জুনাইদ কবির, ঠাকুরগাঁও

  ১৩ জানুয়ারি, ২০২২

কমলার হলুদ রঙে চোখ জুড়ায়

ঠাকুরগাঁওয়ে ভারতের দার্জিলিং জাতের কমলা বাগান করেছেন কৃষক আবু জাহিদ ইবনুল ইরাম জুয়েল। তার বাগানের গাছে ধরেছে প্রচুর পরিমাণে দার্জিলিং জাতের কমলা। এ কমলাগুলো হলুদ রঙে পরিণত হয়েছে। একনজর এই কমলা বাগান দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গার মানুষ ভিড় করছে। সবুজের মধ্যে হলুদ রঙের কমলা ঝুলছে। কি চোখ জুড়ানো দৃশ্য!

কৃষক আবু জাহিদ ইবনুল জুয়েলের মতে, ‘ভারতীয় দার্জিলিং জাতের এ কমলা মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে ব্যাপক চাহিদা। এরই মধ্যে কমলাগুলো পেকে হলুদ রঙে পরিণত হয়েছে। বাগানেই বিক্রি হচ্ছে দার্জিলিং জাতের কমলা। আর এতে বেশ লাভবানও হচ্ছি।’

ঠাকুরগাঁও কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় ৭৩ হেক্টর জমিতে মালটা ও কমলার বাগান রয়েছে ১ হাজার ৩১টি। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী উপজেলা পীরগঞ্জ ও হরিপুরে ভারতীয় দার্জিলিং জাতের ৭টি কমলা বাগান গড়ে উঠেছে। তাই কৃষক জাহিদ ইবনুল জুয়েলের রয়েছে দার্জিলিং জাতের কমলার বাগান।

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার ২ নম্বর কোষারানীগঞ্জ ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আবু জাহিদ ইবনুল ইরাম জুয়েল বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে হর্টিকালচার থেকে কয়েকটি দার্জিলিং জাতের কমলাগাছের চারা কিনে আনেন। এরপর সেই চারাগুলো মালঞ্চা গ্রামে নিজের জমিতে রোপণ করেন তিনি। রোপণ করা গাছ বড় হওয়ায় দুই বছরের মধ্যে আশানুরূপ ফল হওয়ায় বাগানের পরিধি বাড়াতে থাকেন কৃষক জুয়েল। বাগানের প্রবেশপথে একটি সাইনবোর্ড বসানো হয়েছে, যাতে লেখা রয়েছে- ‘আমার দেশের মাটি, খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি’। বর্তমানে ওই বাগানে ৩০০টি দার্জিলিং জাতের কমলাগাছ রয়েছে। বাগানের প্রতিটি গাছেই থোকায় থোকায় ঝুলছে কমলা ফল। প্রতিটি গাছেই ৮০০ থেকে ৯০০টি করে কমলা ধরেছে। আর সেগুলো পেকে হলুদ রঙে পরিণত হয়েছে।

নভেম্বর মাস থেকে বাগানের উৎপাদিত দার্জিলিং জাতের কমলা ফল বিক্রি করতে শুরু করেছেন বাগান মালিক। প্রতি কেজি কমলা বিক্রি করছেন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে। উৎপাদিত কমলা কিনতে জুয়েলের বাগানেই ছুটে আসছেন দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে দার্জিলিং জাতের এই কমলা ফল যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। প্রতি বছর বাগানের পরিধি বাড়ায় এই বাগানে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে অনেক মানুষের।

একই বাগানের অন্য প্লটে কৃষক আবু জাহিদ ইবনুল ইরাম জুয়েল উৎপাদন করছেন দার্জিলিং জাতের কমলার চারা। সীমান্ত এলাকায় দার্জিলিং জাতের কমলার বাগান গড়ে ওঠায় অনেক কৃষক উদ্বুদ্ধ হয়ে এই বাগান গড়ার চিন্তা করছেন।

