গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৫ নভেম্বর, ২০২১

হার্ডলাইনে ইসি

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সামনের ধাপগুলো পরিচ্ছন্ন এবং নিরপেক্ষ করতে এবার শক্ত অবস্থানে (হার্ডলাইনে) রয়েছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। এ লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। এজন্য সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে। কমিশনের এই চাওয়ার সঙ্গে মত আছে প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের।

ইসির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেছেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের অভিব্যক্তি হচ্ছে, জেলা প্রশাসক কিংবা ইউএনও কারো বিরুদ্ধে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠলেই কমিশন চাইলে তাকে প্রত্যাহার করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও পুলিশের ভারপ্রাপ্ত আইজিপিও বলেছেন, পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ উঠলে তাকেও প্রত্যাহার করা হবে। আমরা চাই, নির্বাচন সুষ্ঠু হোক। এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হবে। তবে র‌্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, যেকোনো ধাপে সর্বোচ্চ ৭৫০ এলাকায় নির্বিঘ্ন নিরাপত্তা দিতে সক্ষম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য; এর বেশি হলে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। আবার খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বাহিনীর বাড়তি সদস্য দেওয়া সম্ভব কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

গতকাল বুধবার বিভিন্ন সংস্থার প্রধান ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব উপস্থিত হয়েছিলেন ইসির সভায়। এতে অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সবার বক্তব্য ছিল অভিন্ন। এমনকি এমপি-মন্ত্রীদের প্রশাসনের ওপরে চাপ প্রয়োগেরও কঠোর সমালোচনা হয় সভায়।

সভায় একাধিক ব্যক্তি আইন প্রণেতাদের বিরুদ্ধে ইসির কাছে নালিশ জানিয়ে বলেন, তাদের দাবি একটাই, আমরা নৌকা এনে দিয়েছি বিজয়ী করার দায়িত্ব আপনাদের। কর্মকর্তাদের ওই বক্তব্যের জবাবে কমিশন বলেছে, জনপ্রতিনিধিদের রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়; আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে। যদি কোনো এমপি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করবে কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাও বলেন, অতীতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে; এবারও ব্যতিক্রম হবে না।

কমিশন সভা সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং নির্বাচন কমিশনের জেলা উপজেলা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন ইসির নজরদারিতে। এদের মধ্যে রয়েছেন সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের একজন করে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়া জেলার একাধিক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। কমিশন চায় নির্বাচন সুন্দর হোক।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, কমিশনের অধিক তদন্তে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগের ন্যূনতম সত্যতা মিললে সে ডিসি বা ইউএনও হোক কিংবা ওসি- তাকে প্রত্যাহার করা হবে। এক্ষেত্রে কমিশন কোনো ছাড় দেবে না। ইসির জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তারাও ‘ধোয়া তুলসি পাতা’ নয় বলে সভায় অভিযোগ উঠে। এ পর্যায়ের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনিয়ম পেলে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে কমিশন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ প্রতিদিনের সংবাদকে সভার বিষয়ে জানান, আগামী তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের যে ইউনিয়ন ও পৌরসভার নির্বাচন হবে সেখানে যাতে সহিংসতা না হয়, নিরবচ্ছিন্ন ও সুন্দর নির্বাচন হয়, কমিশন পরামর্শ দিয়েছে। আমরা বলেছি, নির্বাচন পূর্ব সময়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং মাস্তানদের দৌরাত্ম্য কমানো, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আচরণবিধি যাতে সঠিকভাবে পালন করেন সে লক্ষ্যে পরিবীক্ষণ করা, নির্বাচনের দিন উপযুক্ত প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ করা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট যাতে সমন্বয় করে কাজ করেন সেজন্য কঠোর নির্দেশনা দিতে পরামর্শ দিয়েছি। আগামী নির্বাচন যাতে সহিংসতামুক্ত, রক্তপাতহীন হয় এবং মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন সে বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, যদি মাঠ প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠে এবং এ ধরনের কোনো অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয় তাহলে নির্বাচন কমিশন যাতে তাদের বিরুদ্ধে শক্তভাবে ব্যবস্থা নেবে; সে পরামর্শ আমরা দিয়েছি।

সিলেট ও চট্টগ্রাম জোনের ডিসি এবং ইউএনওর বিরুদ্ধে পক্ষাপাতিত্বের অভিযোগ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, এটা আমার নলেজে নেই।

সভার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ করার জন্য সর্বোচ্চ সচেষ্ট রয়েছে কমিশন। সহিংসতামুক্ত ও রক্তপাতহীন নির্বাচন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। নির্বাচন ইস্যুতে কমিশনের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। কমিশন থেকে মাঠ প্রশাসনকে সেই বার্তা দেওয়া হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close