নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ জানুয়ারি, ২০২২

লাশ গুমের জন্য বন্ধ রাখা হয় সিসিটিভি

অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিমু ও তার স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেলের গ্রিন রোডের বাসার সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে দেখেছে পুলিশ। তবে সিসিটিভি ক্যামেরা সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় গত রবিবারের সকাল ১০টা ৩ মিনিট থেকে ১০টা ১৭ মিনিট পর্যন্ত ১৪ মিনিটের ফুটেজ পাওয়া যায়নি।

পুলিশের ভাষ্য, রবিবার সকালের ওই ১৪ মিনিটের ভিডিও পুরোপুরি অন্ধকার পাওয়া গেছে। বাসার লোকজন সে সময় বিদ্যুৎ না থাকার কথা জানায়। তবে পুলিশ আশপাশের বাসা ও বিদ্যুৎ অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, ওইদিন ওই এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল না।

পুলিশের সন্দেহ, সেদিন পরিকল্পিতভাবেই ওই ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, গ্রিন রোডের বাসায় শিমুকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর গত রবিবার বন্ধু ফরহাদকে সঙ্গে নিয়ে কেরানীগঞ্জে লাশ ফেলে দিয়ে আসেন নোবেল। ফিরে এসে কলাবাগান থানায় একটি নিখোঁজের ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি।

গত মঙ্গলবার নোবেল ও ফরহাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের মাধ্যমে ৩ দিনের জন্য রিমান্ডে পায় পুলিশ। পরে বুধবার রিমান্ডের প্রথম দিনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সাব-ইন্সপেক্টর চুন্নু মিয়া জানান, ‘বুধবার জিজ্ঞাসাবাদে আসামি শিমুর স্বামী নোবেল জানিয়েছেন, রবিবার ভোরের দিকে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এরপরই রাগের মাথায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন নোবেল।’

নোবেলকে উদ্ধৃত করে চুন্নু মিয়া আরো বলেন, তাদের (শিমু-নোবেল) মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কলহ চলছিল। ভোরে শিমুকে হত্যার পর সকালেই বন্ধু ফরহাদকে ফোন করেন নোবেল। এরপর তারা দুজন মিলে লাশটি বস্তায় ভরে গুম করে ফেলার চেষ্টা করেন।

তদন্ত কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল কিনা, হত্যার আগে শিমুকে অজ্ঞান করা হয়েছিল কিনা, শুধু বন্ধুত্বের খাতিরেই ফরহাদ লাশ গুম করার মতো অপরাধে জড়িয়েছেন, নাকি তিনিও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন! এখন এসব তথ্য জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।

কী ঘটেছিল সেদিন?

পুলিশকে নোবেল জানিয়েছেন, রবিবার সকাল ৭টা থেকে ৮টার দিকে শিমুকে গলাটিপে হত্যার পর ফোনে বন্ধু ফরহাদকে ডেকে নেন তিনি।

শিমু ও নোবেলের গ্রিন রোডের বাসার নিরাপত্তারক্ষী মো. তারিক জানান, নোবেলের বন্ধু ফরহাদ প্রায়ই তাদের বাসায় আসতেন। শনিবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ফরহাদ ও নোবেলকে তিনি বাসার নিচে গ্যারেজে বিলিয়ার্ড খেলতে দেখেছেন।

নিরাপত্তারক্ষী তারিক আরো জানান, রাত ১১টার দিকে তিনি গেটে তালা দিয়ে ঘুমাতে চলে যান। রবিবার সকাল ১০টায় লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে ডেকে পাশের দোকান থেকে নাস্তা নিয়ে আসতে বলেন নোবেল। তখন পর্যন্ত ফরহাদকে সেখানে দেখা যায়নি। কিন্তু ১০ মিনিটের মধ্যে নাস্তা নিয়ে ফেরার পর গ্যারেজে ফরহাদকে দেখতে পান তারিক। তারিক বলেন, ‘নোবেল নিজেই গাড়িটি চালিয়ে বের হয়ে যান। সেসময় পাশের সিটে ছিলেন ফরহাদ। বিকাল ৩টার দিকে তারা দুজনই গাড়ি নিয়ে আবার বাসায় আসেন। সন্ধ্যার দিকে আবার বের হন।’

মামলা অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে

হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে শিমুর স্বামী নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদকে আটক করা হলেও মামলা হয়েছে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে। এই মামলায় আসামি কতজন সেটারও উল্লেখ করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিমুর ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন বলেন, ‘ আমরা শুনেছি নোবেল মেরেছে। কিন্তু সেটা তো এখনো সেভাবে নিশ্চিত না।’

শিমু-নোবেলের দুই সন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়েও দুই পরিবারের লোকজন মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। পারিবারিক কলহের বিষয়ে শিমুর এক আত্মীয় নামপ্রকাশ না করে বলেন, ৮ বছর ধরে বেকার ছিলেন নোবেল। আগে তার বাংলামোটরে মোটরপার্টসের ব্যবসা ছিল। পরে লোকসানের মুখে ব্যবসা গুটিয়ে নেন তিনি। শিমুর আয় ও বাসা ভাড়ার টাকায় তাদের সংসার চলত। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ ছিল।

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে আরো যা জানা গেছে-

পুলিশ জানায়, শিমুর লাশ দুটি বস্তায় ভরা ছিল। একটি চটের বস্তা পায়ের দিক থেকে ও আরেকটি বস্তা মাথার দিক থেকে ঢুকিয়ে মাঝ বরাবর প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল।

তদন্তে নেমে নোবেলের গাড়িতে এক বান্ডিল সুতা পায় পুলিশ। মিলিয়ে দেখা যায়, শিমুর লাশে থাকা বস্তা যে সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল, সেই সুতা আর গাড়িতে পাওয়া সুতা একই রকম। গাড়িটি পুলিশ ধোয়া অবস্থায় পায়। ভেতরের দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়েছিল।

লাশ গুম করার চেষ্টার সঙ্গে গণি কিংবা আর কারুর সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি আবুস সালাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা আরো তথ্য সংগ্রহ করছি। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে এ সংক্রান্ত তথ্য গণমাধ্যমকে জানানো হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close