নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ জানুয়ারি, ২০২২

উচ্চঝুঁকিতে ১২ জেলা

করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ ১২ জেলাকে উচ্চ ঝুঁকির এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল বুধবার অধিদপ্তর জানায়, ১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে জেলাগুলোকে তারা উচ্চ, মাঝারি ও স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ভাগ করে যথাক্রমে রেড বা লাল, ইয়েলো বা হলুদ ও গ্রিন বা সবুজ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

এদিকে, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তারের মধ্যে দেশে গত এক দিনে আরো ৯ হাজার ৫০০ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার আরো বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ১১ শতাংশে।

নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি হলে তা লাল, শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের বেশি হলে অধিকতর গাঢ় লাল রঙে চিহ্নিত করছে অধিদপ্তর।

গত এক সপ্তাহে ঢাকায় করোনাভাইরাসের ৬২ হাজার ২১টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৭ হাজার ৪৩৭ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাতে শনাক্তের হার দাঁড়াচ্ছে ২৮ দশমিক ১১ শতাংশ। এ কারণে ঢাকাকে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

অধিদপ্তরের হিসাবে, গত কয়েক দিন ধরে সারা দেশে মোট কোভিড-১৯ আক্রান্তের ৮০ শতাংশের কাছাকাছি রোগী পাওয়া যাচ্ছে ঢাকায়।

গত মঙ্গলবার সারাদেশে ৮ হাজার ৪০৭ জনের কোভিড শনাক্ত হয়, তাদের মধ্যে ৬ হাজার ৫৯৭ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্তের ৭৮ শতাংশের বেশি। শনাক্তের হার বিবেচনায় দেশের জেলাগুলোকে যে তিন ভাগে ভাগ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, তার মধ্যে উচ্চ ঝুঁকিতে আছে ১২ জেলা, মাঝারি ঝুঁকিতে রয়েছে ৩১ জেলা এবং বাকি জেলাগুলো স্বল্প ঝুঁকির এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

উচ্চ ঝুঁকির জেলায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার গড়ে ১০ থেকে ১৯ শতাংশ। মাঝারি ঝুঁকির তালিকায় থাকা জেলাগুলোতে এই হার ৫ থেকে ৯ শতাংশ। আর যেসব জেলায় শনাক্ত ৫ শতাংশের কম, সেগুলো কম ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে।

অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ঢাকা ছাড়া উচ্চ ঝুঁকির রেড অঞ্চলে রয়েছে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রাঙামাটি, বগুড়া, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, যশোর, লালমনিরহাট, গাজীপুর, পঞ্চগড় এবং খাগড়াছড়ি জেলা। এর মধ্যে চট্টগ্রামে শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

ইয়েলো জোন অর্থাৎ মধ্যম পর্যায়ের ঝুঁকিতে থাকা শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ, ফেনী, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, সিলেট, নাটোর, কক্সবাজার, ঠাকুরগাঁও, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, বরিশাল, মাগুরা, জয়পুরহাট, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর, বাগেরহাট, শরীয়পুর ও নড়াইলে শনাক্তের হার ৫ থেকে ৯ শতাংশ।

গ্রিন জোনে থাকা জেলার মধ্যে আছে কুমিল্লা, চাঁদপুর, পাবনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, ভোলা, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বরগুনা, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী ও মেহেরপুর। এসব জেলার শনাক্তের হার শূন্য থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে।

বান্দরবান জেলায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ হলেও একে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়নি, কারণ এ জেলায় খুব কম সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্তের এই হার পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে ৬১ জেলায় শনাক্তের হার আগের সপ্তাহের চেয়ে বেড়েছে, কমেছে তিন জেলায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৫ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে ঢাকায়, চট্টগ্রামে এই হার ১৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। আগের সপ্তাহের তুলনায় ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে রাঙামাটি জেলায়।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সংক্রমণ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দিন দিন সংক্রমণ বাড়ছেই। আমার আশঙ্কা, একদিনে ৩০ থেকে ৫০ হাজারও শনাক্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে, যদি আমরা যথেষ্ট পরিমাণে টেস্ট করি।’

এদিকে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তারের মধ্যে দেশে গত এক দিনে আরো ৯ হাজার ৫০০ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। এক দিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল সর্বশেষ গত বছরের ১২ আগস্ট, সেদিন ১০ হাজার ১২৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। গতকাল বুধবার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার আরো বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ১১ শতাংশে, যার মানে ১০ জনের নমুনা পরীক্ষা করলে চারজনেরই কোভিড পজিটিভ আসছে।

দৈনিক শনাক্ত রোগীর এই হার গত বছরের ১৩ আগস্টের পর সর্বোচ্চ। সেদিন শানাক্তের হার ছিল ২৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪২ হাজার ২৯৪ জনে। তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৫৭৩টি, অ্যান্টিজেন টেস্টসহ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৮৩০টি। এখন পর্যন্ত ১ কোটি ১৯ লাখ ৬৬ হাজার ২৮৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরো জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ, এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ, মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারী ১২ জনের মধ্যে ১০ জন পুরুষ, ২ জন নারী। তাদের মধ্যে ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সি ২ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছর বয়সি ২ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সি ২ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সি ৬ জন মারা গেছেন। ১২ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৮ জন, চট্টগ্রামে ২ জন, রাজশাহীতে ১ জন এবং সিলেটে ১ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ৮ জন, ৩ জন বেসরকারি হাসপাতালে ও ১ জন বাসায় মারা গেছেন।।

এদিকে, দেশে আগের সপ্তাহের তুলনায় গত এক সপ্তাহে করোনা রোগী বেড়েছে ২২৮ শতাংশ। এ সময় (১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি) করোনায় সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু বেড়েছে ১৮৫ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেন অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম।

বুলেটিনে জানানো হয়, গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশে ২৭ শতাংশের বেশি পরীক্ষা বেড়েছে। সাত দিনে ২ লাখ ৩ হাজার ১২২টি পরীক্ষা হয়েছে। রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৪ হাজার ৪০৫ জন। এর আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সাত দিনে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার রোগী বেশি শনাক্ত হয়েছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে ২২৮ শতাংশ রোগী বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে করোনায় সংক্রমিত ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩৭ জন বেশি। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বেশিসংখ্যক মানুষ করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে।

অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, করোনা শনাক্ত বাড়লেও হাসপাতালে করোনা রোগী বাড়েনি। তবে এতে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বেশি সংক্রমণ হচ্ছে করোনার অমিক্রন ধরনের। পাশের দেশেও ওমিক্রন বেশি ছড়াচ্ছে। সাধারণত কোনো নতুন ভ্যারিয়েন্ট এলে সেটি পুরোনো ধরনকে প্রতিস্থাপন করে। তবে এখন পর্যন্ত দেশে যে পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে, তাতে করোনার ডেলটার ধরনই বেশি ছড়াচ্ছে। গত বছর করোনার ডেলটা ধরনের তাণ্ডব দেখা গেছে। তাই অসতর্ক হওয়ার সুযোগ নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close