নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ জানুয়ারি, ২০২২

ডিসিদের আরো সতর্কতার নির্দেশ

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন প্রতিরোধসহ সংক্রমণ রোধে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলা পর্যায়ে যাতে সব কার্যক্রম পরিচালিত হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে। জনসাধারণ যেন বিধি-নিষেধগুলো মেনে চলে সেজন্য মাঠ প্রশাসনকে সক্রিয় থাকতে বলা হয়েছে। আর ডিসিরা বলেছেন, তারা এ বিষয়ে সতর্ক আছেন।

এছাড়া সার চোরাচালানি ও নিত্যপণ্যের অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। আসন্ন রমজান উপলক্ষে বাজার তদারকি এবং করোনা মোকাবিলায় কর্মকর্তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে ডিসিদের বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। গতকাল আটটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব অধিবেশনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-বিভাগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিবরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। অধিবেশনগুলোতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২২’-এ প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেন, সরকারি সেবাগুলো তৃণমূলে পৌঁছে দিতে জেলা প্রশাসকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন। দেশে যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে তা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকরা সরাসরি কাজ করছেন। উন্নয়ন কার্যক্রমের সফলতা বহুলাংশেই তাদের ওপর নির্ভরশীল। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সাধারণ জনগণের সরকারি সেবা জেলা প্রশাসকরা নিশ্চিত করেন। করোনাকালীন সময়ে খাদ্য বিতরণে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। এ সময়, নারীদের সমঅধিকার নিশ্চিত ও তাদের সামাজিকভাবে সুরক্ষিত রাখার বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের যথাযথ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান স্পিকার।

চাঁদাবাজি বন্ধে ডিসিদের সহযোগিতা : দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসা কৃষিপণ্যের ট্রাকে চাঁদাবাজি বন্ধে ডিসিদের সহযোগিতা চেয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, সারা পৃথিবীতেই মধ্যস্বত্বভোগী আছে। এর বাইরে আরো কিছু আছে অপ্রত্যাশিত। বিভিন্ন জায়গায় ট্রাক বা তাদের এক্সট্রা খরচ করতে হয়। এটাকে কীভাবে কমানো যায়, প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছি। আমরা বলেছি, এটা কতটুকু? প্রত্যেক ডিসি বলেছেন, তারা দায়িত্ব নেবেন।

রাজ্জাক আরো বলেন, কেবিনেট সচিব বলেছেন, তারা একটি গবেষণা আমাদের সঙ্গে করাবেন- একটি ট্রাক ঈশ্বরদী বা দিনাজপুর থেকে যে এলো, এটি ঢাকায় এসে অ্যাকচুয়ালি কত দাম পেল। দিনাজপুরে কিংবা ঈশ্বরদী কিংবা সাতক্ষীরায় চাষিরা মাঠপর্যায়ে ফসল বিক্রি করে ১৫ টাকা পাচ্ছে প্রতি কেজিতে। ঢাকায় এসে সেটা কেন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা হবে? এটা হলো মধ্যস্বত্বভোগী বা ফড়িয়া।

মন্ত্রী বলেন, ট্রাকের খরচ বা কোথাও চাঁদাবাজির শিকার যদি তারা হয়ে থাকে, তাহলে কত টাকা কোথায় দিল? সেটা আমরা বের করি। বের করে তারপর আমরা চেষ্টা করব জাতীয় পর্যায়ে একটি ব্যবস্থা নিতে, যাতে এটি বন্ধ করা যায়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় : গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে এককালীন অর্থ বরাদ্দ চেয়ে করা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রস্তাবে সায় দেয়নি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘আলোচনার সময় জেলা প্রশাসকরা প্রস্তাব রেখেছেন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য আমরা এককালীন অর্থ বরাদ্দ দিতে পারি কিনা। আমরা সেখানে দ্বিমত পোষণ করেছি। আমরা বলেছি দুই বা তিন কিস্তিতে দিলে কাজের গতি ঠিক থাকে। কাজের মনিটরিং ভালো হয়, কাজের ফলাফল ভালো হয়।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনার সময়ে প্রায় ৭ কোটি মানুষকে মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং ৩৩৩-নম্বরের মাধ্যমে প্রায় ২২ লাখ মানুষকে মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এই কঠিন কাজটি সম্ভব হয়েছে জেলা প্রশাসকদের সমন্বয়ের কারণে। সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি।

