে জাতীয় সরকার’ গঠনের প্রস্তাব এসেছে, তাতে কয়েকটি রাষ্ট্র দারুণভাবে আগ্রহী হয়েছে। বিএনপি আসলে কী ধরনের পরিবর্তন আনতে চায়, এ বিষয়গুলোতে কূটনীতিকরা পরিষ্কার বার্তা পেতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন দলের দায়িত্বশীল নেতারা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি কূটনৈতিক সংযোগ বৃদ্ধি করেছে। প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যেও ভূ-রাজনীতির নানা পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে তিনবার ক্ষমতায় থাকা বিএনপিকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতার দাবি, ‘কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর কিছু পজিটিভ ফল ইতোমধ্যে বিএনপি পেয়েছে। এটি অব্যাহত থাকবে।’ দলের কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, আন্দোলন ও নির্বাচন এই দুই বিষয়কে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা করছে বিএনপি। ইতোমধ্যেই ‘নির্বাচনের পর জাতীয় সরকারের’ যে কথা উঠে এসেছে, এখন সেই প্রতিশ্রুতিকে বিস্তারিত ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বুকলেট আকারে প্রকাশের কাজ চলছে বিভিন্ন মাধ্যমে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সমাজের নানাস্তরের বিশেষজ্ঞ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close