নিজস্ব প্রতিবেদক ও পাবনা প্রতিনিধি

  ০৯ মে, ২০২২

বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার

টিটিই শফিকুল কাজে বহাল, চলবে তদন্ত

স্ত্রী বুঝে উঠতে পারেনি আমি কী ধরনের : রেলমন্ত্রী

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলামের তিন স্বজনকে জরিমানা করে বরখাস্ত ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) মো. শফিকুল ইসলামকে কাজে বহাল করা হয়েছে। গতকাল রবিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পশ্চিমাঞ্চলীয় পাকশী রেলওয়ে বিভাগের ব্যবস্থাপক শহীদুল ইসলাম। শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে এই মুহূর্ত থেকে শফিকুলকে কাজে বহাল করলাম। গণমাধ্যমে যেসব বিষয় উঠে এসেছে, সেগুলোর তদন্ত চলবে। ১১ মে পর্যন্ত তদন্ত চলবে। যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে পাকশী পশ্চিমাঞ্চল বিভাগীয় রেলওয়ে কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় টিটিই শফিকুল বলেন, ‘আমি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম আমার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। যেহেতু আমি রেলওয়ের জন্য কাজ করি, দেশের জন্য কাজ করি, সেহেতু আমাকে কাজে যোগদানের সুযোগ দিয়েছে, তাতে আমি খুশি। এটাই আমার প্রথম সাময়িক বরখাস্ত। আগে কখনো সাময়িক বরখাস্ত হইনি। যেদিন আমি ওই রাতে গাড়িতে দায়িত্ব পালন করেছি, সেদিন আপ অ্যান্ড ডাউনে ৭৮ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় করে জমা দিয়েছি।’

এর আগে দুপুরে রেলভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে টিটিই শফিকুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত জানান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, আমি ১১ থেকে ১২ বছর ধরে এমপি, আমার একটা ক্যারিয়ার আছে। আর ৯ মাস হলো নতুন বিয়ে করেছি, শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় এমনকি আমার নতুন স্ত্রীও এখনো আমাকে বুঝে উঠতে পারে নাই আমি কী ধরনের মানুষ।

নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘সবার সহযোগিতা নিয়ে একটা মানুষ ক্যারিয়ারে প্রতিষ্ঠিত হয়। আমি সবার সহযোগিতায় আজকে এ পর্যন্ত এসেছি।’

রেলমন্ত্রীর ‘আত্মীয় পরিচয়’ দিয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করায় তিন যাত্রীকে জরিমানা করেছিলেন টিটিই শফিকুল ইসলাম। আর রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর শাম্মী আক্তার মনি অভিযোগ করেন, তার আত্মীয়দের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ করেছেন টিটিই শফিকুল। ওই অভিযোগ পেয়ে পাকশীর ডিসিও বরখাস্ত করেন শফিকুলকে।

মন্ত্রী শনিবার আত্মীয়তার সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করলেও গতকাল বলেন, টিকিট ছাড়া ভ্রমণ করা যাত্রীরা যে আমার আত্মীয় তা আমি জানতাম না। ভুলভ্রান্তি হলে মানুষ তো সেভাবেই দেখবে। এখানে যদি দেখা যায় আমার স্ত্রী কোনো ভুল করে থাকে। আসলে বিষয়টি আমার নলেজে ছিল না। মেসেজটা যেভাবে গেছে সেটা সঠিক হয়নি। শফিকুলকে তড়িঘড়ি বরখাস্তের আদেশ দেওয়া বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশীর ডিসিও) নাসির উদ্দিনকে নোটিস দিয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত ঈদের পরদিন ৪ মে রাতে। আন্তঃনগর ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ঈশ্বরদী থেকে ঢাকাগামী তিন যাত্রী বিনা টিকিটে এসি কেবিনে ভ্রমণ করছিলেন। এ সময় তারা নিজেদের রেলমন্ত্রীর আত্মীয় বলে পরিচয় দেয়। পরে ওই তিন যাত্রীকে জরিমানা করেন কর্তব্যরত টিটিই শফিকুল ইসলাম। পরদিন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

টিআইবি এবং যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শফিকুলকে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

এই প্রেক্ষাপটে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গত শনিবার সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা তিন যাত্রীর সঙ্গে তার ‘কোনো সম্পর্ক নেই’। তার ‘নাম ভাঙিয়ে’ কেউ হয়তো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুনেছি ওই টিটিই বিনা টিকিটের যাত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তবে সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী বলেন, টিটিই শফিকুল ইসলাম সেদিন তার দায়িত্বই সঠিকভাবে পালন করেছেন। টিটিইর কাজ হলো রেলে শৃঙ্খলা আনা। তার কাজই তো রেলে যাত্রীদের সহযোগিতা করা, তাকে সাহায্য করা, সঠিক জায়গায় সেবা দেওয়া।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close