নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ অক্টোবর, ২০২১

জাতীয় প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্মরণ করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ যেকোনো জাতীয় প্রয়োজনে এই বাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সর্বদা প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ জাতীয় যেকোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিব রেজিমেন্ট ও রওশন আরা রেজিমেন্টের কাছে নতুন পতাকা হস্তান্তর এবং সেনাবাহিনীর ১০টি ইউনিটকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। তিনি গতকাল বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অপারেশন কোভিড শিল্ড’-এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সদস্যরা করোনা প্রতিরোধকল্পে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের আত্মত্যাগ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে সম্মান ও মর্যাদা, যা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অত্যন্ত উজ্জ্বল করেছে।

অনুষ্ঠানের শেষে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সেনাপ্রধান চট্টগ্রামের হালিশহরের আর্টিলারি সেন্টার অ্যান্ড স্কুলে ৪, ১২ ও ২০ ফিল্ড, ৫ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ৫ ও ৭ রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন, ১ ও ২ সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন, আর্মি অ্যাভিয়েশন গ্রুপ এবং এনসিও অ্যাকাডেমিকে জাতীয় পতাকা প্রদান এবং মুজিব রেজিমেন্ট ও রওশন আরা রেজিমেন্টকে আর্টিলারির নতুন পতাকা দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠান থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালামও জানানো হয়। আবহমানকাল থেকেই যুদ্ধের ময়দানে জাতীয় মর্যাদার প্রতীক ‘পতাকা’ বহন করার রীতি প্রচলিত আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলেন, ‘তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ ‘জাতীয় পতাকা’ আপনাদের হাতে তুলে দেওয়া হলো। এই বিরল সম্মান ও গৌরব অর্জন করায় আমি ৪, ১২ ও ২০ ফিল্ড, ৫ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ৫ ও ৭ রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন, ১ ও ২ সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন, আর্মি অ্যাভিয়েশন গ্রুপ এবং এনসিও অ্যাকাডেমিকে আন্তরিক অভিবাদন জানাই।

সরকার প্রধান বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত মুজিব ব্যাটারির কামানের গোলাবর্ষণের মধ্য দিয়ে ঘোষিত হয়েছিল ‘রেজিমেন্ট অব আর্টিলারি’র গৌরবময় পথচলা। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে মুজিব ব্যাটারি ১ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তিনি বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্মলাভ করা এই রেজিমেন্টকে জাতির পিতার নামানুসারে ‘মুজিব রেজিমেন্ট আর্টিলারি’ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, আজ মুজিব রেজিমেন্ট আর্টিলারির কাছে ‘নতুন পতাকা’ হস্তান্তর করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।

স্বাধীনতাযুদ্ধে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রওশন আরার আত্মত্যাগ ছিল বীর নারী মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণার উৎস উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বকে সম্মানিত এবং স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর জন্মলাভ করে ‘রওশন আরা ব্যাটারি’। রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারির কাছে ‘নতুন পতাকা’ হস্তান্তর করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।

তিনি এ সময় ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লা মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে প্রথম ব্যাচের ক্যাডেটদের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে জাতির পিতার দেওয়া ভাষণের চুম্বক অংশ উদ্ধৃত করেন। জাতির পিতা বলেন, ‘আমার মনে আজ যে কি আনন্দ, তোমাদের আমি তা ভাষায় প্রকাশ করে বলতে পারব না। যখন আমি আগরতলা মামলায় বন্দি ছিলাম, যখন পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি জেলে বন্দি ছিলাম, তখন ভাবতে পারিনি যে একদিন এখানে তোমাদের প্যারেড হবে।’ ‘এই মিলিটারি অ্যাকাডেমি এক দিন বিশ্বব্যাপী নাম করবে এবং সারা বিশ্বের মানুষ এই মিলিটারি অ্যাকাডেমি দেখতে আসবে’ বলে তিনি সে সময় আশা প্রকাশ করে যান মর্মে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা আমাদের মিলিটারি অ্যাকাডেমিকে সেভাবেই প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি।

সরকার প্রধান বলেন, আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করে চলছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থার মান উন্নয়নের জন্য ফাইবার অপটিক ব্যবহারের পাশাপাশি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে, যা জোন সদর দপ্তর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন ভয়েস ও তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করবে।

এনসিও অ্যাকাডেমির উন্নয়নে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অ্যাকাডেমি চৌকস এনসিওদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জুনিয়র লিডারে রূপান্তরিত করেছে। আমি আশাবাদী যে এই অ্যাকাডেমি তার গুণগত উৎকর্ষ বজায় রেখে ভবিষ্যতেও প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করবে।

প্রধানমন্ত্রী পরিশেষে কোভিড-১৯-এর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে একটি সুশৃঙ্খল ও মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ উপহার দেওয়ার জন্য অংশগ্রহণকারী এবং ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে আয়োজন করায় সেনাবাহিনী প্রধান, জিওসি আর্টডক, জিওসি ২৪ পদাতিক ডিভিশন এবং কমান্ড্যান্ট আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুলকেও তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close