নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২২

রেকর্ডের কাছাকাছি সংক্রমণের হার

দেশে মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার ও সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে মৃত্যুও। অতি সংক্রামক ধরন ওমিক্রনের দাপটে দৈনিক শনাক্ত পৌঁছে গেছে ১৫ হাজারের কাছাকাছি; যেমন পরিস্থিতি দেখতে হয়েছিল ২৫ সপ্তাহ আগে, ডেল্টার সময়। সেদিন ১৫ হাজার ৭৭৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে। নতুন রোগীদের নিয়ে শনাক্ত রোগী দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬৪ জনে। তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ২৩৮ জনের প্রাণ গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (রবিবার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত) ভাইরাসটিতে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর নতুন করে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৮২৮ জনের শরীরে; যা গত ৩ আগস্টের পর সর্বোচ্চ। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার দাঁড়াচ্ছে ৩২ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা গত ছয় মাসের সর্বোচ্চ। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সরকারি হিসাবে গত এক দিনে দেশে সেরে উঠেছেন ৯৯৮ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৫৯ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় যে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী। এর মধ্যে ৬ জন ঢাকার, ১ জন চট্টগ্রামের, ২ জন সিলেটের, ১ জন খুলনার, ১ জন বরিশালের, ১ জন রাজশাহীর ও ৩ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা।

রাজশাহী ব্যুরো : রেড জোনে থাকা শিক্ষা নগরীখ্যাত বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে আবার করোনা সংক্রমণের চূড়ায় উঠতে শুরু করেছে। নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে জেলায় সংক্রমণের হার এসেছে ৬০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এর আগের দিন ছিল ৪৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। আর সর্বোচ্চ সংক্রমণের দিনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন আরো তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালে মারা যাওয়া তিনজনই রাজশাহী জেলার বাসিন্দা। এদের মধ্যে একজন করোনা পজিটিভ থাকলেও অন্য দুজন রোগটির উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। মৃত পরিবারের অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে মরদেহ দাফনের নির্দেশনা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এ তথ্য নিশ্চিত করে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী সোমবার দুপুরে জানান, মৃত তিনজনের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী রয়েছেন। আর সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত করোনা ইউনিটে থাকা ১০৪ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিলেন ৫১ জন। এদের মধ্যে করোনা পজিটিভ ৩৫ জনের। আর অন্যরা করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন। ভর্তি রোগীদের মধ্যে রাজশাহী জেলার ২৪ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৬, নওগাঁর ৫, নাটোরের ৩, পাবনার ৫, বগুড়ার ১, কুষ্টিয়ার ৪, চুয়াডাঙ্গার ১, সিরাজগঞ্জের ১ এবং জয়পুরহাটের ১ জন। এমন পরিস্থিতিতে টিকা নেওয়ার পাশাপাশি সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিয়েছেন এখানকার চিকিৎসকরা।

যশোর : রেড জোনে থাকা সীমান্তবর্তী জেলা যশোরে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। পাশাপাশি ভয়ংকর রূপ নিয়েছে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরন।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে ৪১ নমুনার মধ্যে ৩৫ জনেরই ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। এরা সবাই যশোরের স্থায়ী বাসিন্দা। শনাক্ত হওয়াদের বিদেশ ভ্রমণের কোনো ইতিহাস নেই। বিদেশফেরত কারো সংস্পর্শে আসার কথাও জানা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে যশোরে ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে বলে জানিয়েছেন যবিপ্রবি জিনোম সেন্টারের গবেষক দলের সদস্যরা। তারা বলছেন, ওমিক্রন খুবই দ্রুত সংক্রমণশীল। এ কারণে যশোর অঞ্চলে এটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ৩০ শতাংশের অধিক নমুনা পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছে।

যবিপ্রবির অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, যশোরে ওমিক্রন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ৩০ শতাংশের অধিক নমুনা পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছে।

ইকবাল কবীর আরো বলেন, গবেষণায় লক্ষ করেছি, যারা টিকা নেওয়ার পর ওমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন কম। এমনকি তারা অনেক সুস্থ থাকছেন। এজন্য এখনো যারা টিকা নেননি; তাদের উচিত দ্রুত টিকা নেওয়া। আর মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানিয়েছেন, যশোরে ওমিক্রন উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। তবে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ করোনার এই নতুন ধরন ওমিক্রন সামাজিক সংক্রমণ বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে মানতে নারাজ। জেলায় এরই মধ্যে যারা ওমিক্রনে সংক্রমিত হয়েছে; তাদের সঙ্গে কারা সংস্পর্শে এসেছে তাদের নজরে রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

এদিকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাধারণ মানুষকে মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ মানুষ মাস্কই পরছে না। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষ মাস্কবিহীন চলাফেরা করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তেমন অভিযান চালানো হচ্ছে না। এজন্য শহরের অধিকাংশ বাণিজ্যিক এলাকায় জটলা লেগেই থাকছে। যাদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জনবল সংকটের কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।

যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সামেজ্জামান বলেন, ‘এ মুহূর্তে জেলা প্রশাসনের তিনজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট করোনায় আক্রান্ত। কয়েক দিন আগে সিনিয়র সহকারী কমিশনার জাকির হোসেন করোনায় আক্রান্ত হন। তিনি এখনো চিকিৎসাধীন। শনিবার সহকারী কমিশনার মাহমুদুল হাসান এবং কে এম মামুনুর রশীদ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ মুহূর্তে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মেহরাজ শারমিন কর্মরত। একজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

বগুড়া : বগুড়ায় এক দিনে ১৬৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে; যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। শনাক্তের হার ৪৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহীন জানান, শহরের পাশাপাশি করোনার সংক্রমণ উপজেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষায়িত ৩টি হাসপাতালসহ উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে শয্যা, অক্সিজেনসহ চিকিৎসাসামগ্রী প্রস্তুত রয়েছে।

বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close