প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৪ জানুয়ারি, ২০২২

ওমিক্রন দ্রুত ছড়াচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই ভ্যারিয়েন্টটা দ্রুত ছড়াচ্ছে এবং একেকটা পরিবারসহ আক্রান্ত হচ্ছে। তাই সবাইকে বলব, স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য আমরা কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছি; সেই নির্দেশনা মেনে চলুন।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আগারগাঁওয়ে নবনির্মিত জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় তিনি গবেষণালব্ধ জ্ঞানকে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় দেশের জনগণকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। সবাইকে মাস্ক ব্যবহার এবং করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার আরোপিত ১১ দফা বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালনেরও পরামর্শ দেন। বাসস।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গবেষণার পাশাপাশি গবেষণালব্ধ জ্ঞান আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তার ওপর আমরা জোর দিচ্ছি। মৌলিক গবেষণার পাশাপাশি প্রায়োগিক গবেষণার ওপরও জোর দিতে হবে। এ বিষয়ে যারা গবেষক, তারা নিশ্চয়ই এ বিষয়ে কাজ করবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশীয় সম্পদ যা আছে, অনেক অমূল্য সম্পদ রয়ে গেছে, যা আমরা এখনো ব্যবহার করতে পারিনি বা ধরাছোঁয়ার বাইরে, সেগুলোও আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। এর ওপর গবেষণা করে সেগুলোও যাতে দেশের মানুষের কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বা খাদ্য উৎপাদন বা ইঞ্জিনিয়ারিং বা অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রেই গবেষণা প্রয়োজন। আসলে গবেষণা ছাড়া উৎকর্ষ সাধন হয় না। আর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে গেলে আমাদের গবেষণা একান্তভাবে দরকার। সেজন্য সবাইকে গবেষণার দিকে একটু নজর দেওয়া দরকার। আর সারা বিশে^ প্রযুক্তি ব্যবহারের যে প্রভাব বেড়েছে, সেই প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদেরও গবেষণায় সব সময় নজর দিতে হবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মুহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে নবনির্মিত ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্স’-এর ওপর একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়। বিজ্ঞান ও উন্নত প্রযুক্তির এ যুগে যেসব দেশ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এগিয়ে যাচ্ছে, তারাই অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত উন্নতি করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্বাস্থ্য খাতের গবেষণায় পিছিয়ে থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অন্য গবেষণায় এগিয়ে গেলেও আমাদের দেশ স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণায় পিছিয়ে রয়েছে এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা কম হচ্ছে।’ এজন্য চিকিৎসকদের অনেককেই রোগীর সেবার পর আর গবেষণায় যুক্ত হতে না পারার প্রসঙ্গও তিনি উল্লেখ করেন। তার সরকার স্বাস্থ্য বিষয়ে গবেষণা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সময়ই বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তথ্য আদান-প্রদান ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে বহির্বিশে^র সঙ্গে বাংলাদেশের সংযোগ স্থাপনে তার সরকারের সময় অর্থাৎ ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের সদস্য হয় বাংলাদেশ এবং ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় স্যাটেলাইট আর্থ স্টেশনের উদ্বোধন করেন তিনি। তার এসব পদক্ষেপ আমাদের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে সরকারে এসে তিনি দেখতে পান, দেশে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী যেমন কমেছে; তেমনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান শিক্ষার আগ্রহও কমে গেছে। তখন তিনি সারা দেশে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

