গাজী শাহনেওয়াজ

  ১২ জানুয়ারি, ২০২২

নতুন প্রকল্পে যোগ দিতে চাপ

ক্ষোভ বাড়ছে আইডিইএ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেসের (আইডিইএ) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন প্রকল্পে যোগ দিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে এই চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইডিইএ প্রকল্প-১-এর সংক্ষুব্ধরা। তারা বলছেন, এখনো পুরোনো প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়নি, আগামী জুন পর্যন্ত মেয়াদ রয়েছে।

এদিকে, আইডিইএ প্রকল্প-১ সরাসরি প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট হলেও আইডিইএ প্রকল্প-২ আউটসোর্সিং বেইজ। এ কারণে ঘোর আপত্তি পুরোনো প্রকল্পে কর্মরত ৭১ জনের। এই প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এরই মধ্যে চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরে সরকারের কাছে প্রস্তাব পর্যালোচনাধীন। এরই মধ্যে স্মার্টকার্ড উৎপাদন ও বিতরণের জন্য হাতে নেওয়া নতুন প্রকল্প আইডিইএ-২-এ যোগ দিতে চাপ দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ-হতাশা। এ প্রকল্পে যোগ দিলে তাদের রাজস্ব খাতে চাকরি অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পথ বন্ধ হবে; এ আশঙ্কা তাদের। এমনকি চাকরি রাজস্ব খাতে স্থায়ীকরণের পথ বন্ধ হবে। আজীবন পরিবার-পরিজন নিয়ে কাটাতে হবে অনিশ্চয়তায়। এ ছাড়া আইডিইএ-২ প্রকল্পে এই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যোগ দিতে অপরাগতা দেখানোয় তাদের শোকজ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবের সঙ্গে তারা দেখা করেন বলে ভুক্তভোগীরা এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন। তারা অভিযোগে সচিবকে জানান, ‘আমরা পথে বসে গেছি, জবাবে তিনি তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।’

জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম হুমায়ুন কবীর প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আইডিইএ প্রকল্প নির্বাচন কমিশনের। স্মার্টকার্ড এনআইডির বাই প্রডাক্ট। তাই এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে রাজি নই।’

আর আইডিইএ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কাশেম মো. ফজলুল কাদের প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, মানবিক কারণে প্রকল্পে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছিলাম। এর জন্য প্রকল্পের মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে ছিলাম। কোনো বিনিময় ছাড়া জুন-২২ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। তবে তাদের বেতনসহ সুযোগণ্ডসুবিধা দিতে রাজি হয়নি পরিকল্পনা কমিশন। তারা বলেছিলেন, প্রকল্পের কর্মকর্তাদের ভালোর জন্য সময় বর্ধিত করা হলেও তারা কোনো অর্থের জোগান দেবেন না। এমনকি নির্বাচন কমিশনের তহবিল থেকেও তাদের বেতন দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে তহবিল সংকটে সেটাও করা যায়নি।

তিনি বলেন, ‘প্রকল্পে কর্মরতদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের জন্য আমি স্মার্টকার্ড প্রকল্পের পিডি হিসেবে সাবেক জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব বর্তমান বেজার চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে কথা বলে দুই মন্ত্রণালয় থেকে মতামত এনেছিলাম। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে কর্মরত মুনিরার সঙ্গে এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলেছিলাম। এখন পর্যন্ত এর ইতিবাচক ফল নেই। তবে, কর্মকাণ্ড তো থামিয়ে রাখা যাবে না। সবাইকে বলছি আইডিইএ-২ প্রকল্পে যোগ দেওয়ার জন্য। যদি তারা প্রকল্প চলাকালীন রাজস্ব খাতের পথ উন্মোচন করতে সক্ষম হন, তাহলে তারা সেখানে যাবেন। এ ছাড়া এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন যাওয়া বিষয়ে কথাবার্তা চলছে। এ কারণেও প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর বিষয়ে ইতিবাচক কোনো আলোচনা নেই।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ১১ মে প্রকল্পের জনবলের গুরুত্ব অনুধাবন করে কর্মরতদের এনআইডিতে পদ সৃষ্টি ও রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সম্মতিতে সচিবালয় থেকে নীতিগত অনুমোদন করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পেশ করা হয়। এরপর গত বছরের ২৪ মে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর মতামত প্রদানের জন্য পত্র পাঠায়। বিদায়ি বছরের ২৫ আগস্ট দুই মন্ত্রণালয়ের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইসির অতিরিক্ত সচিব প্রকল্পের ৭১ জন কর্মচারীকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের নিমিত্তে ইসির বিদ্যমান অগ্রানোগ্রামে পদ সৃজন করা যেতে পারে মর্মে মতামত দেন। এটা অনুমোদন করেন সিইসি নিজেই।

