প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৩ নভেম্বর, ২০২১

বিভিন্ন স্থানে অফিস ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ, বোমা হামলা

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন যুবলীগ নেতার ঘরে আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে। কুমিল্লায় নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীকে আসামি করে মামলা এবং নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর চাপ সৃষ্টির অভিযোগে পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার হয়েছে। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে নৌকার প্রার্থীকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা ও যশোরের চৌগাছায় ইউপি নির্বাচনে এজেন্টের স্বাক্ষর ছাড়া ফল ঘোষণা করার অভিযোগ উঠেছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

ভাঙ্গুড়া (পাবনা) : ভাঙ্গুড়ায় ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতার ঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। পার-ভাঙ্গুড়া ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কোরবান আলীর বাড়িতে রবিবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে।

কোরবানের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, পার-ভাঙ্গুড়া গ্রাম থেকে ইউপি সদস্য পদে হারুনুর রশীদ ও আবদুর রশিদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রবিবার রাত দেড়টার দিকে আবদুর রশিদের সমর্থক ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কোরবান আলী নিজ ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েন। সাড়ে ৩টার দিকে পেট্রোলের গন্ধে তার ঘুম ভেঙে গেলে জানালা ও ভেতরে আগুন দেখতে পান। এসময় তিনি ঘর থেকে বের হতে চাইলে বাহির থেকে দরজা আটকানো থাকায় বের হতে পারেনি। পরে তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে দরজা খুলে তাকে বের করেন এবং আগুন নেভান। আগুনে ঘরের জানালাসহ ভিতরের কিছু জিনিসপত্র পুড়ে যায়। যুবলীগ নেতা কোরবান আলী বলেন, নির্বাচন ও পূর্বশত্রুতার জের হিসেবে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।

অভিযোগের বিষয়ে হারুনুর রশীদ বলেন, আগুন দেওয়ার ঘটনাটি সাজানো নাটক। এটা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলেও তিনি দাবি করেন।

অপর প্রার্থী আবদুর রশীদ বলেন, আমার মিছিল ও সমাবেশে লোকজনকে আসতে বাধা দিয়েছিল হারুন ও তার লোকজন। তারাই ঘটনাটি ঘটাতে পারে।

ভাঙ্গুড়া থানার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মুরাদ বলেন, মৌখিক অভিযোগ পেয়ে সোমবার দুপুরে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় ঘটনার আংশিক সত্যতা পেয়েছেন। ওসি মু ফয়সাল বিন আহসান বলেন, তদন্তের পর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে প্রমাণ মিললে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে ভয়ংকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সামিউল হক লিটন। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত ঘটছে সহিংসতার ঘটনা। শহরজুড়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইতিহাসে নির্বাচনী সহিংসতার নিকৃষ্ট নজির। তার কর্মীদের ওপর হামলা ও নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরের প্রতিবাদে সোমবার সকালে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সামিউল হক লিটন বলেন, নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর সোহেল, রিপন, জাহিদুল, দুলাল, মিলন ও দিদার নামে ছয় কর্মীর ওপর হামলা চালানো হয়। এছাড়া গত ২৬ অক্টোবর নির্বাচন স্থগিত হওয়ার আগে আমার ৯টি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ২০ নভেম্বর বিদিরপুরে নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে। ২১ নভেম্বর রাতে শহরের মসজিদপাড়া, শিবতলা মোড়, পুরাতনবাজার ও ধানুর মোড়ের মোট চারটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে। এদের চিহ্নিত করার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। আমরা দেখতে চাই পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে।

এ প্রসঙ্গে পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মোতাওয়াক্কিল রহমান বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হক লিটনের তিনটি অভিযোগ পেয়েছি। প্রতিটি অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশ সুপারকে বলা হয়েছে। এছাড়া আচারণবিধি তদারকিতে যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন তার কাছেও অভিযোগের কপি পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। ভোটাররা যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পারেন সেটি নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেব।

