মিজান রহমান

  ২৪ নভেম্বর, ২০২১

মাঠে মাঠে সোনালি ধানের ঘ্রাণ, বাম্পার ফলন

দেশের গ্রামীণ জনপদে এখন ছড়িয়ে পড়েছে পাকা ধানের ঘ্রাণ, মাঠে মাঠে এখন আমন মৌসুমের নানা জাতের সোনালি ধান। উৎসবের আবহে কৃষকের সঙ্গে ধান কাটায় যোগ দিয়েছেন পরিবারের অন্য সদস্যরাও। ফসলের মাঠে চলছে আমন ধান কাটার উৎসব। ফলন ভালো হওয়ায় চাষিদের পরিবারে বইছে খুশির জোয়ার। এরই মধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে ধান কাটা শেষ হবে। ফলন ভালো হওয়ায় আনন্দে রয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা। আমন ধান সংগ্রহে জোরদার করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ আমন সংগ্রহ অভিযানও। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে সময়মতো আমন ধান সংগ্রহ অভিযান সফল করতে খাদ্য বিভাগের মাঠ কর্মকর্তাদের খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এখন পর্যন্ত ৩৩ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। চলছে আমনের মাড়াই কার্যক্রম। এবার আমনের উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে। ধানের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। হাজার টাকা মণে ধান বিক্রি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমনের উৎপাদন বেশি হওয়ার প্রত্যাশা করছে।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ বলেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এবার উৎপাদন বেশি হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমনের উৎপাদন ভালো হয়েছে। এরই মধ্যে এক-তৃতীয়ংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমানের আবাদ বেশি হয়েছে। আশা করছি উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, উৎপাদনও তার চেয়ে বেশি হবে। তিনি বলেন, এবার আমন চাষে ১ লাখ ৭৫ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল। নতুন জাতে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। হাইব্রিড আবাদে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তাই এবার ফসলের উৎপাদন ভালো হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৫৬ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে। সব মিলিয়ে বলব কৃষি বিভাগের সুষ্ঠু তদারকি এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও সময়মতো রোদ-বৃষ্টি হওয়াতে এবার আমন ফসলে পোকার আক্রমণ এবং রোগবালাইয়ের প্রকোপ ছিল না। ফলে সার্বিকভাবে আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার কৃষক মোস্তফা বলেন, পুরোদমে মাঠে এখন আমন ধান কাটা চলছে। ধান কেটে মাঠেই রাখা হচ্ছে। কোনো কোনো খেতের ধান বাড়ির উঠানে উঠানো হচ্ছে। অন্যবারের তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ধানের দামও ভালো। হাজার টাকা মণে ধান বিক্রি হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার হরশী গ্রামের কৃষক হিমেল। তিনি বলেন, আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে মাড়াই এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি। যেসব জমির ধান উঠেছে সেখানে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। উনপঞ্চাশ ধান হাজার টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে। আর হাইব্রিড ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা মণে।

জানতে চাইলে নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার চন্দনপুর গ্রামের কৃষক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ধান কাটা শেষ করেছি। খেতেই রাখা হয়েছে। কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় আমনের উৎপাদন ভালো হয়েছে। আমাদের এখানে ৪৮ কেজির মণপ্রতি ধান বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায়। ধানের দামও ভালো রয়েছে। নীলফামারীর কৃষক দুজেনও একই রকম তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের এখানে বস্তা (৭৫ কেজি) ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধানের দাম মোটামুটি ভালো আছে।

মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার মহলাল গ্রামের কৃষক আজাদ মিয়া, রাজা মিয়া বলেন, এবার ৮ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। বাজারে ন্যায্যমূল্য পেলে ধানের ভর্তুকি দিতে হবে না। একই উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের ইসমাইল মিয়া, পশ্চিম ভাগ গ্রামের সামছুল মিয়া, জিল্লুর রহমান, কণা মিয়াসহ অনেকেই বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। আশা করি সঠিক বাজারমূল্য পেলে লাভবান হবেন।

এদিকে আমন ধান সংগ্রহ অভিযান জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি গতকাল সচিবালয়ে তার অফিস কক্ষ থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ?অভ্যন্তরীণ আমন সংগ্রহ অভিযান ২০২১-২২ এর রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কৃষকের আমন ফসল উৎপাদন ভালো হয়েছে। সরকার আমন ধান ও চালের যৌক্তিক দামও নির্ধারণ করেছে। এ সময় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আমন সংগ্রহ অভিযান সফল করতে খাদ্য বিভাগের মাঠ কর্মকর্তাদের আরো মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, যেসব জেলায় নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকিউরমেন্ট শতভাগ অর্জিত হবে, প্রয়োজনে তাদের আরো বরাদ্দ দেওয়া হবে। যেসব জেলায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না তাদের জবাবদিহি করতে হবে। উত্তরাঞ্চলকে শষ্যভান্ডার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অঞ্চল থেকে বেশি ধান সংগ্রহের চেষ্টা করতে হবে। ধান-চাল সংগ্রহকালে কোনো কৃষক কিংবা মিল মালিক যেন হয়রানির শিকার না হয় সেটিও নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী। মিল মালিকদের উদ্দেশে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে ধান চালের অভাব নেই। বিগত সময়ে ২৯ লাখ টন আমদানির অনুমতি দিলেও আমদানি হয়েছে ৮ লাখ টন। এই সময়ে দেশে চালের অভাব হয়নি। এতে প্রমাণ হয় চালের যথেষ্ঠ মজুদ থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ চালের মজুদ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। তিনি বলেন, মিল মালিকদের শুধু লাভের কথা চিন্তা করলেই হবে না, ভোক্তার দিকেও নজর রাখতে হবে। এ সময় তিনি মিল মালিকদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন! ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সহযোগী হওয়ার আহ্বান জানান। জানুয়ারি মাসের মধ্যে আমন সংগ্রহ সম্পন্ন করতে খাদ্য বিভাগের মাঠ কর্মকর্তাদের তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখন আবহাওয়া অনুকূলে আছে। এখনই ধান ক্রয় শেষ করতে হবে। কোনোভাবেই গা-ছাড়া ভাব বরদাশত করা হবে না বলে সতর্ক করেন মন্ত্রী। অবৈধ মজুদদারির বিরুদ্ধে মনিটরিং জোরদার হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফুড গ্রেড লাইসেন্স ছাড়া কেউ খাদ্যশস্য মজুদ করতে পারবে না। ফুড গ্রেড লাইসেন্সধারীকে পাক্ষিক ক্রয়-বিক্রয়ের প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close