reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৫ জানুয়ারি, ২০২২

রাজনীতি এখন নির্বাচনমুখী

বিএনপিতে চ্যালেঞ্জ

চলছে স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচন ঘিরে সরগরম রাজনীতি, তৃণমূলে উৎসবের সঙ্গে ঘটছে সংঘাতও। এরই মধ্যে রাজনীতির পাল উড়তে শুরু করেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়ায়। প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে। দলগুলোতে এখন নির্বাচনের পথে হাঁটার চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে চলছে রাষ্ট্রপতির সংলাপ। এসব নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন বদরুল আলম মজুমদার ও জিয়াউদ্দিন রাজু

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশ পাঠানোর দাবি সামনে রেখে উজ্জীবিত বিএনপি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলেও চাঙ্গাভাব। দীর্ঘদিন হতাশায় নিমজ্জিত নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীরা গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছেন। খালেদা জিয়া ইস্যুতে নেতায় নেতায় জিইয়ে থাকা কোন্দলও হচ্ছে নিরসন। যারা পদবঞ্চিত তারাও যোগ দিচ্ছেন সব কর্মসূচিতে। সব মিলিয়ে বিএনপিতে সৃষ্টি হয়েছে পুনর্জাগরণ। এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাবি আদায়ের চ্যালেঞ্জ নিয়েই আগামী নির্বাচনের পথে হাঁটতে চায় দলটি।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কয়েক দিন আগে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। শুধু বিএনপি নয়, সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাকে বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার এ দাবিকে তোয়াক্কাই করছে না। আমরা চাই আমাদের দাবি মেনে নিয়ে সরকার অতি দ্রুত তাকে বিদেশ পাঠানোর উদ্যোগ নেবে।

ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া নামটি নেতাকর্মীদের কাছে অত্যন্ত আবেগের। তার এমন পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভও জন্ম নিয়েছে। তার চিকিৎসার দাবিতে বলতে গেলে সারা দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। জেল-জুলুমণ্ডহুলিয়ার ভয় না করে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নেমেছে। বলতে গেলে দলে নতুন করে পুনর্জাগরণ শুরু হয়েছে।

২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। ওই সময় সারা দেশে সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলন করে দলটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দাবি আদায় করা সম্ভব হয়নি। ওই আন্দোলনে লাখ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় নেতাসহ গ্রেপ্তার হন অনেকে। ফলে সাংগঠনিকভাবে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে দলটি। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে বারবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা সম্ভব হয়নি। এতে হতাশ হয়ে পড়ে তৃণমূলও। নানা ইস্যুতে কেন্দ্র ও তৃণমূলের মধ্যে বাড়তে থাকে দূরত্ব। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চরম ভরাডুবির পর নেতাকর্মীরা আরো হতাশ হয়ে পড়েন। খালেদা জিয়া কারাগারে গেলেও এর প্রতিবাদে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি দলটি। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর নাখোশ তৃণমূল। প্রায় একযুগ ধরে এভাবেই চলে আসছে দলটির কার্যক্রম।

গত বছরের ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত হন। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে নানা অসুখ দানাবাঁধে তার শরীরে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার লিভার সিরোসিস ধরা পড়ে। চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে শুরু হয় ঢাকায় সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন ও গণঅনশন। এরপর সব মহানগরীতেও একই কর্মসূচি পালন করে। কিন্তু এতে আইনি জটিলতার কারণে সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে না পাঠানোর সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। এমন পরিস্থিতিতে সারা দেশে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে নতুন উদ্যোগ নেয় দলটি। এর অংশ হিসেবে ৩২ জেলায় সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। ২২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে এ কর্মসূচি। এরই মধ্যে কয়েকটি জেলায় সমাবেশ হয়েছে। গতকালও কুমিল্লা, কুষ্টিয়াসহ ছয় জেলায় হয়েছে।

গত ২৪ ডিসেম্বর জয়পুরহাটের জনসভায় পদবঞ্চিত এবং নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীরা যোগ দেন। এক যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা জেলার নেতারা সেদিন একই মঞ্চে ওঠেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবি নিয়ে ওই সমাবেশ দলটির তৃণমূলে নতুন বার্তা দিয়েছে বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা।

জানতে চাইলে পটুয়াখালীর স্থানীয় নেতা আবদুুল বারেক মৃধা বলেন, দলে কোন্দল থাকলে ভালো লাগে না। দীর্ঘদিন পর এক মঞ্চে জেলার সব নেতাকে দেখে সাহস বেড়েছে। এটি আগামীর পথ চলায় নতুন প্রেরণা জোগাবে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, খালেদা জিয়া আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বারবার দাবি জানানোর পরও সরকার তাকে বিদেশ পাঠাতে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এ অবস্থায় কঠোর আন্দোলনের বিকল্প নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close