নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১১ জানুয়ারি, ২০২২

টিকা সনদ ও অর্ধেক যাত্রীতে আপত্তি

বাস-লঞ্চ ও রেস্টুরেন্টে স্বাস্থ্যবিধি

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় বেসরকারি ক্ষেত্রে সেবা নিতে টিকার সনদ বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে গণপরিবহনে আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের বিষয়েও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। কিন্তু টিকা বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন গণপরিবহন ও দোকান মালিকরা। তারা জানিয়েছেন, এখনো দেশের মানুষের বড় অংশকে টিকা দেওয়া যায়নি। তাই এই মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্ত বিভিন্ন খাতের আর্থিক ক্ষতি বাড়াবে।

দেশের জনগণের বড় অংশের টিকা নিশ্চিতের মাধ্যমে কমপক্ষে আরো ছয় মাস পর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অনুরোধ জানিয়েছেন মালিকরা। একই সঙ্গে গণপরিবহনে আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনও করতে চান না বাস ও লঞ্চ মালিকরা। তারা বলছেন, তেলের দাম বাড়ার কারণে ভাড়া এমনিতেই বেড়ে গেছে। এরপর গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করলে ভাড়া আরো বাড়বে, যেটা সাধারণ মানুষ বহন করতে পারবে না। বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে পরিবহন ব্যবসা।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন বিশ্বব্যাপী দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত দেশে ২১ জন ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে দেশে দৈনিক শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ফের দেড় হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হারও বাড়তে বাড়তে ৬ শতাংশের বেশি গিয়ে ঠেকেছে। এই পরিস্থিতিতে গত ৩ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আন্তমন্ত্রণালয় সভা হয়। সেখানে করোনা মোকাবিলায় নানা ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটির মতো। তাদের মধ্যে সাড়ে সাত কোটির বেশি মানুষ প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৫ কোটি ৪০ লাখের মতো। এ ছাড়া বুস্টার ডোজও শুরু হয়েছে। সংক্রমণ বাড়তে থাকার মধ্যে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে টিকার সনদ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এখন থেকে রেস্টুরেন্ট, শপিং মল, প্লেন, ট্রেন ও লঞ্চে যারা উঠবে তাদের একটা টাইম দিয়ে, ডাবল ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ যেন না উঠে, সেরকম একটা চিন্তা-ভাবনার দিকে যেতে হবে।

কবে থেকে এটা কার্যকর করা হবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘একটা সময় দেওয়া হবে। টেকনিক্যাল লোকজনের সঙ্গে আলাপণ্ডআলোচনা করে একটা টাইম দিয়ে এটা করা হবে। ওমিক্রম ঠেকাতে গেলে স্ট্রিক্ট ভিউতে আপনাতে যেতে হবে।’ এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘করোনার টিকা না নিলে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না- এমন কোনো নির্দেশনা আমরা এখনো পাইনি। সরকার সিদ্ধান্ত নিলে তখন আমাদের পদক্ষেপ জানাব। তবে এই মুহূর্তে টিকার সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহন না করা ও পরিবহনের অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে অনেক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সরকার সিদ্ধান্ত নিলে তো আমাদের না মেনেও উপায় নেই।’

লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থার সিনিয়র সহসভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বলেন, ‘লঞ্চে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে টিকার সনদ বাধ্যতামূলক করা ঠিক হবে না। আমাদের জানা মতে এখনো ৮০ শতাংশ মানুষ টিকা নেয়নি। আমরা আমাদের মতো করে যাত্রীদের জরিপ চালাচ্ছি। যাত্রীদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে টিকা নিয়েছেন কি না, সনদ আছে কি না। দেখলাম ডেকের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষ এখনো টিকা নেননি। তবে কেবিনের যাত্রীদের টিকা নেওয়ার হার বেশি। সরকার আগে মানুষের টিকা নিশ্চিত করুক, তারপর না হয় সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে টিকা বাধ্যতামূলক করুক।’ বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা দেশের ১০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে পারিনি। সেখানে যদি টিকা নেওয়ার সনদ দিয়ে সব করতে হয় সেটা তো হয় না। করোনা মোকাবিলায় সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভালো, তবে টিকার দেওয়ার পরিধি আরো বাড়িয়ে তারপর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যেতে হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close