নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ জানুয়ারি, ২০২২

স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে ডিসিদের কঠোর হওয়ার নির্দেশ

করোনাভাইরাসের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের ১১ দফা নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকদের আইনিব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এছাড়া সম্মেলনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা এ বিষয়ে বেশকিছু নির্দেশনা দেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলনের তৃতীয় দিনে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে ডিসিদের বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। গতকাল পৃথক পৃথক অধিবেশনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আবদুল মোমেন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ মন্ত্রীরা কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, কোভিড বাড়ছে, সরকার আতঙ্কিত না হলেও চিন্তিত। করোনা নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। যারা স্বাস্থ্যবিধি মানবে না তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। আগে যে ধরনের সহযোগিতা উনাদের কাছ থেকে পেয়েছি, সে ধরনের সহযোগিতা আগামীতেও পাব বলে আশা করছি। ‘অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতে হলে আমাদের অবশ্যই করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। করোনা নিয়ন্ত্রণে ছিল, করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা আমাদের রাখতে হবে। পাশাপাশি ভ্যাকসিনের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। ভ্যাকসিন কার্যক্রমেও ডিসিরা সহযোগিতা করছেন।’ অল্প সময়ের মধ্যে দেশের সব মানুষকে টিকার আওতায় আনতে জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা চেয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

ডিসিরা কোনো দাবি জানিয়েছে কি না এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জেলা পর্যায়ে প্রতিটি জেলায় হাসপাতাল নির্মাণে জেলা প্রশাসকদের একটি দাবি ছিল। সেই বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এরই মধ্যে জেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোর নির্মাণকাজ চলমান।

‘কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আটটি হাসপাতাল উদ্বোধন করেছেন, যার একেকটি ৪৫০ বেডের। এখানে ক্যানসার কিডনি ও হার্টের রোগের চিকিৎসা হবে। সামনেও এমন হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি। নদী দূষণে জড়িত শিল্প-কারখানার দিকে নজর দিতেও ডিসিদের আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, নদী ও পানি দূষণ হওয়ার কারণে স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে। এই পানি যারা ব্যবহার করছে, তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এই বিষয়ে নজর দিতে হবে।

র‌্যাব যারা তৈরি করেছে তারাই এখন র‌্যাবের সমালোচনা করছে : ‘র‌্যাব যারা তৈরি করেছে তারাই এখন র‌্যাবের সমালোচনা করছে। দুষ্কৃতকারীরা যদি পুলিশের ওপর আক্রমণ করে তবে পুলিশ আত্মরক্ষার ব্যবস্থা নেবে। বিশ্বের সব দেশেই এনকাউন্টার হয়।’ এমনটা বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিনে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে মন্ত্রী বলেন, ‘র‌্যাব যে ভালো কাজ করছে সেগুলো তাদের চোখে পড়ে না। র‌্যাব জঙ্গি দমন করছে, মাদক কারবারিদের ধরছে, সীমান্তের অপরাধ দমনেও কাজ করছে। সুন্দরবনকে আমরা দস্যুমুক্ত করেছি। ৯৯৯ সেবা দিচ্ছি। এতে নাগরিকরা উপকৃত হচ্ছেন।’ র‌্যাবের সৃষ্টি রাজনৈতিক কারণে হয়েছিল কি না প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘সে বিচারের ভার আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম।’

জেলা প্রশাসকদের তরফ থেকে জুয়া আইনে শাস্তি বাড়ানোর আবেদন জানানো হয়। এ প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আইনটি ব্রিটিশ আমলে করা। কবে, কোথায়, কে করেছিল জানি না। তবে এ আইনে শাস্তি বাড়াতে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমন্বয় করছে। এটা হালনাগাদ করতে বলেছি।’

ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অপব্যবহার বন্ধে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ : ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অপব্যবহার বন্ধে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারো বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে তা তদন্তের জন্য নির্ধারিত সেলে পাঠাতে হবে। কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। মন্ত্রী আরো বলেন, আইনটি করা হয়েছে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য, বাকস্বাধীনতা হরণের জন্য নয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘আমাদের সহকর্মীরা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এমনকি সংসদ সদস্যরা বলেছেন, ঠিকমতো স্থানীয় প্রশাসন থেকে কিংবা অন্য সরকারি অফিস থেকে সম্মান পান না। তারা যেহেতু নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের কিছু কমিটমেন্ট আছে এগুলো যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হয়। এটা খুবই দুঃখজনক যে, এগুলোর ওপরে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ হয় না। এটা যেন হয় ডিসিদের সে কথা বলেছি।’

প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাসীরা দেশে এলে তারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়। জমি বেদখল হয়ে যায়, ম্যারেজ সার্টিফিকেট পেতে হয়রানির শিকার হয়। পাসপোর্ট পায় না। এসব হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ডিসিরা যাতে দ্রুত প্রবাসীদের সেবা দেন, তারা যাতে হয়রানির শিকার না হয়। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডিসিদের বলেছি, এলাকায় যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে।’

সাব-রেজিস্ট্রারদের নিয়ে প্রশ্ন : সাব-রেজিস্ট্রারদের আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। ভূমিমন্ত্রী বলেন, ‘সাব-রেজিস্ট্রাররা ভূমির কাজ করেন। অথচ তারা আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এটি আমার একটি কষ্টের জায়গা। কী কারণে কেন এটা আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়া হলো তা আমার বোধগম্য নয়।’

সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘সাব-রেজিস্ট্রাররা আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকায় ভূমি ব্যবস্থাপনার কাজে সমন্বয় করাটা জটিল হয়। তবে এ থেকে উত্তরণে সরকারের বিভিন্ন মহলে আলাপণ্ডআলোচনা চলছে। আশা করি সাব-রেজিস্ট্রাররা ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় চলে আসবেন। তবে না এলেও কোনো সমস্যা হবে না।’

দেশে বসবাসকরী যেকোনো নাগরিকের দেওয়া জমি-সংক্রান্ত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এটি কোনো কাজে আসবে না। কারণ পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে যথেষ্ট জালিয়াতি, প্রতারণা ও আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ হয়। তবে বিদেশে বাসবাসকারী প্রবাসী নাগরিকরা দূতাবাসের মাধ্যমে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিলে সেটির কাজ করা হবে। ভূমিমন্ত্রী জানান, জমির দাম যত বাড়ছে মানুষের লোভ তত বাড়ছে। এ কারণে ই-পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ঘিরে জালিয়াতি-প্রতারণার মতো ঘটনা ঘটছে। সাইফুজ্জামান চৌধুরী জানান, পটুয়াখালী ও বরগুনায় পাইলট ভিত্তিতে বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে হচ্ছে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় এরপর আর কোনো সার্ভে হবে না। প্রয়োজনও হবে না। এক্ষেত্রে ডিসিরা শুধু পটুয়াখালী, বরগুনা নয়; দেশের ৬৪ জেলায় একসঙ্গে এটা করা যায় কি না জানতে চেয়েছেন। তখন এটা সম্ভব নয় বলে ডিসিদের জানানো হয়েছে। কারণ কাজ করতে গিয়ে কিছু ভুল হবে, তা আবার সংশোধন হবে। তিনি বলেন, ‘ভূমি উন্নয়ন কর (এলডি ট্যাক্স) অনলাইনে নেওয়ার ব্যবস্থা আমরা এ বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করব বলে আশা করছি। আগামী বছর দেশের সব নাগরিক নিজস্ব মোবাইল ফোন ব্যবহার করে নিজ নিজ জমির ভূমি উন্নয়ন কর জমা দিতে পারবে।’ ভূমি ব্যবস্থাপনায় ই-নামজারি সিস্টেম ৯৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছেন বলে জানান মন্ত্রী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close