মারুফ আহমেদ, কুমিল্লা

  ২৪ নভেম্বর, ২০২১

কাউন্সিলর হত্যায় থমথমে কুমিল্লা

অস্ত্র উদ্ধার, মামলা হয়নি

রক্তের ছোপ ছোপ দাগ, গুলির খোসা পড়ে আছে মাটিতে, কার্যালয়ের চেয়ার ভাঙা। সোমবার সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, প্যানেল মেয়র ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেলের পাথুরিয়াপাড়া নিজ কার্যালয়ের বর্তমানে এ অবস্থা। এ ঘটনার পর নগরজুড়ে মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ-র‌্যাব, আতঙ্কিত নগরবাসী। সব মিলিয়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে কুমিল্লায়।

এদিকে, কাউন্সিলর হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্বার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।

অন্যদিকে, গতকাল মঙ্গলবার বাদ জোহর সোহেলের জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী ভিড় জমান নগরের পাথুরিয়াপাড়া থ্রি-স্টার এন্টারপ্রাইজ কার্যালয়ে। পরে পাথুরিয়াপাড়া ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় কাউন্সিলর সোহেলকে। এ ছাড়া কাউন্সিলরের সহযোগী নিহত হরিপদ সাহাকে বেলা ১১টায় নগরীর টিক্কাচর শ্মশানে সৎকার করা হয়।

কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল (৪৫) ও তার সহযোগী হরিপদ সাহার (৫৫) এ চাঞ্চল্যকর হত্যাকা-ের পর থেকে আতঙ্কিত নগরবাসী। সম্প্রতি নগরীতে পূর্জামণ্ডপে হামলা, মহানগর যুবলীগ নেতা জিলানী, ব্যবসায়ী আক্তার হোসেনসহ বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এরপর সোমবার জনসম্মুখে এমন হত্যাকাণ্ড হতবাক করছে নগরবাসীকে। যদিও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, ‘পূজামণ্ডপের হামলার পর নগরীতে জনপ্রতিনিধি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নগরবাসী খুবই আতঙ্কিত। এ ছাড়া এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে মাদকের বিষয়টি জড়িত। এসব হত্যাকাণ্ড আমাদের জন্য অশুভ সংকেত। ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক নেতাদের সমন্বয় করে এই সামাজিক অবক্ষয় ঠেকাতে হবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, ‘একের পর এক হামলা ও হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড কোন সাহসে সন্ত্রাসীরা ঘটাচ্ছে?’

কুমিল্লা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘কী কারণে এ ঘটনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িতরা যেই হোক দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে গণমাধ্যমকে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দুজন নিহত হওয়ার পর ওই এলাকায় পুলিশ-র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পাথুরিয়াপাড়ায় কাউন্সিলরের কার্যালয়ে ঢুকে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা সোহেল ও হরিপদকে এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় আরো ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে কুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

কাউন্সিলর সোহেল কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়রও ছিলেন। ২০১২ ও ২০১৭ সালে তিনি কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় মেয়াদে প্যানেল মেয়র ছিলেন সোহেল। হরিপদ সাহা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি, কাউকে আটক করা হয়নি। তবে জেলা পুলিশ সুপার জানান, গতকাল রাতে পুলিশের একাধিক টিম ঘাতকদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া আসামিদের ধরতে র‍্যাব ও একাধিক আইনশৃঙ্খলা সংস্থা কাজ করছে।

এদিকে, কোতোয়ালি মডেল থানাধীন সংরাইশ এলাকায় রহিম ডাক্তারের বাসার গলিতে বেলাল আহমেদের টিনশেড বিল্ডিংয়ের পাশে পরিত্যক্ত স্থানে তিনটি কালো ব্যাগের ভেতর দুটি এলজি, একটি পাইপগান, ১২ রাউন্ড গুলি, ৩০৩ রাইফেলের গুলি এবং ১৫-২০টি হাত বোমা, একটি লোহার রড ও দুটি কালো রঙের শার্ট পাওয়া যায়।

বাড়ির মালিকের মেয়ে নিগার সুলতানা ৯৯৯ নাইনে ফোন দিলে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ এসব অস্ত্র উদ্ধার করে। কুমিল্লা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে সোমবার কাউন্সিলরকে হত্যার পর ঘাতকরা অস্ত্রগুলো ফেলে গেছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close