নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২২

পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী

পূর্বসূরিদের রক্ত যেন বৃথা না যায়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূর্বসূরিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সব আঘাত থেকে রক্ষা করতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, মনে রাখবেন, জাতির পিতার দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয়, যা আমাদের এই স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, আপনাদের পূর্বসূরিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সেই স্বাধীনতাকে সব আঘাত থেকে রক্ষা করতে হবে।

গতকাল রবিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০২২ সালের পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।

১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগে প্রথম পুলিশ সপ্তাহ উদযাপনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই রাজারবাগে যারা শহীদ হয়েছিলেন, তাদের কথা মনে রাখতে হবে। তারা আপনাদেরই ভাই। তাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিশ্বাস, জনবান্ধব পুলিশিংয়ের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন।

পুলিশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর আইজিপি র‌্যাংক যেটা জাতির পিতা দিয়েছিলেন, সেটা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসকরা এসে কেড়ে নিয়ে যায়। আমরা ফের আইজিপি র‌্যাংক ব্যাজ প্রবর্তন করি।

অপরাধ তদন্তে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানোর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এখন পুলিশ বাহিনী ‘প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন পুলিশ বাহিনীতে’ উন্নীত হয়েছে। আমাদের আগে যেখানে রেশন খুব সীমিত আকারে ছিল, সেখানে আমরা শতভাগ রেশন পুলিশের জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছি। চাকরিরত অবস্থায় কেউ যদি মৃত্যুবরণ করে বা গুরুতর আহত হয়, তাদের আর্থিক অনুদান বৃদ্ধি করা হয়েছে। রাজারবাগে ১০ তলা ভবন করে সেখানে পুলিশের জন্য আলাদা হাসপাতাল নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।

জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে পুলিশ বাহিনী এখন দ্রুত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, এটা মানুষের ভেতরে আস্থা, বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে; পুলিশের প্রতি মানুষের বিশ্বাসও বেড়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশ যথাযথ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া, রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লাশ দাফন করার মতো কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে পুলিশ বাহিনীর সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘বিএনপি সবসময় একটা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করে। অগ্নিসন্ত্রাস, গাছ কেটে ফেলা, রাস্তা কেটে ফেলাসহ নানা ধরনের কাজ তারা করেছে, এমনকি পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে। যেভাবে পুলিশ সদস্যদের তারা নির্মমভাবে মেরেছে সেটা সত্যিই ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ করে তারা দেশে একটা অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিল। কত মানুষকে তারা হত্যা করেছে তার কোনো সীমা নেই। সেই সময় পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে মানুষের জীবনে শান্তি-নিরাপত্তা নিয়ে এসেছে। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তারা দায়িত্ব পালন করেছে। সেজন্য সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, একদিকে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা, অন্যদিকে করোনাভাইরাসের প্রভাব- এত প্রতিকূল অবস্থার মাঝেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে শতভাগ বিদ্যুৎ আমরা পৌঁছে দিয়েছি, আমরা ব্যাপকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেছি, পুলিশের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি, নদীমাতৃক বাংলাদেশ, সেখানে নদীগুলোতেও যাতে নৌযান তারা পায় তার ব্যবস্থাও আমরা করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছিল, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে। আজকে আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, যখন আমরা ২০২১ সালে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি, সে সময় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। কাজেই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিয়ে যাব এবং বাংলাদেশকে আমরা উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। এই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের পুলিশ বাহিনী যথাযথ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও রেখে যাবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমাদের লক্ষ্য। আজকে খাদ্য নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি, চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি, শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে পুলিশ সপ্তাহের প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। তার পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাহস ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ সার্ভিসের কৃতী সদস্যদের পুলিশ পদক দেন।

রাজারবাগে ঢাকা মহানগর পুলিশ লাইনসে এ অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close