প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৪ নভেম্বর, ২০২১

ইরানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল!

ইরানে হামলা বিশেষ করে দেশটির পরমাণু কর্মসূচিকে টার্গেট করে ‘বিশেষব্যবস্থা’ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। গতকাল মঙ্গলবার তেলআবিবের রিখম্যান ইউনিভার্সিটিতে এক সম্মেলনে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট। ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে ছয় জাতি আলোচনা শুরুর আগ মুহূর্তে এমন হুশিয়ারি দেন গত জুনে ক্ষমতায় আসা নাফতালি। এরই মধ্যে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সম্ভাব্য হামলার জন্য ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত করতে বড় রকমের সামরিক বরাদ্দও দিয়েছে নাফতালি সরকার। যদিও তেহরান বরাবরই তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ দাবি করে আসছে। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।

ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা প্রায় প্রতিদিনই হুশিয়ারি দিচ্ছেন ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। ইসরায়েলি এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা সম্প্রতি বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার কোনো আগ্রহ ইসরায়েলের নেই। তবে আমরা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেব না। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অগ্রগতির আলোকে আমরা সামরিক সক্ষমতাসহ সব বিকল্প এবং পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তার বক্তব্য আরো জোরালো করলেন স্বয়ং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি। রিখম্যান ইউনির্ভাসিটিতে ওই সম্মেলনে নাফতালি বলেন, ‘ইরানিরা ইসরায়েল রাষ্ট্রকে মিসাইল দিয়ে ঘিরে রেখে, তারা তেহরানে শান্তিতে বসে আছে।’ তিনি বলেন, ‘কুদস ফোর্সের সন্ত্রাসীদের তাড়া করে লাভ নেই। আমাদের গোড়া ঘরে যেতে হবে।’

ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় জাতি আলোচনার প্রতি তিনি ইঙ্গিত করে বলেন, আমার জটিল সময়ের মুখোমুখি হয়েছি। পরিস্থিতি এমন হয়েছে আমাদের মিত্রদের সঙ্গেই মনোমালিন্য দেখা দিতে পারে।

মাত্র কয়েক দিন আগেই লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের সঙ্গে যৌথ মহড়া দিয়েছে ইসরায়েল, আমিরাত ও বাহরাইনের নৌবাহিনী। এই মহড়ার ঠিক আগেই ইসরায়েলের বন্দর নগরী ইলাতের ঠিক উত্তরে একটি মরুভূমির বিমানঘাঁটিতে বিমান মহড়া হয়, যেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে আরো সাতটি দেশের যুদ্ধবিমান প্রচ- গর্জনে আকাশ কাঁপিয়েছে। এই মহড়াগুলোর অন্যতম লক্ষ্য ইরানকে একটি কড়া সতর্কবার্তা পাঠানো। শুধু মহড়াই নয়, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সম্ভাব্য হামলার জন্য ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত করতে দেশটির সরকার ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে।

ইরান পরমাণু অস্ত্রের দিকে যাবে না এমন একটি শর্তে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ছয় বিশ্বশক্তি ২০১৫ সালে একটি পরমাণু চুক্তি করে। ওই চুক্তির আওতায় ইরানের অর্থনীতিতে আঘাত করে এমন কঠোর শাস্তি বা নিষেধাজ্ঞার অবসানের বিনিময়ে কিছু পারমাণবিক কাজ বন্ধ করে ইরান। তবে ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন, যাতে সায় ছিল ইসরায়েলের। যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি ভঙ্গের এই সুযোগে গোপনে ইরান তার পরমাণু সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যায়। ইরান জানিয়েছে, তারা ২৫ কেজি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে যা প্রায় ৬০% বিশুদ্ধ। যা একটি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য যতটুকু সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রয়োজন, তার প্রায় কাছাকাছি। এদিকে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর ঘোষণা দেন, চুক্তিটি পুনর্বিবেচনা করার। এরই মধ্যে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে ইরান ও পাঁচটি বিশ্বশক্তির (পরোক্ষভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ) মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। ওই চুক্তিটি ‘জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত। এ সম্পর্কিত পরবর্তী বৈঠকটি আগামী ২৯ নভেম্বর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত হবে। এমন পরিস্থিতিতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে অচিরেই একাকী ব্যবস্থা নিতে হয় কি না তা নিয়ে তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আর এমন সময়েই হুমকি দিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী।

ইসরায়েলের সাবেক ইসরায়েলি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইয়াকভ আমিদ্রর বলেন, ‘ইসরায়েল এমন পরিস্থিতির সঙ্গে বাঁচতে পারে না যেখানে ইরানিরা পারমাণবিক বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে এবং অচিরেই এটি ঠেকানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি এখানে বোমা ফেলা ছাড়া অন্য কোনো উপায় দেখছি না, কারণ আমি মনে করি না ইরান তাদের পারমাণবিক উচ্চাভিলাষ থেকে সহসাই পিছু হটবে। আর পারমাণবিক শক্তিধর ইরান এখনকার চেয়েও বেশি আগ্রাসী হবে।’

এদিকে ইরান এ ধরনের হামলার হুমকির প্রতিবাদে ‘মারাত্মক জবাব’ দেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে। ধারণা করা হয়, একটি যুদ্ধ বেঁধে গেলে ইরান তার নিজস্ব বাহিনীর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে থাকা তাদের সহযোগী গোষ্ঠীগুলোও ব্যবহার করবে, যেমন- লেবাননের হেজবুল্লাহ, যাদের হাজার হাজার রকেট রয়েছে, সিরিয়া ও ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী এবং গাজা উপত্যকায় জিহাদিরা।

উচ্চঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলের কিছু মানুষ মনে করে একটি হামলা যদি ইরানের পারমাণবিক উচ্চাভিলাষকে মোটে কয়েক বছর পিছিয়েও দিতে পারে, তারপরও একটি হামলা চালানো যৌক্তিক।

তবে ইরানের পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধকরণ রুখতে তেহরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের জন্য জরুরি প্রস্তুতি নিয়ে রাখার সিদ্ধান্তই সর্বোত্তম কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close