হাসান ইমন

  ১৩ জানুয়ারি, ২০২২

শাহবাগ শিশু পার্ক

কাজ শুরু হয়নি তিন বছরেও!

সংস্কার কাজের অজুহাত দেখিয়ে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় শিশু পার্কটি বন্ধ করে দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এরই মধ্যে তিন বছর পার হলেও কাজ শুরুই করতে পারেনি সংস্থাটি। আরো আড়াই বছরেও খোলার সম্ভাবনা নেই। এই পার্কটির কাজ কবে শুরু হবে জানেন না কর্মকর্তারাও। এই শিশু পার্কটি বন্ধ থাকায় বিনোদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশু-কিশোররা। তবে নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরে এমনি পার্কের খুব সংকট রয়েছে। এর মধ্যে এই পার্কটি তিন বছর বন্ধ রয়েছে। অথচ এই পার্কে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে শিশু-কিশোররা বিনোদন ও আনন্দ করে। তাই, কালক্ষেপণ নয়, দ্রুত বাস্তয়নের তাগিদ দিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, ২০১৯? সালের জানুয়ারি মাসে পার্কের সামনে একটি বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে এটি বন্ধ ঘোষণা করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদযানে স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শিশু পার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বাস্তবায়নাধীন থাকায় অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শিশু পার্ক সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। একই সময়ের মধ্যে শিশু পার্কেরও সংস্কারকাজ শেষে এটি খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যে বরাদ্দ নিয়ে জটিলতার কারণে এখন পর্যন্ত পার্কের কাজ শুরুই হয়নি। অন্যদিকে স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

এদিকে দীর্ঘদিন জাতীয় শিশু পার্কটি বন্ধ থাকায় বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশু-কিশোররা। একই সঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিশু ও কিশোরদের বাবা-মায়েরা। এ বিষয়ে মগবাজারের বাসিন্দা মোস্তফা কামাল বলেন, অনেক দিন শিশু পার্কটি বন্ধ রয়েছে। অথচ আগে ছেলেমেয়েদের নিয়ে একটু ঘুরতে যাইতাম। তারা বিভিন্ন রাইডে উঠে খুব আনন্দ করত। শিশুদের বিনোদনের জন্য এ পার্কটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটার কাজ শেষ না হওয়ায় শিশু ও কিশোররা বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিশুপার্কটির আধুনিকায়নের কাজটি করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর জন্য স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের মূল বরাদ্দ ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা থেকে ৭৮ কোটি টাকা দক্ষিণ সিটিকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শুরু থেকেই বরাদ্দ নিয়ে আপত্তি জানায়। সংস্থাটির পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বলা হয়, শিশু পার্কের বিদ্যমান রাইডগুলো ঝুঁকিপূর্ণ, নতুন রাইড বসাতে হবে। রাইড বসানো এবং পার্কের উন্নয়নে এই বরাদ্দ অপর্যাপ্ত। এ নিয়ে চিঠি চালাচালির পর ১০ মাস আগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দক্ষিণ সিটিকে নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে শিশু পার্কের আধুনিকায়ন করতে বলা হয়।

পরে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এরই মধ্যে ৬১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকার প্রকল্পটির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি এখনো পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি চলতি বছরের অক্টোবরে কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাব্য মাস ধরা হয়েছে। আর কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। যার মধ্যে জিওবি অর্থায়ন থাকবে ৫৫৩ কোটি ৯৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। আর ডিএসসিসির নিজস্ব অর্থায়নে ব্যয় হবে ৬১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

যা থাকছে প্রকল্পে : এ প্রকল্পে ১৫টি রাইডস থাকবে। এগুলো হলো- মেইন কস্টার, ডিস্ক ওমেগা ৪০, সুপার এয়ার রেইস, টি কাপ ৯, ফ্লাইং ক্যারোসেলস, ইনডেবর, গ্যালন, ১২ডি থিয়েটার, ক্লাইমবিং কার, বাম্পার কার, ম্যাজিক বাইক, ট্রাম্পলাইন বেড, সুপার হ্যাপি সুয়িং, মেরি গো রাউন্ড ও ওয়াটার মারিয়া।

এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিধ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, দেশে প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিকল্পনাতেই বড় দুর্বলতা আছে। শুরু থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদযানে নেওয়া পরিকল্পনায়ও বড় গলদ ছিল। এ জন্য পুরো ঢাকায় শিশু-কিশোরদের জন্য একমাত্র বিনোদন কেন্দ্রের আজ এই অবস্থা হয়েছে। এমনিতেই পার্কের সংকট, তার উপর দীর্ঘদিন বন্ধ। এটার প্রভাব পড়ছে শিশু-কিশোরদের উপর। কালক্ষেপণ না করে খুব দ্রুত পার্কটির কাজ শেষ করে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির যান্ত্রিক বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিছুর রহমান বলেন, বর্তমানে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন আছে। শিগগির অনুমোদন হয়ে যাবে বলে আশা করছি। যদিও প্রকল্পটির ২০২১ সালের অক্টোবরে কাজ শুরু হওয়ার সম্ভব্য তারিখ ছিল, এটা আবার সংশোধন হবে। সংশোধন হয়ে এলে কাজ শুরু হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close