নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ জানুয়ারি, ২০২২

উন্নয়ন প্রকল্প তদারকির দায়িত্ব চান ডিসি

ভ্যাটের আওতা বাড়াতে ইএফটি মেশিন সরবরাহের প্রস্তাব

জেলা প্রশাসক সম্মেলনে জেলাপর্যায়ে উন্নয়ন প্রকল্প তদারকিতে কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ডিসিরা। তবে সরকারের তরফ থেকে এ ধরনের কমিটি ছাড়াই আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তদারকি চালিয়ে নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গতকাল মঙ্গলবার তিন দিনের ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় সেশন সভার পর সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য জানান তিনি।

এ সম্মেলনে সারা দেশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ইএফটি মেশিন সরবরাহ করলে ভ্যাটের আওতা বাড়বে বলে ডিসিরা মুক্তিযোদ্ধামন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে আশস্ত করেন।

দিনের প্রথম অধিবেশনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, অর্থবিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়। কোভিড পরিস্থিতির কারণে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বৈঠকে অংশ নেন তারা।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, এবার ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ২৬৩টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে।

সরকারের নীতিনির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সামনাসামনি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্রতি বছর ডিসি সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

পরিকল্পনামন্ত্রী ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘বৈঠকে জেলা প্রশাসকরা চেয়েছিলেন প্রকল্প বাস্তবায়নে যেন জেলাপর্যায়ে কমিটি করা হয়। আমরা বলেছি কমিটি করার প্রয়োজন নেই। এলাকার ভেতরে কাজ দেখার অধিকার ডিসিদের আছে। আমরা আপনাদের সঙ্গে ঘন ঘন যোগাযোগ করি, চিঠি দিই। সেগুলো অনুযায়ী আপনারা কাজ করবেন। কিছু প্রয়োজন হলে আমরা তো আছি। আমিও ডিসি ছিলাম। আমি মনে করি এটা প্রয়োজন নেই। যথেষ্ট দায়িত্ব ক্ষমতা তাদের হাতে আছে। এটাকে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। সেজন্য ব্রিটিশ ধারণার যে ইন্সপেকশন, সেটার প্রয়োজন নেই।’

বেশি পরিমাণ ভ্যাট আদায় প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে পণ্য কিনি; সবাইকে সেসব পণ্যে ভ্যাট দিতে হয়। দোকানদাররা তা সরকারকে দেয় কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এনবিআরের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি। সরকার দোকানদারদের ইএফটি মেশিন সাপ্লাই দিলে যথাযথ ভ্যাট পাবে।’

মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়। এজন্য কালুরঘাটসহ চট্টগ্রামে দুটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে আমাদের নানা স্মৃতি রয়েছে। বিশেষ করে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে। এখন জেলা প্রশাসক (ডিসি) প্রস্তাব পাঠালে ঐতিহাসিক জায়গা কালুরঘাট ও কাকতলী মৌজায় স্মৃতিস্তম্ভ দুটি নির্মিত হবে।’

পরিকল্পনামন্ত্রী সভার পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘জেলা প্রশাসকরা জেলাপর্যায়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ক্ষমতা বা নজরদারি বাড়ানোর বিষয়ে বলেছেন। কিন্তু আমরা তাতে সম্মতি দিইনি। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী অলরেডি জেলা প্রশাসকদের সে ক্ষমতা রয়েছে। তারা যেকোনো সময় যেকোনো প্রকল্পের খোঁজখবর নিতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পে আরো বেশি নজরদারি বাড়াতে আমরা আইএমইডিকে শক্তিশালী করতে বিভাগীয় পর্যায়ে অফিস করছি। প্রত্যেক বিভাগে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) কার্যালয় খোলা হবে।’

মন্ত্রী আরো বলেন, ‘জেলা প্রশাসকদের সহায়তা শব্দটি ব্যবহারে সাবধান হওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়ছে। কারণ, আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা যে সহায়তা করে, সেটার পরিমাণ খুবই সামান্য। আমরা ঋণ নিই, আবার যথাসময়ে সেগুলো পরিশোধ করি। সুতরাং, তারা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী, দাতা সংস্থা নয়।’

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ডিসিদের সহায়তা আইনগতভাবেই প্রয়োজন। সেটাকে আমরা হাইলাইট করেছি। প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক দেরি হয়, এর বড় একটা কারণ ভূমি অধিগ্রহণ। কিছু আইনগত ব্যাপারও আছে। এটি আরো দ্রুত করার জন্য তাদের সহায়তা চেয়েছি। তারা সহায়তা দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর আগের একটি আদেশ অনুযায়ী বিভাগীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ বা আইএমইডির কার্যালয় চালুর সরকারি উদ্যোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের জানানো হয়েছে।

এম এ মান্নান বলেন, ‘তৃণমূলপর্যায়ে আইএমইডিকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্ল্যান আছে। এ ছাড়া গাছ লাগাও, পশুপাখি হত্যা করো না, নদীর ওপর যে পুলগুলো হয় সেগুলার উচ্চতা যেন যথাযথ থাকে, সোজাভাবে রাস্তা করো- প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনা যেন মেনে চলা হয়, সেই পরামর্শ আমরা দিয়েছি।’

এবার ডিসি সম্মেলনের ভেন্যু রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন। মহামারির কারণে দুই বছর পর এই সম্মেলন হচ্ছে। সম্মেলন শেষ হবে আগামীকাল। ডিসি সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান। পরে মাঠপর্যায়ে প্রশাসনের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close