মো. শাহ আলম, খুলনা

  ২৭ অক্টোবর, ২০২১

খুলনায় ইউপি নির্বাচন

আ.লীগের মনোনয়ন পেলেন বিতর্কিত দুই ব্যক্তি

খুলনার রূপসা ও তেরখাদা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিতর্কিত দুই ব্যক্তি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই দুজনই বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান। তারা হলেন রূপসা উপজেলার শ্রীফলতলা ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত আল-বদর নেতা হারুন সরদারের বড় ভাই মো. ইসহাক সরদার এবং তেরখাদা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বহিষ্কৃত নেতা এফ এম অহিদুজ্জামান।

এদিকে, এসব বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা অবিলম্বে ওই দুই নেতাকে দেওয়া নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। এর মধ্যে এফ এম অহিদুজ্জামানকে স্থায়ী বহিষ্কার করে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন তৃণমূলের একাংশের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। এর আগে ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় নৌকার প্রার্থী হিসেবে তাদের দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। এই দুই প্রার্থীকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দলের খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী। তিনি বলেছেন, দলের মনোনয়ন বোর্ড এফ এম অহিদুজ্জামানকে মনোনয়ন দিয়েছে। তবে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে কি না কেন্দ্র থেকে এ ধরনের কোনো চিঠি তার কাছে আসেনি। যদিও প্রত্যাহার হয়ে থাকলে সে সংক্রান্ত দলীয় চিঠি তার কাছে আসার কথা।

অপর প্রার্থী মো. ইসহাক সরদারের বিষয়ে অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী বলেন, তার ভাই হারুন সরদার আল বদর ছিল কি না সেটি তার জানা নেই।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৯ জুলাই দুপুরে তেরখাদা ইউনিয়ন পরিষদে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়। চাল বিতরণ অনুষ্ঠানে তেরখাদা উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ও তেরখাদা সদর ইউপির চেয়ারম্যান এফ এম অহিদুজ্জামান ভিজিএফের চাল নিতে আসা জনগণের সামনে বক্তব্য দেন। বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্থানীয় সংসদ সদস্য (খুলনা-৪) আবদুস সালাম মুর্শেদীকেও সংযুক্ত রাখেন। ইউপি চেয়ারম্যানের বক্তব্য শেষে আবদুস সালাম মুর্শেদীও ঢাকা থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে অহিদুজ্জামান তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদীর প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশের বাইরে বড় কোনো অনুষ্ঠানে যান, তখন আমাদের এমপি আবদুস সালাম মুর্শেদী প্রধানমন্ত্রীকে ডোনেশন (টাকা) দেন।’ তিনি তার বক্তব্যে আরো বলেন, ‘খুলনা জেলার অনেকে আমাদের এমপি সালাম মুর্শেদীর টাকায় সংসদ সদস্য হয়েছেন।’

তার এই বক্তব্য নিয়ে এলাকার সাধারণ জনগণসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এর জেরে গত ২৬ জুলাই খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ কার্যনির্বাহী কমিটির সভা আহ্বান করা হয়। ওই সভায় তেরখাদা উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ও ৫ নম্বর তেরখাদা সদর ইউপি চেয়ারম্যান এফ এম অহিদুজ্জামানকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী আরো বলেন, মনোনয়ন তালিকায় এফ এম অহিদুজ্জামানের নাম আমরা কেন্দ্রে পাঠাইনি। একজন বিতর্কিত ব্যক্তি কীভাবে মনোনয়ন পেলেন সেটি আমরা জানি না। পার্লামেন্টারি বোর্ড যেটি ভালো বুঝেছেন সেটিই করেছেন।

তবে এ বিষয়ে এফ এম অহিদুজ্জামান দাবি করেন, কেন্দ্র আমার ওপর সন্তুষ্ট বলেই মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি আওয়ামী লীগ করি। সেই দলের সম্মান ধরে রাখতে জনগণের জন্য কাজ করে যাব।

সংবাদ সম্মেলন : তেরখাদা উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি এফ এম অহিদুজ্জামান দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিবাদে রবিবার খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্যে উপজেলা যুবলীগ সদস্য শেখ শামীম হাসান নৌকার প্রার্থী এফ এম অহিদুজ্জামানকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করে তার মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবি জানান।

শ্রীফলতলা ইউনিয়ন : রূপসা উপজেলার শ্রীফলতলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ইসহাক সরদার আল-বদর পরিবারের একজন সদস্য বলে অভিযোগ করেছেন উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা সহকারী কমান্ডার মো. শহিদ জমাদ্দার। তিনি বলেন, ‘শ্রীফলতলা ইউনিয়নের ১৯৭১ সালের ৩৪ জন যুদ্ধাপরাধী তালিকার ১নং ক্রমিকে তার ভাই হারুন সরদারের নাম রয়েছে। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ খুলনা জেলা ইউনিট কমান্ডের জেলা কমান্ডার সরদার মাহাবুবার রহমান ও রূপসা থানা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার কাজী মো. ইয়াহইয়া স্বাক্ষরিত তালিকাটি ২০১০ সালে করা হয়।’ তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধাপরাধ পরিবারের সদস্য ইসহাক সরদারকে আওয়ামী লীগের দেওয়া মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানান।

বিষয়টি অস্বীকার করে মো. ইসহাক সরদার বলেন, তার ভাই হারুণ সরদার রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ২০০১ সালে মারা যান। আর যুদ্ধাপরাধী তালিকাটি করা হয় তার মৃত্যুর ৯ বছর পর। সংশ্লিষ্টরা প্রভাবিত হয়ে এ তালিকায় তার ভাইয়ের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন অভিযোগ করে তিনি বিষয়টি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অবহিত করেছেন বলেও উল্লেখ করেন।

তবে প্রভাবিত হয়ে তালিকায় হারুণ সরদারের নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি অস্বীকার করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ খুলনা জেলা ইউনিট কমান্ডের জেলা কমান্ডার সরদার মাহাবুবার রহমান বলেন, ‘তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে উপজেলা যুদ্ধাপরাধী যাচাই-বাছাই কমিটিই এ তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে জমা দেন। এ তালিকায় তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই ইসহাক সরদারের ভাই হারুন সরদারের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এখানে প্রভাব বিস্তারের কোনো সুযোগ ছিল না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close