এস এইচ এম তরিকুল, রাজশাহী

  ১৪ জানুয়ারি, ২০২২

রাজশাহী সীমান্তে গরু-মহিষের ‘জন্মনিবন্ধন’

হয়রানি থেকে মুক্তি মিলছে কৃষকের

প্রতিটি বৈধ নবজাতকের জন্মের পর নিজ নিজ এলাকার ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) তার জন্মনিবন্ধন করতে হয়। ঠিক একইভাবে গরু-মহিষের বাচ্চার জন্ম হলেও ‘জন্মনিবন্ধন’ করাতে হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সীমান্ত ফাঁড়িতে। গরু-মহিষ চোরাচালান বন্ধে এমন নিয়ম চালু রয়েছে রাজশাহীর সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে। এসব সীমান্ত এলাকায় নতুন কোনো গরু-মহিষের জন্ম হলেই সেটি ১০ দিনের মধ্যেই নিবন্ধনের কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এমন নিয়ম চালুর কারণে বর্তমানে চোরাচালানের মাধ্যমে ভারতীয় গরু-মহিষ আর দেশে ঢুকতে পারে না। শুধু তাই নয়, এ নিয়ম চালুর ফলে রাজশাহীর সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর কৃষকরা হয়রানির কবল থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই ভারত সীমান্ত দিয়ে গরু চোরাচালান করে বাংলাদেশে ঢোকানো হয়। বিশেষ করে রাজশাহীর দক্ষিণ প্রান্তে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে। আর পাচার করে আনা এসব গরু বা মহিষ এ দেশের সীমানায় পৌঁছলেই এসব পশুর মালিকরা তা বাড়িতে পোষা বলে দাবি করে থাকেন। যে কারণে এসব পশু বাড়িতে পোষা, নাকি পাচার করে আনা তা নির্ধারণ করতে হিমশিম খেতে হতো বিজিবিকে। তাই এই সীমান্তে থাকা দেশের কৃষকের বাড়িতে জন্ম নেওয়া পশুর হিসাব রাখতে চালু রয়েছে ‘জন্মনিবন্ধন’ প্রক্রিয়া। এতে মিলছে সুফলও।

রাজশাহী শহরের ঠিক ওপারে পবা উপজেলার চর মাঝাড়দিয়াড় গ্রাম। ওই গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষি আর পশুপালনই আমাদের গ্রামের মানুষের প্রধান পেশা। এই এলাকার প্রতিটি বাড়িতেই কমপক্ষে পাঁচটি থেকে ৫০টি পর্যন্ত গরু-মহিষ আছে। আগে এসব পশু বিক্রি করতে যাওয়ার সময় ঝামেলায় পড়তে হতো। তবে এখন বিজিবি ফাঁড়ির ছাড়পত্র থাকায় কোনো সমস্যা হয় না। তবে জন্মনিবন্ধন করা এবং ছাড়পত্র নেওয়াটা একটু ঝামেলার। সীমান্ত এলাকার দুটি বিজিবি ক্যাম্প জন্মনিবন্ধনের কাজটি করে থাকে। এ জন্য কোনো টাকা লাগে না। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য খাতা থাকে দুটি। একটি খাতা থাকে মালিকের কাছে। সেখানে তার সব গরু-মহিষের হিসাব লেখা থাকে। একই রকম একটি খাতা থাকে বিজিবি ক্যাম্পে। গরু-মহিষ বিক্রি বা জন্মগ্রহণের পর খাতা দুটি হালনাগাদ করে রাখতে হয়। তা না হলে পরবর্তীতে পড়তে হয় ঝামেলায়।

এছাড়া রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের (ইউপি) পুরোটিই পদ্মা নদীর ওপারের ভারতীয় সীমান্তঘেষা। যে কারণে এই ইউনিয়নের সব গ্রামের মানুষকেই গরু-মহিষের জন্মনিবন্ধন করাতে হয়। এ ইউপির চর কানাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বুলবুল হোসেন জানান, গরু-মহিষ চরানোর জন্য সীমান্ত এলাকায় নিতে হয়। যে কারণে আগে কাঁটাতারের বেড়ার দিক থেকে আসতে দেখলেই বিজিবি সন্দেহ করত। অনেক কৈফিয়তও দিতে হতো। তবে এখন জন্মনিবন্ধন থাকার কারণে আর সমস্যা হয় না।’

এই চর আষাড়িয়াদহ ইউপির তথ্য মতে, এ এলাকায় হাটের দিন গরু-মহিষের ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য মানুষের ভিড় লেগে যায়। তখন একটু ঝামেলা হয়। এই পুরো ইউনিয়নে প্রায় ২২ থেকে ২৩ হাজার গরু-মহিষ আছে। সবারই জন্মনিবন্ধন করা আছে।

এ তথ্য নিশ্চিত করে চর আষাড়িয়াদহ ইউপি চেয়ারম্যান মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমার গরু-মহিষেরও হিসাব বিজিবিকে দিতে হয়। তবে এমন জন্মনিবন্ধন ও ছাড়পত্রের প্রথা দেশের আর কোথাও রয়েছে কি না আমি জানি না।’

এ সব বিষয়ে বিজিবি রাজশাহী-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোর পর থাকা নদীটা পার হলেই গরু-মহিষ চেনার উপায় থাকে না। সেজন্য সীমান্তের চোরাচালান বন্ধের একটা চেষ্টা হিসেবে গরু-মহিষের জন্মনিবন্ধন ও ছাড়পত্রের নিয়ম এখানে চালু রয়েছে।’

অধিনায়ক আরো বলেন, আমাদের সীমান্ত এলাকায় নতুন কোনো গরু-মহিষের জন্ম হলেই সেটি ১০ দিনের মধ্যে বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়িতে আনতে হয়। এর পর বাচ্চাটি দেখার পর বিজিবি সদস্যরা খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখেন। এতে গরু-মহিষের বাচ্চাটির বিবরণ লিখে রাখা হয়। এর পর গরু-মহিষটি বিক্রি করতে যাওয়ার আগে নিতে হয় ছাড়পত্র। এতে সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে চোরাচালানের মাধ্যমে ভারতীয় গরু-মহিষ আর দেশে ঢুকতে পারে না। এছাড়া সীমান্তে গরু-মহিষের অকাল মৃত্যুও কমে গেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close