তিনি বলেন, ডিসিরা ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র এবং মুজিব কেল্লার সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা তাদের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছি। কারণ ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা মোকাবিলা করতে গিয়ে দেখেছি আশ্রয়কেন্দ্রের ঘাটতি রয়েছে।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর হওয়ার নির্দেশ : আসন্ন রমজানে সরকার নির্ধারিত দ্রব্যমূল্য ঠিক রাখতে কঠোরভাবে তদারকির জন্য ডিসিদের নির্দেশনা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়। ডিসিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ তথ্য জানান।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ডিসিদের বলেছি সামনে রমজান মাস আসছে, কিছু কিছু জিনিসের দাম আমরা ঠিক করে দেই। সেগুলো কঠোরভাবে তদারকি করতে। সে সময় যেন তারা খুব শক্ত ভূমিকায় থাকেন, আইনগত ব্যবস্থা যেন নেন। কোরবানির সময় চামড়া কেনাবেচার বিষয়টি যেন তদারকি করেন। কেউ যাতে দাম থেকে বঞ্চিত না হন।

তিনি আরো বলেন, ডিসিদের ওপর আমাদের অনেকখানি নির্ভরতা আছে। জিনিসপত্র যখন মফস্বল থেকে আসে, চাঁদাবাজিতে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, দাম যাতে না বাড়ে, মধ্যস্বত্বভোগী যাতে কমিয়ে আনা যায়, কৃষক যাতে ন্যায্য দাম পায়- এসব ব্যাপারে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।

সার চোলাচালান বন্ধে মনিটরিংয়ের পরামর্শ : সার চোরাচালান যাতে না হয় এবং ডিলারদের কাছ থেকে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে নিতে না পারে তা মনিটরিং করতে নির্দেশনা দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। তিনি বলেন, সার ডিলাররা মজুদ করেছিল। আমরা তাদের নিয়ে মিটিং করি। দেশে যে সার উৎপন্ন হয় তা যথেষ্ট নয়, এ জন্য সার আমদানি করতে হয়। যে টার্গেট আছে ফুলফিল হয়েছে। এখন বাফার স্টকও আছে। শর্টেজের কোনো সম্ভাবনা নেই। সারে সরকার ভর্তুকি দেয়।

মন্ত্রী বলেন, চোরাচালান যাতে না হয় এবং ডিলারদের কাছ থেকে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে নিতে না পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, ডিসিরা মনিটরিং করবেন।

পলিথিনের বিস্তার রোধে সহযোগিতা চাইলেন মন্ত্রী : নিষিদ্ধ পলিথিনের বিস্তার রোধ করে পাটের ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য প্রতি মাসে ডিসিদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। পাটমন্ত্রী বলেন, উপজেলায় প্রতি মাসে দুটি করে এবং বিভাগীয় ও জেলা শহরে মাসে অন্তত একটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন, যাতে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ হয়। তিনি আরো জানান, যে ১৯টি পণ্যে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা মানা হচ্ছে কি না দেখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় ডিসিদের অনুরোধ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকেও নজরদারি করা হচ্ছে।

‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’ অনুযায়ী ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি, মরিচ, হলুদ, আদা, রসুন, ধনিয়া, পেঁয়াজ, ডাল, আলু, আটা, ময়দা ও তুষ-খুদণ্ডকুড়ায় পাটের মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক।

ওএমএস যাবে উপজেলায় : ১ হাজার ৭৬০ ডিলারের মাধ্যমে আজ থেকে উপজেলা পর্যায়ে ওএমএস কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এখন সাতশর বেশি ডিলারের মাধ্যমে জেলা পর্যায়ে ওএমএস কার্যক্রম চলছে। বৃহস্পতিবার থেকে তা উপজেলা পর্যায়ে বিস্তৃত হচ্ছে। ওএমএস যাতে সঠিকভাবে পরিচালিত হয় তা নিশ্চিত করতে এবং অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ডিসিদের। ওএমএসএর চাল ৩০ এবং আটা ১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান খাদ্যমন্ত্রী। ইউনিয়ন পর্যায়েও ওএমএস দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি রয়েছে। তাই উপজেলা পর্যায়ে দেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close