সংসদ প্রতিবেদক

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২২

বিলের সুপারিশ সংসদীয় কমিটিতে চূড়ান্ত

নৈতিকস্খলনে সাজা হলে অযোগ্য হবেন সিইসি

জাতীয় সংসদে উত্থাপিত নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন সংক্রান্ত বিলে দুটি ধারায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে সংসদীয় কমিটি। এই পরিবর্তনের ফলে নৈতিকস্খলনজনিত কারণে সাজাপ্রাপ্ত হলেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) পদে অযোগ্য হবেন। আর সিইসি-ইসির যোগ্যতায় সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদের পাশাপাশি ‘স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য পেশা’ যুক্ত হয়েছে।

গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে কমিটি সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মোস্তাফিজুর রহমান, শামসুল হক টুকু, আবদুল মজিদ খান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, রুমিন ফারহানা ও সেলিম আলতাফ জর্জ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কমিটি সূত্র জানায়, বিভিন্ন ধারায় বেশ কিছু পরিবর্তন এনে বিলটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংসদে উত্থাপিত বিলের ৫ (গ) ধারায় বলা আছে, সিইসি ও ইসি হতে কোন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই ধারায় সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদের পাশাপাশি ‘স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য পেশা’ যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সিইসি ও ইসি পদে অযোগ্যতার ক্ষেত্রে ৬ (ঘ) ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এখন সেখানে বলা আছে, নৈতিকস্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে সিইসি ও ইসি হওয়া যাবে না। এখানে দুই বছরের কারাদণ্ড উঠিয়ে দিয়ে শুধু কারাদণ্ডের সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থাৎ, নৈতিকস্খলন ফৌজদারি অপরাধে যেকোনো মেয়াদের সাজা হলেই এক্ষেত্রে অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এসব সুপারিশসহ বিলের প্রতিবেদন আগামী বুধবার সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন করা হবে বলে

জানিয়েছেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার। তিনি বলেন, সিইসি ও ইসি হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নৈতিকস্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত বিষয়ে দুই বছর শব্দটি বাদ দিয়েছি। আর স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও পেশাজীবী (যারা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত) তাদের মধ্য থেকেও সিইসি ও ইসি হতে পারবেন। এটা আমরা যুক্ত করেছি এবং সবাই একমত হয়েছি।

এক প্রশ্নের জবাবে কমিটির সভাপতি বলেন, সংসদে উত্থাপিত বিলটিকে আগের সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশনকে ‘বৈধতা’ দেওয়া হচ্ছে বলে আলোচনা রয়েছে। অনেকে বলছে, ‘ইনডেমনিটি’ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এটা ইনডেমনিটি নয়। বিলের ৯ দফায় কিন্তু আগের দুটো সার্চ কমিটির বৈধতা দেওয়া হয়েছে। ওই দুই সার্চ কমিটিকে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়েছে। একটা লিগ্যাল সাপোর্ট দেওয়া। সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতি ঐকমত্যের ভিত্তিতে করেছিল। সেটাকে সাপোর্ট দেওয়া হলো। আর আইনটা কিন্তু নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে। সার্চ কমিটির জন্য আইন নয়। তিনি আরো বলেন, আগের দুটো কমিশনের কার্যক্রমকে হেফাজত দেওয়ার বিষয় এখানে আসেনি। শুধু সার্চ কমিটির বৈধতা দেওয়া হয়েছে।

সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ইতোপূর্বে গঠিত অনুসন্ধান কমিটির ও তৎকর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলি এবং উক্ত অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ বৈধ ছিল বলে গণ্য হবে এবং উক্ত বিষয়ে কোন আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।’

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সংসদীয় কমিটিতে আলোচনার পর বিলে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে কী পরিবর্তন হয়েছে, সেটা আমি এখানে বলছি না। কারণ এটা সংসদ আগে জানার অধিকার রাখে। আমি যেদিন বিলটি সংসদে পাসের জন্য উত্থাপন করব, সেদিনই বিলটিতে কী পরিবর্তন আনা হয়েছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলব।

এ বিষয়ে কমিটিতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ওই দুটি ধারায় পরিবর্তন ছাড়া বিলে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। কমিটির সুপারিশসহ সংশোধিত আকারে বিলের প্রতিবেদন সংসদে উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার সংসদে প্রতিবেদনটি উত্থাপন হলে পরদিনই বিলটি পাসের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং সার্চ কমিটি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য বিলটি গত রবিবার সংসদে উপস্থাপন করা হয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি সংসদে উপস্থাপনের সময় বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশিদ আপত্তি জানালেও কণ্ঠভোটে তা নাকচ হয়। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close