বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার

  ১৩ জানুয়ারি, ২০২২

কক্সবাজার কলাতলী মোড় যেন মৃত্যুকূপ

কক্সবাজার শহরের কলাতলী মোড় যেন মৃত্যুকূপ। এই মোড়ের ঢালু সড়কে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা। এ তালিকায় আছেন আইনজীবী, শ্রমিক নেতা, শিক্ষার্থী ও পথচারী। কলাতলী সড়কের ঢালু অংশ হয়ে নামার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে মালবোঝাই ভারী গাড়িই বেশি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এ ব্যাপারে সড়কের কাঠামো, স্পিডব্রেকার না থাকা, চালককে পূর্ব সতর্ক না করা, সড়কের দুই পাশ দখল, যথেষ্ট চওড়া না থাকাসহ নানা অব্যবস্থাপনার কথা বলছেন সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ও ট্রাফিক বিভাগ নানা দিকনির্দেশনা দিয়েই কাজ সারছেন। ওই ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যার হিসাব নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কলাতলী পয়েন্টে ২০২১ সালের ৬ মার্চ শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে সিমেন্টবোঝাই ট্রাক ফুটপাতে উঠে পড়ে। এতে ট্রাকের চাপায় একজন আইনজীবী, একজন নারী ও একজন পর্যটক নিহত হন। আহত হন অন্তত ৯ জন। দুমড়েমুচড়ে ভাসমান দোকান, সিএনজি ও ইজিবাইক, তারা সবাই পথচারী ছিলেন।

২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে একই সড়কের ঢালু জায়গায় ডাম্পারের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন শ্রমিক নেতা খোরশেদ আলম (৩৫)। ডাম্পারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর মালবাহী বড় ট্রাক ওই ঢালু দিয়ে নামার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি সিএনজি ও দুটি অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান অটোরিকশার যাত্রীরা।

গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কলাতলীতে বেপরোয়া ট্রাকের ধাক্কায় আশরাফ আশু (৩৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। তিনি ঝিলংজা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম লারপাড়ার সেনায়েত আলীর ছেলে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। ফলে সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ২০১৮ সালে ওই সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীছাউনি গুঁড়িয়ে দেয় একটি ট্রাক। যেখানে এক পথচারী নিহত এবং একজনের পা ভেঙে যায়।

পর্যটন সমাগম স্থানের এমন একটি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে এত ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এর কোনো সঠিক তথ্য নেই।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা জানান, কিছুদিন আগে তার গাড়িও ওই জায়গায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল। দুর্ঘটনা কমাতে গতানুগতিক স্পিডব্রেকার না করে আধুনিক মানের গতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম ব্যবহার করলে ভালো হয়। ওই ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় আসার আগে চালককে সর্তক করতে মারকিং (চিহ্নিত) বা লাইট ব্যবহার করা উচিত।

এই প্রসঙ্গে স্পিডব্রেকার নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন নিটা কম্পিউটার অ্যান্ড টেকনোলজির স্বত্বাধিকারী ইঞ্জিনিয়ার মো. আলমগীর হোসাইন। তিনি বলেন, ঢালু রাস্তা দিয়ে নামার সময় স্পিডব্রেকার প্রযোজ্য হলেও গাড়ি উঠার সময় তা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তবে এই ঝুঁকিপূর্ণ সড়কের ব্যাপারে চালককে অগ্রিম সতর্ক করার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আধুনিক কৌশল প্রয়োজন।

কক্সবাজার ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার এমএম রকীব উর রাজা জানান, কলাতলী মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্স রয়েছে। সেখানে সবসময় ট্রাফিক দায়িত্বরত থাকেন। তিনি নিজেই ২০২১ সালের ৬ মার্চের সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সাক্ষী।

তিনি আরো জানান, দূর-দূরান্ত থেকে আসা মালবোঝাই ভারী ট্রাক-পিকআপণ্ডলরিগুলো সড়কের ঢালু অংশে ব্রেক ফেল করে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এই সমস্যার সমাধানে চালককে সামনে ঢালু রাস্তায় ঝুঁকির বিষয়টি অগ্রিম অবহিত করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে তিনি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

কলাতলীর এই ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে গত ৫ বছর বা এরও আগে সড়ক দুর্ঘটনায় কতজন মারা গেছে এ তথ্য নেই সিভিল সার্জন অফিসে। এ ব্যাপারে কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসার ডা. মো. মাহবুবুর রহমান জানান, ওই পয়েন্টে সড়ক দুর্ঘটনা এবং হতাহতের বিষয়টি তিনি অবগত। সার্বিকভাবে কতজন মারা গেছে তার কোনো তথ্য নেই।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তাফা জানান, সড়কটি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট, যা ২০০ থেকে ২৫০ মিটারের বেশি নয়। দুর্ঘটনা কমাতে সড়কটি বড় করতে হবে। এছাড়া সড়ক থেকে তিন চাকার গাড়িগুলো সরিয়ে ফেলা জরুরি।

স্পিডব্রেকারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুর্ঘটনা বন্ধে স্পিডব্রেকার কখনো কোনো সমাধান নয়। এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত সময়ের মধ্যে সাইন সিগন্যালসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close