সিলেট প্রতিনিধি

  ১৭ জানুয়ারি, ২০২২

শাবিপ্রবিতে ছাত্র উপদেষ্টা গুলিবিদ্ধ, আহত ৩৫

হল প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে উত্তাল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। দাবি আদায়ে চার দিন থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল রবিবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। এ সময় তাকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা।

এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্য, ১০ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, ১৫ শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ছাত্র উপদেষ্টা ও অধ্যাপক জহীর উদ্দীন আহমেদ ও এক নারী পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ভিসিকে উদ্ধার করতে আইসিটি ভবনের সামনেও পুলিশ অবস্থান করছে। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনসহ আশপাশে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

এর আগে গতকাল রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক শেষে রেজিস্ট্রার ভবন থেকে বের হলে উপাচার্যের পিছু নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা সহযোগিতায় দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে আইসিটি ভবনে এসে আশ্রয় নেন উপাচার্য। পরে বিকাল ৪টায় আইসিটি ভবনের সামনে উপাচার্যকে মুক্ত করতে পুলিশ উপস্থিত হয়। সেসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন? প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগানে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে তিন দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া দাবি মেনে না নেওয়ার আগ পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য সব বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনও করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলনে নামেন ছাত্রীরা। গত শুক্রবার দিনভর বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন তারা। এরপর শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে অবস্থান নেয় শতাধিক ছাত্রী। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে যান চলাচল বন্ধ করে দেন তারা। এ সময় ছাত্রীদের এই অবস্থানে বাধা প্রদান ও হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

এদিকে ছাত্রীদের অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় গতকালও আন্দোলন শুরু করেন ছাত্রীরা। এ সময় তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ছাত্ররাও। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক শেষে রেজিস্ট্রার ভবন থেকে বের হলে উপাচার্যের পিছু নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে আইসিটি ভবনে এসে আশ্রয় নেন উপাচার্য।

আন্দোলনকারী ছাত্রীদের অভিযোগ, সন্ধ্যায় গোলচত্বরে তারা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেন। এ সময় ছাত্রলীগের ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী এসে গোলচত্বর এলাকায় অবস্থান নেয়। তারা ছাত্রীদের হলে ফিরে যাওয়ার জন্য হুমকি দিতে থাকে। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদেরর ওপর হামলা করে। এতে কয়েকজন আহত হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে। তবে বাধা প্রদান বা হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের প্রধান রাস্তা ‘কিলো সড়ক’ অবরোধ করেন আন্দোলনকারী ছাত্রীরা। এ সময় এই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্রলীগের ৩০-৩২ জন নেতাকর্মীও ওই এলাকায় অবস্থান নেন।

আন্দোলনকারী এক ছাত্রী বলেন, আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। প্রশাসন আমাদের দাবি পূরণ করতে হবে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ আমাদের আন্দোলনে বাধা দিচ্ছে। তারা যেকোনো সময় হামলা করতে পারে।

শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো- দায়িত্বহীন প্রভোস্ট কমিটিকে পদত্যাগ করতে হবে, অবিলম্বে হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা নির্মূল করতে হবে এবং সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে ও অবিলম্বে ছাত্রীবান্ধব এবং দায়িত্বশীল প্রভোস্ট কমিটি নিয়োগ দিতে হবে। শনিবার সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে দাবিগুলো মেনে না নিলে আবারও আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন তারা।

এ প্রসঙ্গে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলমগীর কবির বলেন, ‘গত শুক্রবারই উপাচার্য স্যার ছাত্রীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে তিনি কিছু সময় চেয়েছেন। এখন তাদের আন্দোলনে নামা অযৌক্তিক।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। শিক্ষক সমিতিসহ সব বিভাগের প্রধান কর্মসূচিস্থলে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সব দাবি মানার আশ্বাস দেন। তখন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করেন। এরপর উপাচার্য ভবনের সামনে গিয়ে উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন।’

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের জানান, বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের পানি, সিট, ইন্টারনেট সংযোগ, খাবারসহ বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে হলের রিডিং রুমে ছাত্রীরা আলোচনা করেছিলেন। আলোচনা শেষে ছাত্রীরা হল প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদকে ফোন করে এসব সমস্যার কথা জানান এবং অল্প সময়ের জন্য হলে আসার অনুরোধ করেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনেক অনুরোধের পরও প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ তাতে রাজি হননি উল্টো তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘কেউ তো মরেনি। বের হলে বের হয়ে যাও, কোথায় যাবা? আমার এত ঠ্যাকা পড়েনি।’ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জরুরি উল্লেখ করলেও তিনি বলেন, ‘কিসের জরুরি? কেউ তো আর মারা যায়নি।’ এ ঘটনার পরপরই ছাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রথমে ওই রাত ৯টার দিকে হলের সামনে এবং পরে সাড়ে রাত ১১টায় উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close