নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ জানুয়ারি, ২০২২

দেশে তেলের দাম কমবে কবে?

বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও তার সুফল পাচ্ছে না দেশের সাধারণ মানুষ। তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে বাড়ানো বাস-ট্রাক-লঞ্চের ভাড়া আর কমেনি। ক্ষুব্ধ মানুষের প্রশ্ন, বিশ্ববাজারে কমলে দেশের বাজারে কেন তা হবে না? জ্বালানির দাম না কমালে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। আরো কয়েকদিন পর্যবেক্ষণের কথা বলছে সরকার। এর আগে গত নভেম্বরের শুরুতে এক লাফে লিটারে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১৫ টাকা বাড়ায় সরকার। ফল, অস্থিরতা, গণপরিবহনে দৌরাত্ম্য। ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘট পরিবহন মালিকদের। দফায় দফায় আলোচনা, তারপর মালিকদের দাবি পূরণ। ৭ নভেম্বর থেকে বাড়তি ভাড়া গুনছে সাধারণ মানুষ। বাস, ট্রাক, লঞ্চ ভাড়ার প্রভাব পড়েছে পণ্য ও পণ্য পরিবহনে।

দাম বাড়ানোর অজুহাত ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি আর ভারতে পাচারের আশঙ্কা। তখন প্রতি ব্যারেলের দর ছিল ৮৫ ডলার। কয়েক দফায় কমে এখন তা নেমে এসেছে প্রায় ৭০ ডলারে। প্রতিবেশী ভারতেও কমেছে দাম। প্রশ্ন হলো, দেশে ডিজেল-কেরোসিনের দাম কমছে না কেন? তেলের দামের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেকের। প্রভাব বিবেচনা না করে দাম বাড়ানোর ফল অর্থনীতির জন্য অশনিসঙ্কেত।

এদিকে লোকসানের কথা বলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরই আবার লাভে ফিরেছে বিপিসি। গত নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরপরই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম আবার পড়ে যায়। ডিসেম্বরজুড়েই জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে কি না সে বিষয়ে এখনো কোনো চিন্তাই করেনি জ্বালানি বিভাগ।

জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের বিষয়ে এখনও আলোচনা হয়নি।

এর আগে সাবেক জ্বালানি সচিব মো. আনিছুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সরকার ছয় মাস বাজার পর্যবেক্ষণ করে দাম বাড়িয়েছে। সরকার সেভাবে বাজার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে কতদিন ধরে বিশ্লেষণ করা হবে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।

গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে বিশ্ববাজারে তেল বিক্রি হয়েছে ৭২ দশমিক ৭৬ ডলারে। বাজার পরিস্থিতি বলছে আগামী বছরও তেলের বাজারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে না। বছরের মধ্যভাগে কিছুটা বাড়লেও চলতি বছর বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের গড় দাম থাকবে ৬৬ দশমিক ৯১ ডলার। আগামী বছর হবে ৬৫ দশমিক ৯৩ ডলার। পরের বছর কিছুটা কমে ৬৩ দশমিক ৪ ডলার এবং এর পরের বছর ৬০ দশমিক ৯৫ ডলারে দাঁড়াবে।

করোনার কারণে বিশ্ববাজার কিছুটা এলোমেলো হলেও সাধারণত তেলের দামের পূর্বাভাসে নড়চড় হয় না। অর্থাৎ, এখন দাম কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলেও বিপিসিকে লোকসান দিতে হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। বিপিসি আনুষ্ঠানিকভাবে না বললেও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, ৭৬ ডলারে তেল কিনলে বিপিসির লোকসান হয় না। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে সময়ে সময়ে এ দর বদলায়।

তেলের দাম সমন্বয়ের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে এর আগে জ্বালানি সচিব একটি সেমিনারে উল্লেখ করেছিলেন। আমলাদের সিদ্ধান্তে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সমালোচনার জবাবে তিনি এ কথা বলেছিলেন।

সরকার জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ঘোষণা গত ৪ নভেম্বর জানিয়েছিল। মধ্যরাত থেকে কার্যকর হয় ডিজেল ও কেরোসিনের নতুন দাম। লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা করা হয়। সে সময় মন্ত্রণালয়ের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ক্রমবর্ধমান।

বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বগতির কারণে পাশের দেশসহ বিশ্বের অন্য দেশ জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়মিত সমন্বয় করছে। গত ১ নভেম্বর ভারতে ডিজেলের বাজারমূল্য প্রতি লিটার ১২৪.৪১ টাকা বা ১০১.৫৬ রুপি ছিল। বাংলাদেশে ছিল ৬৫ টাকা। বর্তমান ক্রয়মূল্য বিবেচনা করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ডিজেলে লিটারপ্রতি ১৩.০১ এবং ফার্নেস অয়েলে লিটার প্রতি ৬.২১ টাকা কমে বিক্রি করায় প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে।

অক্টোবরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিভিন্ন গ্রেডের পেট্রোলিয়াম পণ্য বর্তমান মূল্যে সরবরাহ করায় মোট ৭২৬.৭১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার শুধু ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটার ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা পুনর্নির্ধারণ করেছিল।

সূত্র বলছে, বিপিসি গত পাঁচ অর্থবছরে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি লাভ করেছে। সরকার এখান থেকে গত দুই অর্থবছরে ৫ হাজার করে ১০ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা নিয়েছে। এরপরও বিপিসির কাছে মুনাফার ৩৩ হাজার কোটি টাকা ছিল। কিন্তু জুন থেকে নভেম্বর অবধি এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা লোকসানের জন্য দাম বাড়ানো হয়। এখন এই দাম সমন্বয় করা হলেও বাজারে যে পরিমাণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে তা কমবে কি না সন্দেহ রয়েছে।

জানতে চাইলে বিপিসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে স্থিতিশীল থাকায় এখন বিপিসির ডিজেল বিক্রি করে লিটারে তিন টাকার মতো লাভ হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close