গাজী শাহনেওয়াজ
শীতে ভোগাচ্ছে করোনা
প্রাণসংহারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সঙ্গে শীতের সম্পর্ক নেই। তবে ঠান্ডা, জ্বর ও সর্দি-কাশির প্রাদুর্ভাব বাড়ে শীত মৌসুমে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীত মৌসুমে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ থাকে। মানুষ একত্রে জড়োসড়ো হয়ে অবস্থান করে। বদ্ধ ঘরের মধ্যে ভ্যান্টিলেশন কম থাকায় করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে। ফলে শীতে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ারও আশঙ্কা থাকে। এ নিয়ে শঙ্কিত মানুষ।
এদিকে, আগের দিনের চেয়ে গতকাল চার হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যুও বেড়েছে। আবার আবহাওয়া পরিস্থিতিও কয়েক দিন ধরে খামখেয়ালিপনা দেখা যাচ্ছে। সারা দেশে বৃষ্টিপাতও ঘটেছে। ফলে সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে
পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের অন্তত তিনটি উপধরন (সাব-টাইপ) পাওয়া গেছে। ঢাকা শহরে যে তিনটি উপধরন আছে, সেগুলো আফ্রিকান, ইউরো-আমেরিকান এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ওমিক্রন ধরনের সঙ্গে মিলে যায়। আইসিডিডিআরবি বলছে, জানুয়ারির প্রথম দুই সপ্তাহে তাদের ল্যাবরেটরিতে ১ হাজার ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এরমধ্যে ২৮ শতাংশই ছিল করোনায় আক্রান্ত। আর আক্রান্তদের মধ্যে ওমিক্রন ছিল ৬৯ শতাংশের নমুনায়।
জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, করোনা প্রতিরোধে কার্যক্রম নেওয়ার ক্ষেত্রে একটা সমন্বয়হীনতা ছিল। পরিপূর্ণ কর্মকৌশলে ঘাটতি রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, সাধারণ মানুষকে করোনা প্রতিরোধে যুক্ত করার যে কৌশল ছিল, সেটাও করা হয়নি। পাড়ায়-মহল্লায় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে যে জনপ্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশনা ছিল, সেটাও প্রতিপালন করা হয়নি। ফলে করোনা নিয়ন্ত্রণহীন পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। মাস্ক পরা, টিকা নেওয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার ও হাত ধোয়ার যে কর্মসূচি ছিল, তাণ্ডও দেখা যায় না। কিন্তু প্রজ্ঞাপন দিয়ে সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড. আবদুল মান্নান বলেন, ‘শীত বাড়লে গত বছর আমরা দেখেছি করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়েছিল। এবারও আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শীতের প্রকোপ থাকবে- এমন আশঙ্কা আমরা করছি। কারণ কখনো কখনো শীতের সর্বোচ্চ মাত্রা রেকর্ড হয়। শীতের সঙ্গে বয়স্ক মানুষ, শিশু ও মধ্যবয়সি সবস্তরের মানুষের জ্বর, কাশি ও সর্দি-হাঁপানি দেখা যায়। এবারও আমরা শুনছি, ঘরে ঘরে মানুষ অসুস্থ।’ তিনি বলেন, ‘উইন্টাররা আমাদের এখানে দুর্বল। যার কারণে সেই পজিশনটা আসেনি। যার কারণে করোনা বাড়ছে। তবে এ বিষয়ে বেসিক কোনো স্টাডি নেই। এমনকি করোনা ২০১৯ সালের আগে ছিল না। এখন নতুন করে গবেষণা করতে হবে। এবারও শীতের প্রভাব বেশি থাকার কারণে করোনার প্রভাব বাড়ছে।’
আবহাওয়াবিদ বজলুল রশীদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘শীত মৌসুমে যে বৃষ্টিটা হয়, আমরা এটাকে বলি পশ্চিমা লঘুচাপ। এ সময়ে বাতাসটা উত্তরদিক থেকে আসে। পশ্চিমা লঘুচাপের দূরত্ব বেশি থাকলে শীতের প্রকোপ বেশি থাকে। মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি হয়।’ তিনি বলেন, ‘শীত মৌসুমে ওয়েস্টার্ন ডিসটেন্ট কম থাকে। এবার আমরা দু-তিনটি দেখছি। অথচ ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে কম থাকার কথা। ফলে এ বছর তাপমাত্রা ওই অর্থে কমেনি। গতকাল ভারী বৃষ্টি হয়েছে; সারা দেশেই এর প্রভাব পড়েছে। মঙ্গলবারও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।’
"