শাবিপ্রবি প্রতিনিধি

  ২৯ জানুয়ারি, ২০২২

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানালেন

শাবিপ্রবিতে আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) চলমান আন্দোলনে আহত ও অনশনে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল শুক্রবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন মোহাইমিনুল বাশার রাজ। তিনি বলেন, গত ১৬ জানুয়ারি পুলিশের হামলায়

আহত ও অনশনে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সব খরচ পরিশোধ করায় আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আহত সৌরভের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনায় শিক্ষামন্ত্রী আমাদের মূল দাবিসহ অন্যান্য দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা সব শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

শিক্ষামন্ত্রীকে ক্যাম্পাসে আসার আমন্ত্রণ : চলমান সংকট নিরসনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে ক্যাম্পাসে এসে আলোচনায় বসতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করায় শিক্ষামন্ত্রীকে এ প্রস্তাব দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, ‘আমরা দেখেছি বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী তার প্রেস ব্রিফিংয়ে আমাদের দাবি ও বিভিন্ন সমস্যা প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে শাবিপ্রবিতে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমাদের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করায় শাবিপ্রবির সব শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা তাকে জানাতে চাই তার সঙ্গে আমাদের দাবি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। এর মধ্যে শিক্ষার্থীরা তার সামনে উপস্থাপনের জন্য বেশকিছু সমস্যা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছে। আমরা শিক্ষামন্ত্রীকে আমাদের ক্যাম্পাসে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’

শিক্ষামন্ত্রী দ্রুতই ক্যাম্পাসে আসবেন- এমনটি আশা করে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আশা করব তিনি দ্রুতই ক্যাম্পাসে এসে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিবেন। একই সঙ্গে আমরা এও আশা করছি যে, এরই মধ্যে আমাদের মূল দাবিসহ অন্যান্য ব্যাপারে যেসব আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সেগুলোও অতিসত্বর পূরণ করা হবে।

ফুটবলে উপাচার্যের নাম লেখায় তীব্র সমালোচনা : গত বৃহস্পতিবার অহিংস আন্দোলনের অংশ হিসেবে উপাচার্যবিরোধী প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। যেখানে ফুটবলের গায়ে উপাচার্যের নাম লিখে তারা ম্যাচ খেলেছে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইছে সমালোচনার ঝড়।

অনেকেই এ ধরনের আয়োজনকে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি হিসেবে মন্তব্য করেছেন। এর ফলে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্তরের মানুষের সমর্থন হারাবে বলে মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম শিক্ষার্থীদের এই আয়োজনকে ‘হঠকারি’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি ফেসবুকে লিখেন, ‘ফুটব?লে ফ?রিদ লি?খে লাথি দেয়াটা মানা গেল না। সীমা অতিক্রম করার একটা সীমাও আছে। এটা বস্তির কোনো ঝগড়া নয়। একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী দ্বন্দ্ব। সারা দেশের মানুষ যে অহিংস আন্দোলনে সহমর্মিতা দেখিয়েছে, এই একটি হঠকারি কাজ সবাইকে এই সিদ্ধান্তে নিয়ে যেতে পারে যে, ছেলেমেয়েগুলোতো আসলেই বেয়াদব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ইমরান আহমেদ লিখেন, ?‘এটা প্রতিবাদের কোনো ভাষা হতে পারে না, এটা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একটি কর্মসূচি তা ভাবতেও নিজের প্রতি ঘৃণা লাগছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে। আশা করব এমন কিছু আর দেখতে পাব না ভবিষ্যতে।’

গত ১৩ জানুয়ারি থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

১৬ জানুয়ারি বিকালে তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবররুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এরপর শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় উপাচার্যকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবি করে এতদিন আমরণ অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। গত টানা সাত দিনের অনশন ভাঙলেও উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close