প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
সংক্রমণ কমায় দিল্লিতে বিধিনিষেধ শিথিল
মহামারি করোনা সংক্রমণের হার খানিকটা কমে আসায় ভারতের রাজধানী দিল্লিতে জারি করা সপ্তাহান্তের কারফিউ তুলে নেওয়া হয়েছে। শর্তসাপেক্ষে খুলে দেওয়া হয়েছে রেস্তোরাঁ, বাজার, বার ও সিনেমা হল। তবে রাতের বেলায় কারফিউ থাকবে, পাশাপাশি স্কুল-কলেজও আপাতত বন্ধ থাকবে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভির।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টার হিসাবে ২ লাখ ৫১ হাজার ২০৯ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা আগের দিনের তুলনায় ১২ শতাংশ কম। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৬২৭ জনের। আগের দিন শনাক্ত হয়েছিল ২ লাখ ৮৬ হাজারের বেশি। দেশটিতে মহামারির শুরুর এখন পর্যন্ত কোভিড আক্রান্ত হয়েছে ৪ কোটি ৬ লাখ মানুষ।
তাদের মধ্যে ৪ লাখ ৯২ হাজার ৩২৭ জন মারা গেছে। টানা পাঁচ দিন পর গত মঙ্গলবার কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখের নিচে নামে।
দিল্লিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বাইজল বলেন, শনাক্তের হার কমে আসায় পর্যায়ক্রমে বিধিনিষেধ শিথিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তার অংশ হিসেবেই এ পদক্ষেপ।
সরকারি ?হিসাবে গত ১৩ জানুয়ারি দিল্লিতে কোভিড শনাক্ত হয়েছিল ২৮ হাজার ৮৬৭ জন। বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৪ হাজার ২৯১ জনে। শহরের হাসপাতালগুলোর ৮৫ শতাংশের বেশি শয্যা এখন খালি।
রাষ্ট্র পরিচালিত ডা. রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক ডা. দেশ দীপক বলেছেন, কোভিডের আগের ঢেউয়ের তুলনায় এখন হাসপাতালে ভর্তিহার অনেক কম। তিনি বলেন, ‘কোভিড আক্রান্ত যেসব রোগী মারা গেছে, তাদের অধিকাংশের ক্যানসার বা কিডনি জটিলতা ছিল। এ ছাড়া বেশির ভাগেরই পুরো ডোজ টিকা দেওয়া হয়নি।’
গত সপ্তাহে কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে দিল্লি কর্তৃপক্ষ। বেসরকারি অফিসগুলোকে আংশিক কর্মী নিয়ে অফিস চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। তবে যতটা সম্ভব কর্মীদের বাসা থেকে কাজ করার পরামর্শ দেয় কর্তৃপক্ষ।
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটে ভারতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ে যে শহরগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে, তার মধ্যে দিল্লি একটি।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত ৪ জানুয়ারি সেখানে সপ্তাহান্তে কারফিউ জারি করে কর্তৃপক্ষ। স্কুল এবং রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ??ভাল্লা এক চিঠিতে বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্যগুলোকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। মন্ত্রীর বরাতে চিঠিতে বলা হয়, এটি একটি উদ্বেগের বিষয় যে, ৩৪টি রাজ্য ও অঞ্চলের ৪০৭ জেলায় সংক্রমণের হার ১০ শতাংশেরও বেশি ছিল।
ভারতে খোলাবাজারে কোভিশিল্ড, কোভ্যাকসিন : ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা খোলাবাজারে করোনাভাইরাসের টিকা কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাকসিন বিক্রির অনুমতি দিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। যদিও এ বিষয়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি।
তবে খোলাবাজারে বিক্রির অনুমোদন পাওয়ার অর্থ এই নয় যে, এখনই সেগুলো ওষুধের দোকানে কিনতে পাওয়া যাবে। আপাতত হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে টিকা কেনা যাবে বলে জানায় এনডিটিভি।
ভারতে ‘নিউ ড্রাগস অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস রুল-২০১৯’-এর অধীনে কোভিড-১৯-এর ওই দুটি টিকা খোলাবাজারে বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ভারতের আইন অনুযায়ী, কোনো নতুন ওষুধ জরুরি ব্যবহারের জন্য সেটির নিরাপত্তা বিষয় তথ্য-উপাত্ত ১৫ দিনের মধ্যে ড্রাগস কন্ট্রোল জেনারেল অব ইন্ডিয়া-ডিসিজিআই কে দিতে হয়। কিন্তু খোলাবাজারে বিক্রির অনুমতি পেতে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে ছয় মাসের মধ্যে নিরাপত্তা বিষয় তথ্য-উপাত্ত দিতে হবে।
ভারত বায়োটেক কোভ্যাকসিন এবং ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট কোভিশিল্ড তৈরি করে। দুটি কোম্পানি তাদের চলমান ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তথ্য দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দিয়েছে।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি কোভিড-১৯ বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল খোলাবাজারে করোনাভাইরাসের ওই দুটি টিকার বিক্রির অনুমতি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল।
পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে দৈনিক আনন্দবাজার জানায়, খোলাবাজারে ওই টিকার দাম হতে পারে সর্বোচ্চ ২৭৫ রুপি। তার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে সার্ভিস চার্জ বাবদ আরো ১৫০ রুপি।
বর্তমানে ভারতে কোভ্যাকসিনের প্রতি ডোজ টিকার দাম ১২০০ রুপি এবং কোভিশিল্ডের প্রতি ডোজ টিকার দাম ৭৮০ রুপি। এরমধ্যে সার্ভিস চার্জ বাবদ ১৫০ রুপি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তবে খোলাবাজারে টিকার দাম ২৭৫ রুপির মধ্যেই রাখার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানায় আনন্দবাজার।
"