চৌগাছা (যশোর) : চৌগাছায় ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে ভোট গণনায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রিসাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে। সোমবার বেলা ১১টায় প্রেস ক্লাব চৌগাছায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। ইউপি নির্বাচনে রেজাল্টশিটে এজেন্টের স্বাক্ষর ছাড়া ফলাফল ঘোষণা করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়।

তৌফিকুজ্জামান বলেন, গত ১১ নভেম্বর ধূলিয়ানী ইউনিয়ন থেকে ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। উজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রফিকুল ইসলাম। ভোট গণনা শেষে তিনি নিজের ইচ্ছামতো ফলাফল ঘোষণা করেন। আমার এজেন্ট ভোট গণনায় সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি ভোট গণনার জন্য অনুরোধ করলে প্রিসাইডিং অফিসার কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ অফিসার ও তালা মার্কার এজেন্টদের দিয়ে আমার এজন্টদের হুমকি দিয়ে রুম থেকে বের করে দেন। ভোট গণনায় রেজাল্ট শিটে চেয়ারম্যান প্রার্থী চারজন, সংরিক্ষত মহিলা আসনের তিনজন ও সাধারণ সদস্য চারজনের কারো এজেন্টদের স্বাক্ষর নেই। রেজাল্ট শিটে ভোটার উপস্থিতির তারতম্য রয়েছে। এ ঘটনায় অন্য প্রার্থীর এজেন্টরা প্রতিবাদ করলে প্রিসাইডিং অফিসার ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মফিজুর রহমানের নেতৃত্বে আমার কর্মী ও সমর্থকদের লাঞ্ছিত করেন। দায়িত্বরত রিটার্নিং অফিসার মেহেদী হাসানকে অবহিত করলে তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ফের ভোট গণনার দাবি জানান।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, নির্বাচনের ফল ঘোষণা করার পর আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে হবে না । অভিযোগ করতে হবে ট্রাইব্যুনালে। এজন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

এ বিষয়ে প্রিসাইডিং অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের দিন কেউ পাস করে আনন্দে ছিল আবার কেউ ফেল করে দুঃখে ছিল। এজন্য রেজাল্ট শিটে স্বাক্ষর করানো হয়নি। স্বাক্ষর ছাড়া তিনি কিভাবে রেজাল্ট ঘোষণা করলেন এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তোর তিনি দিতে পারেননি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আয়ুব হোসেন, পোলিং এজেন্ট রফিকুল ইসলাম, আফগান হোসেন, যুবলীগ নেতা ফারুক আহমেদ প্রমুখ।

কুমিল্লা : কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মানিক সরকারের তিনটি নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারসহ হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘটনার প্রতিকার চাওয়ায় উল্টো প্রার্থী মানিককে প্রধান আসামি করে তার ২৭ নেতাকর্মীর নামে থানায় মামলা হয়েছে। এছাড়া গৌরীপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওই প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ওই প্রার্থী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। পুলিশ কর্মকর্তা সাইফুলকে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। সোমবার দুপুরে মানিক সরকার গৌরীপুর এলাকায় তার নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন।

কুমিল্লা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, গৌরীপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক প্রার্থীর অভিযোগসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে তাকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শ্যামলী রানী অধিকারীকে লক্ষ্য করে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে তার কয়েকজন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন বলে তারা দাবি করেন। রবিবার রাত সাড়ে ১০টায় পথসভা শেষে বাড়ি ফেরার পথে কৃষ্ণনগর শ্মশানঘাট এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। তবে, পুলিশ বলছে এ ঘটনায় কেউ আহত হননি।

কালিগঞ্জ থানার ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, বোমা হামলার কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি। ফাঁকা জায়গায় একটি বিকট শব্দ হয়েছিল। সেখান থেকে কিছু জালের কাটি ও কাঁচের গুঁড়ো পাওয়া গেছে। তবে কেউ আহত হননি।

এদিকে, এ ঘটনায় শ্যামলী রানীর কর্মী-সমর্থকরা সোমবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে মানববন্ধন করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close