ঠাকুরগাঁও শহর থেকে দার্জিলিং জাতের কমলা বাগান দেখতে এসেছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, লোকমুখে শুনে খুব আগ্রহ নিয়ে এই কমলা বাগান দেখতে এসেছি। দেখে সত্যিই অনেক ভালো লেগেছে। চারদিকে হলুদ রঙের কমলা দেখে মনে হচ্ছে দার্জিলিংয়ে আমি এসেছি। এমন বাগান আমাদের দেশের কৃষকরা করলে তারা যেমন লাভবান হবেন হবেন, ঠিক তেমনি দেশে ভিটামিন-সি-এর চাহিদা পূরণ করতে সহায়ক হবে।

পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর থেকে এই বাগান দেখতে পরিবারসহ এসেছেন নাসরিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে ছবি দেখেছি যে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে দার্জিলিং জাতের কমলার বাগান হয়েছে। বাস্তবে সেই বাগান দেখার জন্যই দুই বাচ্চা, স্বামীসহ এসেছি। বাগানজুড়ে শুধু কমলা আর কমলা। সত্যিই মনোমুগ্ধকর একটা পরিবেশ। আমরা অনেক খুশি এখানে এসে।’

স্থানীয় কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নিজেই জুয়েলের দার্জিলিং জাতের কমলা খেয়েছি। কমলাটি মিষ্টি ও রসালো। এই রকম কমলা এর আগে কখনো খাইনি। জুয়েল সারাক্ষণ নিজে ও তার লোকজন এই বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন। ভালো পরিচর্যার কারণে এই বাগানের কমলা ফলের আকার বেশ বড় হয়েছে। আমিও তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করে নিজেই এমন একটি বাগান গড়ে তুলতে চাই।’

দার্জিলিং জাতের এই কমলা বাগানে শুরু থেকেই কাজ করেন নরেন মোহন। তিনি বলেন, ‘এই বাগানে প্রথম যখন হর্টিকালচার থেকে চারা সংগ্রহ করে রোপণ করা হয়, তখন থেকেই আমি এখানে কাজ করছি। প্রতিদিন এই বাগান দেখার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন এসে ভিড় জমায়। এখন বাগানে ১০ জনের মতো মানুষ কাজ করছে। আর গাছ থেকে কমলা পাড়ার কাজ করছেন চারজন।’

দার্জিলিং জাতের কমলা বাগানের মালিক আবু জাহিদ ইবনুল ইরাম জুয়েল বলেন, ‘আমার এই বাগানের বয়স ১০ বছর। ৩ বছর হলো ফল আসার। এবার প্রচুর পরিমাণে ফল ধরেছে। আশা করছি এই বাগান থেকে এ বছর প্রায় ১০ হাজার টন কমলা উৎপাদন হবে। বাগান থেকে স্থানীয় মানুষজন, ব্যবসায়ীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে কমলা ফল কিনে নিয়ে যান। আর হাজার হাজার মানুষ আসে কমলা বাগানটি দেখার জন্য। তিনি বলেন, অনেকেই আমার কাছ থেকে দার্জিলিং জাতের কমলার চারা সংগ্রহ করছেন, আবার অনেকেই পরামর্শ নিচ্ছেন। আমার মতো করে যদি অন্য কৃষক কমলা বাগান করেন তাহলে কৃষিতে একটি বিপ্লব ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।’

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, ‘কৃষি দপ্তর থেকে আমরা সব সময় কৃষক আবু জাহিদ ইবনুল ইরাম জুয়েলকে পরামর্শ দিয়ে থাকি। তার দার্জিলিং জাতের কমলা বাগানটি বেশ সুন্দর হয়েছে এবং বাগানে প্রচুর পরিমাণে কমলাও ধরেছে। তার এই বাগান দেখে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন বাগান করার জন্য। আমরা মালটা ও অন্যান্য কমলা বাগান মালিকদেরও পরামর্শ দিই। ধান, গম, আলুসহ অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি কৃষকরা যেন কমলা বাগান গড়ে তোলেন, সেজন্য আমাদের কৃষি কর্মকর্তা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close