বদরুল আলম মজুমদার
বন্ধ হতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী অভিভাবক
কয়েক মাস পর আবারও বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। গত এক সপ্তাহে শনাক্তের হার বেড়েছে কয়েকগুণ। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ছড়ানো করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ছে খুব দ্রুতই। করোনা সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বমুখী হার শঙ্কা তৈরি করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের মনে। তাই আবারও বন্ধ হয়ে যেতে পারে প্রতিষ্ঠানগুলো। গতকাল এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদিও তিনি এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার পক্ষে নয়। তারপরও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা বা খোলা থাকা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণের পর ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তা নিয়ন্ত্রণে আসে। মার্চের শেষে আবার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানে। সেটি নিয়ন্ত্রণে আসে গত বছরের অক্টোবরে। তবে এখন তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। গতকাল পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ২০ শতাংশের ওপর। এক মাস আগেও তা ছিল ২-এর নিচে। বর্তমানে দেশে ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে।
করোনা মহামারির কারণে স্কুল-কলেজ খোলা হলেও এখনো শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়নি। এ বছরের মার্চে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু হতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তবে তিনি আরো বলেন, যদি করোনা সংক্রমণ বেড়ে যায় তাহলে স্কুল-কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও করোনা সংক্রমণের ইঙ্গিত করে অনলাইন ক্লাস চালু রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। গত ৩০ ডিসেম্বর এসএসসির ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। এর পরপরই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শ্রেণিভিত্তিক ক্লাস-পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করা হয়। রুটিনে প্রতিটি শ্রেণির সর্বোচ্চ দুই দিন করে সশরীরে ক্লাস করানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি দিনগুলোতে অনলাইনে ক্লাস চলমান রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, করোনা সংক্রমণের হার বাড়ায় সশরীরে ক্লাস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ৫ জানুয়ারি এ সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। একই সঙ্গে হলগুলোতে প্রতি চারজনের জন্য আইসোলেশন ব্যবস্থা চালু রাখারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে হল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে ক্লাস-পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এ বিষয়ে খুব দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, একাডেমিক সভা ডেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে গতকাল এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছেন, অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। যেকোনো সময় বিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ আরো বেড়ে গেলে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেব। যদিও এখনই সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিকল্পনা নেই বলেও জানান তিনি। একইসঙ্গে ভার্চুয়াল ক্লাস নেওয়ার প্রস্তুতি রাখার নির্দেশনাও দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে যাতে ভার্চুয়াল ক্লাস নেওয়া যায় সেটার প্রস্তুতি রাখার জন্য ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেখানে ভার্চুয়াল ক্লাস নেওয়া সম্ভব নয় সেখানে অ্যাসাইনমেন্টের ওপর নির্ভর করতে হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী আরো জানান, এখন পর্যন্ত ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের ৮৫ লাখকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে কম বয়সিদের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি।
এদিকে ওমিক্রন ঠেকাতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে সরকার। বৈঠকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বেশকিছু নিয়ম পুনরায় চালু করেছে সরকার। হোটেলে-রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে দেখাতে হবে টিকার সনদ। এছাড়া মাস্ক না পরলে জরিমানার কথাও বলা হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে আরো কিছু বিধিনিষেধ আসতে পারে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের খবরে শঙ্কিত শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। দেড় বছর ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশনজট তৈরি হয়েছে। পিছিয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, করোনায় আমরা ছয় মাস পিছিয়ে আছি। এ ক্ষতি দ্রুত পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
এদিকে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সশরীরে ক্লাস বন্ধের সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, সশরীরে ক্লাস বন্ধ করে দেওয়ার মতো এখনো সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগ করেই করোনা সংক্রমণ কমানো সম্ভব। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের আরো পিছিয়ে না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
"