নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ নভেম্বর, ২০২১

খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে : বিএনপি

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুব বেশি ভালো নেই। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দলের সিনিয়র নেতারা। যারা এরই মধ্যে তাকে দেখে এসেছেন, তারা কেউই আশাব্যঞ্জক কিছু বলছেন না। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং গণস্বাস্থ্যের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তাকে হাসপাতালে দেখে এসে জানিয়েছেন, তার (খালেদা জিয়া) অবস্থা সংকটাপন্ন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন তিনি।

গতকাল নয়াপল্টনে দলের যৌথসভা শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, সরকার গত তিন বছরে খালেদা জিয়াকে কোনো চিকিৎসা না দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে, সরকার গণতন্ত্রকে হরণ করার জন্য এ ক্যারিশম্যাটিক নেত্রীকে বন্দি করে রেখেছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য তার পরিবার ও দল থেকে সরকারের প্রতি বারবার আহ্বান জানানো হলেও তাতে সাড়া মিলছে না। তিনি বলেন, রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসনের অবস্থা এখন ‘ভেরি ক্রিটিক্যাল’। ডাক্তার সাহেবরা মনিটরিং করছেন। তারা তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছেন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়ে একটি মহল অসৎ উদ্দেশে গুজব ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ঘিরে মঙ্গলবার রাত থেকে বিভিন্ন মহলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী রেড অ্যালার্ট জারির কথা শোনা যায়। বলা হয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ যাতে গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সেজন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এজন্য পুলিশের সব ছুটি বাতিলও করা হয়েছে। একইসঙ্গে দেশজুড়ে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। যদিও গতকাল বুধবার পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রও বলেছে, রেড অ্যালার্টের কোনো বিষয় নেই। এটি বাড়তি সতর্কতা।

সারা দেশে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারির গুঞ্জন নিয়ে ক্ষিপ্ত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, এগুলো কোথায় পান আপনারা? রেড অ্যালার্ট কোথায় পেলেন আপনারা? সরকার কি কোনো বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে? আমি দেখিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ গুজবগুলো.. কালকে (মঙ্গলবার) আপনাদের বলছি, এর কোনো ভিত্তি নেই। আজকে এখনো কিছু গুজব ছড়াচ্ছে। আমার মনে হয় যে এটা অত্যন্ত কৌশলে কোনো মহল এই গুজবগুলো ছড়াচ্ছে অসৎ উদ্দেশ্যে। তবে কারা এই গুজব ছড়াচ্ছে, তা স্পষ্ট করেননি ফখরুল। তিনি বলেন, ‘ম্যাডামের বিষয়ে আপনারা সরাসরি আমাকে ফোন করবেন, আমি আপনাদের জানাব।’

খালেদা জিয়ার অবস্থা ক্রিটিক্যাল দাবি করে আজকালের মধ্যে তাকে দেশের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রীর ছয়জন চিকিৎসক আমাকে বিস্তারিতভাবে বলেছে। আমি তাদের ফাইলে প্রত্যেকটা লেখা পড়ে দেখেছি। আপনারা জানেন যে আমি একজন চিকিৎসক। যে সমস্যা ওনার হয়েছে, এ জাতীয় রোগের চিকিৎসা অতীতে করেছি। আমাদের শরীরে দুটি বিশেষ রক্তনালি আছে। ওনার মুখ দিয়ে রক্তপাত, পায়ুপথ দিয়ে রক্তপাত হচ্ছে। ওনার ব্লাড প্রেসার নেমে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে চলে যেতে পারেন তিনি।

বিএনপি নেত্রীর রক্তপাত থামাতে রাত ৩টার সময় ছয়টি সেলাই করতে হয়েছে জানিয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘তাহলে বুঝুন কতটা ক্রিটিক্যাল হলে রাত ৩টার সময় এই কাজ করে। কিন্তু এটা করার পর কিছুটা বন্ধ ছিল, আবার ব্লিডিং শুরু হয়ে গেছে।’

খালেদা জিয়ার ‘ট্রান্স হেপাটিক লাইগেশন’ করা দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে সরকার বলুক এই স্পেশাল চিকিৎসা কোন হাসপাতালে হয়, কোন ডাক্তার করে? আমাদের দেশে বড় জোর অ্যান্ডোস্কপি করতে পারি। যদি অ্যান্ডোস্কপি করতে যাই, ব্লিডিংয়ে উনি মারা যেতে পারেন।’

এদিকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার দাবিতে বিএনপি গতকাল দেশব্যাপী ডিসি অফিসে স্মারকলিপি দিয়েছে। সকালে বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসিচব রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে ঢাকা জেলা বিএনপি ডিসি অফিসে স্মারকলিপি দেয়। জানা গেছে, শুধু গোপালগঞ্জ বাদে দেশের সব ডিসি অফিসে এ স্মারকলিপি দেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

এ দিকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ৭১ জন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং আড়াই হাজার সাংবাদিক নেতা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close