নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ নভেম্বর, ২০২১

জাতীয় সেমিনারে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

ঢাকাকে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে দেওয়া হবে না

রাজধানী ঢাকাকে আর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ড্যাপ রিভিউ-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। একই সঙ্গে ড্যাপ চূড়ান্ত করার পর তা বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, নগর-পরিকল্পনাবিদ, আবাসন ব্যবসায়ী, স্থপতিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। গতকাল শনিবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আয়োজিত খসড়া বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) (২০১৬-২০৩৫) চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে জাতীয় সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান।

মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা শহরকে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বসবাস অযোগ্য নগরীতে রূপান্তর করতে পারি না। সব আর্থসামাজিক শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রয়োজন, জীবনযাত্রার উন্নয়ন ও মৌলিক বিষয়গুলো এবারের ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই লক্ষ্যে এরই মধ্যে নগর-পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, পেশাজীবী, পরিবেশবাদী, সুশীলসমাজের প্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলরসহ সব পক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের পরামর্শ ও মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পরিকল্পনা তৈরির সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উচ্চপর্যায়ে নীতিমালার পরিকল্পনাগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ঢাকাকে আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন ও বসবাসযোগ্য করতে নানা উদ্যোগের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব শহর তৈরির লক্ষ্যে পরিকল্পনায় অনেকগুলো বৃহত্তম, জলকেন্দ্রিক ও ইকোপার্ক, খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ এবং রিং রোডের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

ড্যাপের আহ্বায়ক জানান, ‘আমরা কেউ সুউচ্চ ভবনের বিপক্ষে নই। এমনকি আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজেও উঁচু ভবনের পক্ষে। কিন্তু এটি করার জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা বিশেষ করে ইউটিলিটি সার্ভিস, রাস্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্রসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে করতে হবে। পাঁচ-সাত কাঠা জমির ওপর উঁচু ভবন এবং যেগুলো নিয়ে অসামঞ্জস্য রয়েছে সেগুলো নিয়ে রিভিউ করা হবে। আর এ পরিমাণ জায়গায় কতটুকু ভবন করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। আমরা শহরটাকে বসবাসের অযোগ্য বানাতে পারি না।’

তিনি আরো বলেন, যেসব আবাসিক এলাকায় আগেই শিল্প, কল-কারখানা গড়ে উঠেছে, সেগুলো যদি পরিবেশবান্ধব হয়, জনমানুষের ভোগান্তির কারণ না হয়, তাহলে সেই এলাকাকে মিশ্র এলাকা হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হবে। শুধু তা-ই নয়, এসব এলাকায় অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্যকে উৎসাহিত করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

‘ড্যাপ চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে আজকের এই সেমিনারে সব পক্ষের এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শগুলো বিবেচনায় নিয়ে আমরা বসব এবং যৌক্তিক বিষয়গুলো অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এসব পরামর্শ ও মতামত আমাদের আরো বেশি সমৃদ্ধ করবে এবং কাজ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। দেশের সব গুণী মানুষের মেধা-বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকলে বঙ্গবন্ধুর দর্শন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা অসম্ভব নয়।’

অনেকেই বলেন পরিকল্পনা করা সহজ। বাস্তবায়ন অনেক কঠিন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পরিকল্পনা করা খুব সহজ নয়। পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন দুটিই চ্যালেঞ্জিং কাজ। সবার হাতকে একত্র করতে পারলে সব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা সম্ভব।

মন্ত্রী বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে তারা দেশকে নিয়ে ভাবেনি। তাদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তাদের শাসনামলে দেশটাকে ধ্বংস করেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দেশকে উন্নতসমৃদ্ধ করার জন্য ২০৪১ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন।

পরে, গাজীপুরের মেয়র বরখাস্ত হওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রকে দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি মেয়র পদে থাকবেন কী থাকবেন না সেটা আইন পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা ২০৩৫-এ ঢাকা কোন পর্যায়ে যেতে পারে সেটা বিবেচনা করে প্ল্যান সাজিয়েছি। কোনো এলাকায় যেন সুযোগ-সুবিধার তুলনায় অধিক জনবসতি তৈরি না হয় সেজন্য আমাদের পরিকল্পনায় রাস্তা প্রশস্তের আলোকে ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মানুষের হাঁটার রাস্তা এবং নৌপথকে কাজে লাগানোর সুযোগকে আমরা বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। পরিবেশকে প্রাধান্য দিয়ে উন্নয়নকে এবারের ড্যাপে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’

এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার এবং রাজউক চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী।

এ ছাড়া সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, দেশের শীর্ষস্থানীয় নগর-পরিকল্পনাবিদ, আবাসন ব্যবসায়ী, স্থপতি, পরিবেশবিদ, প্রকৌশলী ও এফবিসিসিআই সভাপতি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close