বিজ্ঞান শিক্ষার আগ্রহ কমার কারণ সম্পর্কে সরকারপ্রধান বলেন, ‘৭৫-পরবর্তী অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় আসা সরকারগুলো তাদের অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার জন্য দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যায় এবং মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী নিয়ে একটি এলিট শ্রেণি গঠনের উদ্যোগ নেয়। মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে অর্থ ও অস্ত্র তুলে দিয়ে তাদের ব্যবহার করে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল। তখন সাধারণ জনগণের কী প্রয়োজন, সেদিকে তাদের কোনো খেয়ালই ছিল না। এমনকি ৯১-পরবর্তী বিএনপি সরকার বিনামূল্যে প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক সাবমেরিন কেবলে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগটা পর্যন্ত নিতে ব্যর্থ হয়। আমাদের দুর্ভাগ্য তখন বিএনপি সরকারে এবং খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সে বলে দিল, এটা করা যাবে না। এটা করলে বাংলাদেশের সব তথ্য বিদেশে চলে যাবে। ফলে প্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের উন্নয়নের সম্ভাবনাকে তারা নষ্ট করে দেয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে এই খাতের উন্নয়নে নতুন নীতিমালা গ্রহণ করে। সফটওয়্যার, ডেটা-এন্ট্রি, ডেটা-প্রসেসিংয়ের উন্নয়নে আইটি-ভিলেজ এবং হাই-টেক পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। শুল্কমুক্ত কম্পিউটার, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ এবং সফটওয়ার আমদানির অনুমোদন দেয় ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু সে সময় প্রায় ১০ হাজার স্কুলে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রদানে তার সরকারের উদ্যোগকেও পরবর্তী বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে নস্যাৎ করে। আন্তর্জাতিক আদালতে ক্রয়চুক্তি ভঙ্গের দায় দেশের অর্থের ক্ষতিপূরণও গুনতে হয় তখন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রথমে প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে কম্পিউটার সংগ্রহের চেষ্টার পর ১০ হাজার স্কুলে ১০ হাজার কম্পিউটার প্রদানের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করি এবং কম্পিউটার কেনার পদক্ষেপ নিই। উন্নয়ন সহযোগীরা এগিয়ে আসে এবং স্কুলগুলোর একটি তালিকা করা হয়। অর্ধেক মূল্যে নেদারল্যান্ডস সরকার তাদের কোম্পানির কাছ থেকে কম্পিউটার কেনার প্রস্তাব দিলে আমরা এই ভালো প্রস্তাবে রাজি হয়ে সব ধরনের পদক্ষেপ নিই। তাদের সঙ্গে চুক্তিও হয়ে যায়। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের যে কোম্পানি থেকে কম্পিউটার নেওয়া হচ্ছে, তার নাম ছিল নেদারল্যান্ডসের জাতীয় ফুলের নামে ‘টিউলিপ’। তার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকি ও নাম ‘টিউলিপ’ হওয়ায় চুক্তি সম্পাদনের পর সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তা বাতিল করে পরবর্তী বিএনপি সরকার। কারণ আমাদের অতি জ্ঞানী তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কেউ বোঝায় শেখ রেহানার মেয়ের নাম টিউলিপ, কাজেই নেদারল্যান্ডসের সেই কোম্পানিটাও টিউলিপের। এই কোম্পানি থেকে কম্পিউটার নেওয়া যাবে না এবং সে সেটা বাতিল করে দেয়। ফলে নেদারল্যান্ডসের ওই কোম্পানি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা করে। এই মামলা মোকাবিলা করতে আইনজীবী ঠিক করা হয় এবং নানা কাজে অর্থ ব্যয় করে বাংলাদেশের সেখানে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় প্রায় ৬০ কোটি টাকা। ১০ হাজার কম্পিউটার তো গেলই আরো ৬০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হলো একটা দেশের সরকারপ্রধানের সিদ্ধান্তের কারণে। আর এ ধরনের সরকারপ্রধান থাকলে দেশের উন্নতি কীভাবে হবে, আপনারা নিজেরাই বুঝে দেখেন।”

সরকারে আসার পরই বিএনপির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের মনোপলি ভেঙে মোবাইল টেলিফোনকে বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে জনগণের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা, সারা দেশে ডিজিটাল টেলিফোন চালু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ এবং সারা দেশে ইন্টারনেট সেবা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে দেশকে ডিজিটাইজেশনে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকায় হাতে সময় পাওয়ার ফলে তার সরকারের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে এখন ডিজিটাল ডিভাইস তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ই-গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠা এবং আইসিটি শিল্পের বিকাশে ১৩ বছর ধরে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন আমরা করছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close