নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ নভেম্বর, ২০২১

৫৯৬ দিন পর মৃত্যুশূন্য বাংলাদেশ

দেশে নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) নতুন করে কেউ মারা যায়নি। ফলে গত বছরের ৩ এপ্রিলের পর থেকে দীর্ঘ ৫৯৬ দিন পর প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে মৃত্যুশূন্য দিন দেখল বাংলাদেশ। তবে নতুুন করে সংক্রমণ ধরা পড়েছে ১৭৮ জনের দেহে। এ নিয়ে করোনা শনাক্ত হলো ১৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮৯ জনের। আর মৃত্যু অপরিবর্তিত রইল ২৭ হাজার ৯৪৬ জনে। গতকাল শনিবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, একদিনে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১৯০ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৮৯১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৫ হাজার ১০৭টি নমুনা। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১ দশমিক ১৮ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৭ লাখ ৬ হাজার ৬৬২টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। প্রতি ১০০ জনে সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং মৃত্যুহার ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীন থেকে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। গত বছরের ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এরই মধ্যে বিশ্বে অর্ধকোটিরও বেশি প্রাণ কেড়ে নেওয়া করোনাভাইরাস বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। আর প্রথম মৃত্যু হয় ওই বছরের ১৮ মার্চ। সেই বছর সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল ৬৪ জনের। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় চলতি বছর জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু-হু করে বাড়তে থাকে। ২৮ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

চলতি বছরের গত ৭ জুলাই প্রথমবারের মতো দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৫ ও ১০ আগস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যু হয়, যা মহামারির মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। কয়েকদিন ২ শতাধিক মৃত্যু হয়। এরপর গত ১৩ আগস্ট মৃত্যু ২০০-এর নিচে নামা শুরু করে। দীর্ঘদিন শতাধিক থাকার পর গত ২৮ আগস্ট মৃত্যু ১০০-এর নিচে নেমে আসে। এখন শনাক্তের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। গত দুই মাসে উল্লেখযোগ্য হারে কমতে কমতে সংক্রমণ ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ১০৭টি কোভিড পরীক্ষার বিপরীতে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে শতকরা ১ দশমিক ১৮ জনের মধ্যে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো দেশে টানা দুই সপ্তাহ নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে সে দেশের করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে ধরা হয়। দেশে দুই মাসের অধিক সময় ধরে করোনা সংক্রমণ ১ থেকে ২ শতাংশের মধ্যে। সরকারের লক্ষ্য এই হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জনগণের সচেতনতার পাশাপাশি সরকারের টিকাদান কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এরই মধ্যে সরকার ২১ কোটি টিকা কেনা হয়েছে। দেশে ১২ কোটি টিকা আসছে। এরই মধ্যে ৯ কোটি টিকা প্রয়োগ হয়েছে। আগামী বছর মার্চের মধ্যে ১২ কোটি মানুষের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

অবশ্য জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসার পর আবারও বিপর্যয়কর অবস্থা তৈরি হতে দেখা গেছে। তাই সংক্রমণের নিম্নমুখী প্রবণতা ধরে রাখতে যত দ্রুত সম্ভব ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। সংক্রমণ শূন্যের কোটায় না আসা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসার পর আবারও বিপর্যয়কর অবস্থা তৈরি হতে দেখা গেছে। তাই সংক্রমণের নিম্নমুখী প্রবণতা ধরে রাখতে যত দ্রুত সম্ভব ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মোশতাক হোসেন বলেন, ‘আমাদের সংক্রমণ কমেছে, ভালো কথা। এটা বজায় রাখতে হলে শনাক্ত রোগীর ব্যবস্থাপনাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এতে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের এখন রোগী শনাক্তকরণের বিষয়ে জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে সংক্রমিত রোগীর ব্যবস্থাপনা, টিকাদান কর্মসূচিসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

মোশতাক হোসেন আরো বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক জায়গায় সংক্রমণ কমে যাওয়ার পরে আবার সেটা বেড়েছে। ভাইরাসের রূপ পাল্টানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে অবহেলার কারণে এমনটা হয়েছে। আর তাই অবশ্যই সংক্রমণ পরিস্থিতি এভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close