নিজস্ব প্রতিবেদক
ওমিক্রন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক
দেশে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন। বর্তমানে বেশির ভাগ মানুষের দেহেই এই ধরন শনাক্ত হচ্ছে- এ তথ্য জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, জিনোম সিকুয়েন্সে দেখা গেছে রাজধানীতে বর্তমানে করোনায় আক্রান্তের ৬৯ শতাংশের শরীরেই ওমিক্রনের উপস্থিতি রয়েছে।
সচিবালয়ে গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনার নতুন ঢেউ মোকাবিলায় টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার বয়সসীমা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাদের বয়স ৫০ বছরের মধ্যে তাদের সবাইকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে।
ওমিক্রনের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, এভাবে বাড়তে থাকলে হাসপাতালে জায়গা থাকবে না। ‘আমরা ৫০ বছর বয়সিদের থেকে শুরু করে বুস্টার ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর জন্য সরকারের অতিরিক্ত ৭০ লাখ ডোজ টিকা লাগবে, এটা কোনো সমস্যা না। আমাদের কাছে সাড়ে ৯ কোটি ডোজ টিকা আছে। আমরা মানুষকে মাস্ক পরতে বলি, তাদের এবং দেশের জন্যই বলি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে করোনার ওমিক্রন ও ডেল্টা ধরনের কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে, শনাক্ত হার ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাতে এক-দেড় মাসের মধ্যে হাসপাতালে জায়গা হবে না।
এদিকে, করোনার উন্মুক্ত তথ্যভা-ার জিআইএসএইডের তথ্যমতে সবশেষ, সোমবার ২২ জনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়। এ নিয়ে দেশব্যাপী ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৫ জন। জার্মান এ সংস্থার হিসেবে ঢাকায় আক্রান্ত ৫২ জনের মধ্যে ১৮ জনই মহাখালীর বাসিন্দা। ঢাকার বাইরে একমাত্র জেলা হিসেবে যশোরে রয়েছে তিনজন আক্রান্ত ব্যক্তি।
শনাক্তের হার উদ্বেগজনক না দেখালেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে এ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। এরই মধ্যে এ ভ্যারিয়েন্ট সামাজিক সংক্রমণের রূপ ধারণ করেছে বলেও মনে করছেন তারা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অ্যধাপক ডা. রিদওয়ানউর রহমান বলেন, আমরা তো শনাক্ত করতে পারি না, কারণ আমাদের জিনোম সিকোয়েন্স করার সক্ষমতা নেই। আমরা যেটা শনাক্ত করতে পারছি সেটা হচ্ছে ১০০ জনের মধ্যে আমরা ১০ জনের শনাক্ত করতে পারছি।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ঢাকা শহরের পুরোটাই ওমিক্রনে ছেয়ে গেছে আর ঢাকার বাইরে ডেল্টা- এটা ঠিক আছে। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে গত সপ্তাহ থেকে। আমরা গণসংক্রমণ পর্যায়ে ঢুকে গেছি। দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বলা যাবে অন্ততপক্ষে। এ অবস্থায় নির্বাচন ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু রেখে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দেওয়াকে সরকারের বিপরীতমুখী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন তিনি।
এই বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, সবকিছু খোলা রেখে সরকার যদি জনসমাগম এড়াতে চায়, এ দুটি আসলে সাংঘর্ষিক, সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে।
গত ২৮ ডিসেম্বর সারা দেশে করোনাভাইরাসের টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি এবং যারা কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে আছেন, তাদের করোনাভাইরাসের টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পরে তারা বুস্টার ডোজ বা তৃতীয় ডোজ নিতে পারবেন। আগে যে হাসপাতাল থেকে দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন, সেই হাসপাতাল থেকে তার মোবাইলে বুস্টার ডোজের তারিখ জানিয়ে এসএমএস পাঠানো হচ্ছে। সেই কেন্দ্রে নির্ধারিত দিনে গিয়ে তৃতীয় ডোজ নিতে হচ্ছে।
"