নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ জানুয়ারি, ২০২২

মিট দ্য প্রেসে সিইসি হুদা

আমি রাতের ভোট দেখিনি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে হয়েছিল কি না তা আমার নজরে আসেনি। এটি অভিযোগ আকারেই থেকে গেছে। অভিযোগের তদন্ত আদালতের নির্দেশনা ছাড়া হয় না।

গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত মিট দ্য প্রেসে উপস্থিত হন সিইসি। এ সময় সিইসি তার পাঁচ বছর মেয়াদের নানা কর্মযজ্ঞ তুলে ধরেন। ‘আরএফইডি টক’ শীর্ষক এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সোমা ইসলাম। সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক কাজী জেবেল।

বৈঠকে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. শামসুল হুদার নেওয়া সীমানা বিন্যাস ত্রুটিপূর্ণ ছিল, সুজন সম্পাদক বদিউল আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং সহকর্মী ইসির জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের কর্মকাণ্ড নিয়েও কথা বলেন সিইসি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে এ বিষয়ে সিইসি বলেন, অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে কনক্লুসিভ কিছু বলতে পারি না। কারণ আমি তো দেখি নাই। আপনিও দেখেননি যে রাতে ভোট হয়েছে। তদন্ত হলে বেরিয়ে আসত, বেরিয়ে এলে আদালতের নির্দেশে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যেত। সারা দেশের নির্বাচনও বন্ধ হয়ে যেতে পারত। রাজনৈতিক দলগুলো কেন আদালতে অভিযোগ দেয়নি সেটা তাদের বিষয়। এ সুযোগ তারা হাতছাড়া করেছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো রাজনৈতিক দলের চাপ ছিল না। নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের আগেও আমি বলেছিলাম, কোনো রাজনৈতিক দলের চাপ আগেও ছিল না, এখনো নেই। কুমিল্লা এবং নারায়ণগঞ্জে আমাদের যে অবস্থান অন্য কোনো নির্বাচনের চেয়ে একটুও অতিরিক্ত অবস্থান ছিল না। অন্য সব নির্বাচন যেভাবে করেছি, সেভাবেই হয়েছে। একটা জায়গায় আমাদের অতৃপ্তি আছে, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন ছাড়া অন্য জায়গায় সংঘাত হয়েছে। এগুলো কাম্য না। তবে বর্তমান কমিশনের আমলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ সব ধরনের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে, প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়েছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন শতভাগ ইভিএমে করা সম্ভব হবে না, তবে ৫০ ভাগ করা যেতে পারে।

ইসির বিরুদ্ধে ৪২ নাগরিকের করা অভিযোগ ভিত্তিহীন ছিল মন্তব্য করে সিইসি বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন আইন হলে রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা ফিরে আসবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সার্চ কমিটি ব্যবস্থা ভালো, তবে আইন হওয়া সবচেয়ে বেশি ভালো।

শামসুল হুদা ও বদিউল আলম মজুমদারের সমালোচনা : সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সমালোচনা করে সিইসি বলেন, সদিচ্ছা থাকলে বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভালো নির্বাচন করতে পারত। তাদের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক নয়। তারা বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। কয়েক দিন আগে এ টি এম শামসুল হুদা সাহেব সবক দিলেন। তিনি বললেন, আমাদের অনেক কাজ করার কথা ছিল, করতে পারিনি, বিতর্ক সৃষ্টি করেছি। একজন সিইসি হিসেবে তার কথা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। এর মধ্যে একজন বাহবা নিয়ে যাবেন বা স্বীকৃতি নিয়ে যেতে পারে এটা সম্ভব না। তার পক্ষে সম্ভব; আমিত্ব বোধ থেকে বলতে পারেন। ২০০৭-০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে সিইসির দায়িত্ব পালন করা এ টি এম শামসুল হুদা ‘বিরাজনীতির পরিবেশে সাংবিধানিক ব্যত্যয়’ ঘটিয়েছেন। ইসির দায়িত্ব ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা। তিনি নির্বাচন করেছেন ৬৯০ দিন পরে। এ সাংবিধানিক ব্যত্যয় ঘটানোর অধিকার তাকে কে দিয়েছে? তখন গণতান্ত্রিক সরকার ছিল না, সেনাসমর্থিত সরকার ছিল; ইমার্জেন্সির কারণে এটা করেছে।

এদিকে, নবম সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিককে (সুজন) প্রার্থীদের হলফনামা প্রচারের কাজ দেওয়ার সমালোচনা করে কে এম হুদা বলেন, বিরাজনীতির পরিবেশের মধ্যে তিনি (এ টি এম শামসুল হুদা) এটা করেছেন। লাখ লাখ টাকা কীভাবে দিলেন? এ রকম অনেক কিছু করা যায়। ভেবে চিন্তে কাজ করতে হবে। সব কিছুর ঊর্ধ্বে এখান থেকে গেছে, এটা সম্ভব না, ক্যানট বি। অনেক সমালোচনা আছে।

ইসি মাহবুব তালুকদার একজন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি : দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদারের বিভিন্ন মন্তব্যকে তার ‘ব্যক্তিগত এজেন্ডা’ বলে মন্তব্য করেন সিইসি হুদা। সিইসি বলেন, তিনি একজন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। শারীরিক দিক দিয়ে তিনি আসলেই অসুস্থ। তিনি কখনো আইসিইউতে, কখনো সিসিইউতে থাকেন। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করেছেন, ভারতে করেছেন। বছরে তার চিকিৎসার পেছনে প্রায় ৩০-৪০ লাখ টাকা নির্বাচন কমিশন বহন করে। ইসি মাহবুব তালুকদার নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ও বিনা ভোটের নির্বাচন নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে সিইসি বলেন, বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ নির্বাচিত হলে ইসির কী করার আছে? এটা তো প্রার্থীদের সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনই একমাত্র সমাধান : প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন কঠিন হলেও এটাই একমাত্র সমাধান। গণতন্ত্রে উন্মুক্ত পরিবেশ থাকতে হবে। এখানে বন্দুকের নল অথবা লাঠি উঁচিয়ে নির্বাচনকে সাইজ করা যায় না। এখন রাজনৈতিক পরিমন্ডলে নির্বাচন হয়, এ নির্বাচন অত্যন্ত কঠিন হলেও এর মধ্য দিয়েই আমাদের যেতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close