নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ জানুয়ারি, ২০২২

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত দ্বিতীয় দিনেও

করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধে মাস্ক পরায় জোর দেওয়া হলেও তা মানছে না অনেকেই। কাঁচাবাজারে বরাবরের মতোই উপেক্ষিত ছিল স্বাস্থ্যবিধি। গণপরিবহনেও মাস্ক পরতে দেখা যায়নি যাত্রী ও পরিবহন কর্মীদের।

আগের দিন স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদস্যদের মাইকিং করতে দেখা যায়। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানাও করা হয়েছিল। তবে গতকাল শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে এমন দৃশ্য চোখে পড়েনি রাজধানীর অনেক এলাকায়।

এদিকে প্রথম দিকে বাসে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে বাসের যত আসন তত যাত্রী নিয়ে চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে মালিক সমিতি। তবে শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় বাসগুলোতে যাত্রীদের তেমন ভিড় দেখা যায়নি।

গত ১০ জানুয়ারি করোনা মহামারি প্রতিরোধে ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। এর ছয় নম্বর দফায় বলা হয়েছে, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে ট্রেন, বাস ও লঞ্চ। সব যানের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকা সনদধারী হতে হবে। এতে আরো বলা হয়, বাইরে গেলে জনসাধারণকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতে সারা দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতাণ্ডবিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতাণ্ডমূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় নতুন বিধিনিষেধের অন্যতম বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা, তবে গেল দুই দিন অনেককেই মাস্ক ছাড়া চলতে দেখা যায়।

গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর বাসাবো, খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ি, মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের তৎপরতা দেখা যায়নি। বিভিন্ন গন্তব্যমুখী লোকজনকে অপেক্ষমাণ দেখা গেলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখা যায়। খিলগাঁও থেকে পুলিশ ফাঁড়িতে রিকশায় যাতায়াতকালে চালক রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয় মাস্ক না পরার কারণ। তিনি বলেন, ‘রিকশা চালানোর সময় মাস্ক পরা যায় না, কষ্ট হয়।’

সরকারের নির্দেশনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার চাইলে তো পরতে হবেই। তবে মাস্ক ছাড়া রিকশা চালালেও কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়নি।’

সরকারের নির্দেশনায় বলা আছে, দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতাণ্ডবিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, কিন্তু সকালের বাজারেও তা উপেক্ষিত। খিলগাঁও বাগানবাড়ি বাজার, খিলগাঁও কাঁচাবাজার, মালিবাগ বাজারে আসা বেশিরভাগ ক্রেতার মুখেই মাস্ক ছিল না। আর সচেতনতার অভাবে বিক্রেতাদেরও একই অবস্থা দেখা যায়।

বাগানবাড়ি বাজারের বিক্রেতা আলাল বলেন, ‘আগেরবার মাস্ক পরার জন্য পুলিশের টহল ছিল, এখন সেই টহল নেই। ফলে মাস্ক না পরলেও কেউ কিছু বলে না। আর না পরলেও কোনো সমস্যা নেই।’

সরকারের নির্দেশনার কথা বলা হলে তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা শুনছি। এখন মাস্ক ছাড়া থাকলেও পরে পরব।’

স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরার বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় মুসল্লিদের সচেতন করতে ইমামদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সরকার।

এ বিষয়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমের খাদেম জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানতে সরকারের পক্ষ থেকে সময় সময় যেসব নির্দেশনা আসে, সবই পরিপালন করা হয়। একই সঙ্গে বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা পরিপালন করা হচ্ছে। জুমার নামাজে আগেও ইমাম সাহেব মুসল্লিদের করোনাভাইরাস থেকে কীভাবে মুক্ত থাকা যাবে, সে বিষয়গুলো বয়ানে বলতেন। এখন যেহেতু আবার সেই নির্দেশনা উল্লেখ করা হয়েছে, সেহেতু ইমাম সাহেবের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া বায়তুল মোকাররম মসজিদে নিয়মিত পরিষ্কার করা, মুসল্লিদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে।’

প্রথম দিকে নির্দেশনায় বাসে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চালাচলের নির্দেশনা দেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে বাসের যত আসন তত যাত্রী নিয়ে চলাচলের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় বাসগুলোতে যাত্রীদের তেমন ভিড় দেখা যায়নি।

রাইদা বাসের হেলপার সিরাজ বলেন, ‘ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকে রাস্তায় যাত্রী কম। সব যাত্রীর মুখে মাস্ক থাকে না, তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো কড়াকড়ি না থাকায় যাত্রীদের মুখে মাস্ক না থাকলেও কিছু বলা হয় না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close