নিজস্ব প্রতিবেদক
তেলের দাম বাড়ল ৫-৮ টাকা
আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির আগে ভোজ্য তেলের দাম বাড়বে না বলে জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তবে মন্ত্রীর সেই কথা বাস্তবে রূপ নেয়নি। বাণিজ্যমন্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করে ভোজ্য তেল সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম ফের বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। লিটারপ্রতি পাঁচ থেকে আট টাকা বাড়ল। এ ছাড়া মুরগির দাম কমলেও মাছ, মাংস ও সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাড়তি দামের বোতলের তেল এরই মধ্যে বাজারে চলে এসেছে। বোতলের সয়াবিন তেলের পাশাপাশি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে খোলা সয়াবিন তেল ও পাম অয়েল। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দুদিন ধরে তেলের দাম বাড়তি। বোতলের সয়াবিন তেলের দাম লিটারে পাঁচ থেকে আট টাকা বেড়েছে। খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। পাম অয়েলের দামও কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়েছে।
ব্যবসায়ীদের তথ্যানুযায়ী, নতুন আসা বোতলের এক লিটার তেলের গায়ের (লেভেলে লেখা) মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬৫ থেকে ১৬৮ টাকা, যা আগে ছিল ১৬০ টাকা। আর পাঁচ লিটার বোতলের সয়াবিন তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৮৫ থেকে ৮০০ টাকা, যা আগে ছিল ৭৬০ টাকা।
অন্যদিকে খোলা সয়াবিন তেলের কেজি এখন খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা, যা আগে ছিল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। পাম অয়েলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, যা আগে ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা।
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মো. মিজানুর বলেন, নতুন দামের সয়াবিন বাজারে চলে এসেছে। নতুন দামের বোতলের এক লিটার সয়াবিন তেল আগের থেকে পাঁচ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। গায়ের মূল্য ১৬৫ টাকা, আমরা বিক্রি করছি ১৬০ টাকা। আগে এ তেল ১৫৫ টাকা বিক্রি করেছি। একইভাবে পাঁচ লিটার বোতলের সয়াবিন তেলের দামও বেড়েছে।
প্রসঙ্গত, ব্যবসায়ীরা ভোজ্য তেলের দাম বাড়িয়ে দিলেও গত ১৯ জানুয়ারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, আগামী ১৫ দিনে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ছে না। ৬ ফেব্রুয়ারির পর সিদ্ধান্ত হবে তেলের দাম বাড়বে না কমবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতের বড় সুবিধা তাদের ডিউটি স্ট্রাকচার আমাদের চেয়ে কম। আমাদের যেখানে ১৮ থেকে ২০ শতাংশ, সেখানে তারা ৫ শতাংশ দেয়। এসব বিবেচনা করে আমাদের দেখতে হবে। এজন্য আমি ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছি, একটু সময় দিতে। আমরা আগামী ৬ তারিখ (ফেব্রুয়ারি), মানে ১৬ দিন পর বসে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হলে বাড়াব। কমানোর প্রয়োজন হলে কমাব। সবকিছু বিবেচনা করে যেটা সুবিধাজনক হয়, সেটি করা হবে।
এর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার কথা উল্লেখ করে নতুন দাম কার্যকরের দাবি জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। পরে সেটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ট্যারিফ কমিশনে পাঠায় মন্ত্রণালয়।
এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগি দাম কমেছে কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত। মুরগির দাম কমলেও সপ্তাহের ব্যবধানে সবজি, ডিম, মাছ, পেঁয়াজ, আলুর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা। পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা।
মুরগির দামের বিষয়ে কাপ্তানবাজারের ব্যবসায়ী মো. মিজানুর বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে মুরগির দাম কমতির দিকে। এক মাসের মধ্যে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৪০ টাকা কমেছে। আমাদের ধারণা সামনে মুরগির দাম আরো কমবে।
আর বাজারে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। শিম মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৬০ টাকা। শীতের অন্যতম সবজি ফুলকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। শালগমের (ওল কপি) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী মো. রাজু বলেন, এখন দিন যত যাবে, বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ কমবে। সবজির দাম আর কমার সম্ভাবনা কম। তবে পাকা টমেটোর দাম সামনে আরো একটু কমতে পারে। মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। শিং ও টাকি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা।
"