প্রকল্পে কর্মরতদের অভিযোগ, প্রকল্পের জনবল রাজস্ব বাজেটে নিয়মিতকরণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি নীতিমালা অনুসারে প্রকল্পের কর্মচারী। এসব কর্মচারী প্রকল্পের কোনো পদে নিয়োগপ্রাপ্ত থেকে প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চাকরিরত কর্মচারীকে বোঝায়। তবে আইডিইএ-১ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ৩০ জুন ২০২২ পর্যন্ত চলমান অবস্থায় প্রকল্পের ৭১ জন জনবলের চাকরির মেয়াদ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে পত্র জারি করা হয়েছে।

তারা আরো বলেন, এই পত্রের পর জুন পর্যন্ত চাকরির মেয়াদ না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এমতাবস্থায় জনবল প্রকল্পের পূর্ণ মেয়াদকাল চাকরি করার সুযোগ হারানোর পাশাপাশি রাজস্ব খাতে আত্মীয়করণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন- এ শঙ্কা সংক্ষুব্ধদের। চাকরির অনিশ্চয়তার কারণে আইডিইএ-২ প্রকল্পে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তারা। বলছেন, প্রকল্পের মাঝপথে এসে চাকরি থেকে বিচ্যুত হয়ে ওই আউটসোর্সিং প্রকল্পে যোগ দিলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো রাজস্ব বাজেটে চাকরি আত্মীকরণের আবেদনটি কার্যত অকার্যকর হবে। পাশাপাশি ৭১ জন জনবলের বিগত ১৪ বছরের সব শ্রম ও স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হয়ে যাবে বলেও তাদের মধ্যে হাতাশা বিরাজ করছে। এমনকি রাজস্ব খাতে চাকরি স্থায়ী না হলে আজীবন পরিবার নিয়ে অনিশ্চয়তায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে।

এ ছাড়া চলমান আইডিইএ প্রকল্পে জনবলের বেতন-ভাতা সাড়ে তিন কোটি টাকা প্রয়োজন হয়। এসব দক্ষ জনবলকে রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত হলে ব্যয় এক কোটি বেশি বেড়ে দাঁড়াবে সাড়ে চার কোটি টাকা। তাই আইডিয়া-২ (আউটসোর্সিং) প্রকল্পে যোগদান থেকে বিরত রেখে এনআইডিতে অন্তর্ভুক্ত করে রাজস্ব খাতে চাকরি স্থায়ী করার জন্য তারা জোর দাবি জানিয়েছেন। এমনকি কমিশন সচিব বরাবর আবেদনও জানিয়েছেন তারা।

আইডিইএ-২ প্রকল্পের পিডি আরো বলেন, ‘এনআইডির কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগে স্থানান্তর হচ্ছে। এ কারণে পুরোনো প্রকল্পের কর্মকর্তাদের নতুন প্রকল্পে যোগ দিতে বলা হচ্ছে। কারণ তাদের এ প্রকল্পের জন্য মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে তারা তাদের অবস্থান থেকে চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের পথ উন্মুক্ত করতে সক্ষম হলে সেখানে তারা চলে যাবেন। এ নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close