জিয়াউদ্দিন রাজু

  ২৮ অক্টোবর, ২০২১

ইউপি নির্বাচনে আ.লীগের মনোনয়ন তৃতীয় ধাপেও বিতর্কিতরা

স্থানীয় সরকারে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে তৃতীয় ধাপে নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের মতো তৃতীয় ধাপেও বিতর্কিত অনেকেই দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন রাজাকার পরিবারের সদস্য, বিএনপি নেতা, হত্যা মামলার আসামি, মাদক ও সন্ত্রাসী মামলার আসামিও রয়েছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এর জন্য জেলা-উপজেলার নেতাকে দায়ী করছেন। যেসব জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতার স্বাক্ষরে বিতর্কিতদের নাম কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডে এসেছে তাদের একাধিকবার সতর্কও করা হয়েছে।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী কারো কারো মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল বুধবার তিনি বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দুর্বিষহ অবস্থায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন না পেলেই একে অপরকে রাজাকার বা রাজকারপুত্র বানাতে ব্যস্ত সবাই। তারপরও কিছু সত্য ঘটনা রয়েছে। ওই বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ তবে তৃণমূলে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অভিযোগ, এর পেছনে ‘অর্থ ও ব্যক্তিগত পছন্দ’ কাজ করেছে। তৃতীয় ধাপে মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন এমন আট তৃণমূল নেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেছেন, উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের স্বাক্ষরে প্রস্তাবিত নামগুলো কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডে আসে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা যাদের নামে স্বাক্ষর করছেন তাদের কর্মকা-ের বিষয়ে অবশ্যই জানেন। জেনে-বুঝে চিহ্নিত বিতর্কিতদের নাম কেন্দ্রে পাঠানোর কী কারণ হতে পারে? অভিযুক্ত প্রার্থীদের নামে যারা স্বাক্ষর করছেন সেখানে হয়তো অর্থনৈতিক লেনদেন হয়ে থাকতে পারে। নাহলে অভিযুক্তদের কেন মনোনয়ন বোর্ডে নাম আসবে। এর বাইরে নিজেদের অবস্থান ভারি করতে অনেকেই পছন্দের প্রার্থীদের নাম কেন্দ্রে পাঠান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন হত্যা মামলার আসামি সাইফুল আসলাম। তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন সাত দলীয় নেতা।

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে রাজাকারপুত্র শিকদার মিজানুর রহমানকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শহরের চৌরঙ্গী এলাকায় মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা। বিনোদপুরের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ডের ব্যানারে গতকাল দুপুর ১২টায় মহম্মদপুর সদর ও বিনোদপুর ইউনিয়নের দুই শতাধিক মানুষ শিকদার মিজানুর রহমানকে চেয়ারম্যান প্রার্থী করার প্রতিবাদে এই মানববন্ধন করেন।

তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন রেজাউল করিম। ২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ সালে তিনি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিও ছিলেন তিনি।

দুইবারের ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিকে বাদ দিয়ে একসময়ের বিএনপি নেতা রেজাউল করিমকে মনোনয়ন দেওয়ায় ত্যাগী নেতাকর্মীরা হতাশ। তার বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিতর্কিতরা মনোনয়ন নিশ্চিত করতে জেলা ও কেন্দ্রের এক শ্রেণির নেতাকে ম্যানেজ করছেন। এ কারণে মনোনয়ন বোর্ডের কাছে সঠিক তথ্য যাচ্ছে না। কোনো কোনো ইউপিতে ত্যাগীদের বাদ দিয়ে বিতর্কিতদের একক প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

যশোর বাঘারপাড়া ও মণিরামপুরে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত দুই ইউনিয়নে যারা নৌকা প্রতীক পেয়েছেন তারা দুজন রাজাকারপুত্র বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা হলেন বাঘারপাড়া উপজেলার ৩ নম্বর রায়পুর ইউনিয়নের বিল্লাল হোসেন, অন্যজন মনিরামপুরের ১১ নম্বর চালুয়াহাটি ইউনিয়নের আবুল ইসলাম। রাজাকারপুত্রদের নৌকা প্রতীক দেওয়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে দলের তৃণমূলে। ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড বরাবর পৃথক দুটি দরখাস্তের মাধ্যমে তাদের মনোনয়ন বাতিলের জন্য স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতারা আবেদন জানিয়েছেন।

বরগুনার পাথরঘাটার চরদোয়ানী ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমান জুয়েল। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে যুবদল থেকে আসা এনামুল হোসাইনকে। ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং চাকসুর সাবেক জিএস বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগার হাফিজুর রহমান ফিরোজ মনোনয়ন দৌড়ে টিকতে পারেননি। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষোভ জানিয়েছেন।

বিতর্কিতদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘মনোনয়ন বোর্ড গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট ও প্রার্থীর বিষয়ে যাচাই-বাছাই করেই চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু হাজার হাজার মনোনয়ন দিতে গেলে দু-একটি এদিক-সেদিক হতে পারে, ভুলও হতে পারে। তবে মনোনয়ন বোর্ডে কারো নাম আসার ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে আসতে হয়। এক্ষেত্রে বিতর্কিতদের বিষয়ে উপজেলা-জেলা আওয়ামী লীগ যাচাই-বাছাই করলে তারা বাদ পড়ে যাওয়ার কথা।’ তিনি আরো বলেন, বিতর্কিতদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ এলে তাদের অভিযোগগুলো দেখা হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close