জিয়াউদ্দিন রাজু, নারায়ণগঞ্জ থেকে

  ১৪ জানুয়ারি, ২০২২

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন

ফ্যাক্টর নারী ভোটার

আর মাত্র একদিন পর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নির্বাচনের প্রচার তুঙ্গে। তবে আজ শেষ হচ্ছে প্রচার। শেষ মুহূর্তে এসে ভোটারদের নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ। মেয়র পদে ভোটযুদ্ধ হবে মূলত আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং স্বতন্ত্র তৈমুর আলম খন্দকারের মধ্যে। শেষ মুহূর্তেও সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং তৈমুর আলম খন্দকার প্রচারে গিয়ে থামাননি পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। তবে অপর ৫ মেয়র প্রার্থীও থেমে নেই। তারাও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে নগরবাসীর অভিমত, এ ভোটযুদ্ধে জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর হতে পারেন নারী ভোটার এবং ধর্মভিত্তিক সংগঠন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নৌকার প্রার্থী আইভীর পক্ষে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চেয়েছেন। তবে নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডে কিছুটা আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে ১, ৩, ৫, ৭, ১২নং ওয়ার্ডে লক্ষাধিক বেশি ভোটার রয়েছে। এই ওয়ার্ডগুলোতে কয়টি মাদ্রাসা এবং ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠন রয়েছে। ওয়ার্ডগুলোর ভোটাররা সরাসরি নৌকার বিরোধিতা না করলেও পক্ষে কাজ করছে না। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুরের পক্ষে কাজ করছে বলে জানা গেছে।

তবে আওয়ামী লীগের সমন্বয়কারীরা বলছেন, নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার কারণে সংকট কেটে গিয়েছে। আগের তুলনায় এখন নৌকার অবস্থান ভালো। এই সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি প্রচার চালাচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। ডা, সেলিনা হায়াৎ আইভীর নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুরের হাতি প্রতীকের প্রচারে এখন সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো সিটি এলাকা। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনী মাঠে লেভেল প্লেইং ফিল্ড নেই। অপরদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, নির্বাচনী মাঠে প্লেইং ফিল্ড ঠিকই আছে। এটা তৈমূর আলম খন্দকারের কৌশল ও চাল বলে অভিহিত করেছেন মেয়র প্রার্থী ডাক্তার আইভী।

শুক্রবার প্রচারের শেষ দিন জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে র‌্যালি হবে। র‌্যালি শেষে দলীয় নেতাকর্মীরা সমাবেশ করবে এবং নৌকার পক্ষে ভোট চাইবেন। যেখানে আওয়ামী লীগের ১৭ নেতার অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

শেষ মুহূর্তে নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ভোট নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটিতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এখানে আমরা কোনো সংকটের মধ্যে নেই।

গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। তিনি বলেন, কোথাও আমি প্রভাব বিস্তার করিনি। আমার এ অভ্যাসও নেই। নারায়ণগঞ্জের মানুষ দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে আমাকে দেখছে। আমি যা বলি প্রকাশ্যেই বলি।

লেভেল প্লেইং ফিন্ড প্রসঙ্গে আইভী বলেন, লেভেল প্লেইং ফিন্ড এখনো ঠিক আছে। উনিও (তৈমুর) প্রচার চালাচ্ছেন। আমিও প্রচার চালাচ্ছি। কিন্তু এর বাইরে কি হচ্ছে তা আমি জানি না। জানতেও চাই না। আমি এই মুহূর্তে জনগণকে নিয়ে আছি। জনগণের কাছে ভোট চাচ্ছি এবং ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। এটাই এখন আমার প্রধান কাজ।

অন্যদিকে মেয়র পদে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমূর আলম খন্দকার প্রশাসনের পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছেন। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন।

তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, পুলিশের কার্যক্রমের কারণে নির্বাচনে একটা ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তবে জনগণ ভীত না। আমার নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছে। গতকাল শহরের ১১নং ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে সাংবদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, আন্তর্জাতিক দূতাবাসের যারা আছেন, পাশাপাশি মানবাধিকার কর্মী যারা আছেন তাদের বলবো, আমার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে। কেন আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ যাচ্ছে। আমার দলের নেতাকর্মীরা তো নৌকায় ভোট দেবে না। সরকারি দলের নেতাকর্মীদের কমিটি ভেঙে দিচ্ছে। কারণ তারা নৌকার পক্ষে কাজ করছে না।

তৈমূর বলেন, কাউকে ধমক দিয়ে, গালি দিয়ে তো কাজ করানো যায় না। নারায়ণগঞ্জের জনগণের কাছে মেসেজটা ক্লিয়ার যে, সরকারি দলের মাঝে বিরাট ফাটল। ঢাকা থেকে মেহমানরা এসেও এই ফাটল মেটাতে পারেনি। হাতি এখন জনগণের মার্কা। হাতির মাধ্যমেই পরিবর্তন আসবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close