নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ জানুয়ারি, ২০২২

বিধিনিষেধের প্রথম দিন

মাস্ক থুতনিতে, গলায়

দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ শুরুর দিনে অনেকেই নিজেদের সঙ্গে মাস্ক রাখছেন। কিন্তু মুখে থাকার বদলে মাস্কের ঠাঁই হয়েছে থুতনি কিংবা গলায়। কেউ কেউ আবার মাস্ক খুলে বুকপকেটে রেখে দিয়েছেন। ওমিক্রনের সংক্রমণ রোধে গত সোমবার সার্বিকভাবে ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে জনসমাগমস্থলে সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুয়ায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এ বিধিনিষেধ কার্যকর করা হয়েছে।

এসব বিধিনিষেধের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মহামারি থেকে সুরক্ষার জন্য জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনা। করোনার সংক্রমণ দ্রুত ছড়ানো ঠেকাতে মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য গণপরিবহনে সক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন। প্রাত্যহিক জীবনে হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজ করার অভ্যাস চালু রাখা।

সরকারের সূত্রগুলো বলছে, গত প্রায় ২১ মাসের মহামারি জীবনে লকডাউনের মতো কঠোর বিধিনিষেধ সাধারণ মানুষের জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এখন দেশের প্রায় ৪৬ শতাংশ মানুষ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। দুই ডোজ করে টিকা পেয়েছেন প্রায় ৩২ শতাংশ মানুষ। তৃতীয় বা বুস্টার ডোজও দেওয়া চলছে। সরকারের হাতে করোনার টিকার মজুদও ভালো।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে নাগরিকরা টিকা নেওয়া চালিয়ে গেলে এবং মাস্ক পরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়গুলোতে উদাসীনতা না দেখালে কঠোর বিধিনিষেধের প্রয়োজন হবে না।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন, সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রথম কথা হচ্ছে যতটা সম্ভব ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটা শুধু সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। নাগরিকদের উদ্যোগী হতে হবে, জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা লাগবে এবং স্বেচ্ছাসেবীর প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ স্বতঃস্ফূর্ত একটা উদ্যোগ দরকার।

তবে গতকাল বেলা ১১টায় মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়া বাসের চালক ও সহকারীর অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। মুখের মাস্ক থুতনিতে নামিয়ে কিংবা খুলে রেখে কেউ পান চিবোচ্ছেন, কোনো চালক আবার সিগারেট টানছেন। চালকের সহকারীরাও মুখ থেকে মাস্ক খুলে সেটা হাতে নিয়ে যাত্রীদের ডাকাডাকি করছেন।

খিলগাঁওগামী মিডলাইন পরিবহনের একটি বাসের চালক সুমন মিয়া বলেন, ‘বাসের ভেতর বেশিক্ষণ মাস্ক পরে থাকা যায় না। তাই খুলে রেখেছি।’

ওই বাসের চালকের সহকারী রহমত আলীর মুখেও মাস্ক ছিল না। তিনি বলেন, ‘মুখে মাস্ক পরে যাত্রী ডাকাডাকি করা যায় না। মুখ খুললে বা নড়ালেই মাস্ক সরে যায়। তাই একেবারে খুলে রেখেছি।’

বাসের যাত্রীদেরও একই অবস্থা। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। মাস্ক কেন পরছেন না, তা জানতে চাওয়া হলে অনেকেই জামা বা প্যান্টের পকেট থেকে মাস্ক বের করে দেখান।

মোহাম্মদপুর থেকে গুলিস্তানগামী মালঞ্চ পরিবহনের একটি বাসে ধানমন্ডির শংকর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত গিয়ে দেখা যায় বাসের ভেতর বসা ও দাঁড়িয়ে থাকা মিলে ৩৯ যাত্রীর মধ্যে ১৭ জনের মুখে মাস্ক ছিল না। এর মধ্যে ১৩ জন যাত্রী মুখ থেকে মাস্ক খুলে থুতনি বা গলায় নামিয়ে রেখেছেন। চারজনের কাছে মাস্কই ছিল না।

তাদের একজন সীমান্ত স্কয়ার মার্কেটের ব্যবসায়ী সোলাইমান কবীর। তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে বেরোনোর সময় তাড়াহুড়োর কারণে মাস্ক সঙ্গে নিতে ভুলে গেছি। দোকানে মাস্ক আছে, সেখানে পরে নেব।’

মালিবাগগামী রমজান পরিবহনের বাসের চালক হাসেম আহমেদের মুখে মাস্ক ছিল না। বাসের সামনের সারিতে বসা দুজন নারী যাত্রীর কারো মুখেই মাস্ক ছিল না। তবে একজন মাস্ক গলায় ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। দুজন নারীর কেউই নিজেদের পরিচয় বলতে চাননি। মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে একজন বলেন, ‘ওড়না গলা থেকে মুখ পর্যন্ত মাস্কের মতোই পেঁচিয়ে রাখি। তাই মাস্ক প্রয়োজন হয় না।’

এ ছাড়া বিধিনিষেধে দোকান, শপিং মল, বাজারের ক্রেতাণ্ডবিক্রেতা ও হোটেল-রেস্তোরাঁ- সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলক সবাইকে মাস্ক পরার নির্দেশনা থাকলেও অনেকেই তা মানছেন না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close