গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৭ অক্টোবর, ২০২১

সচিব হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে যারা

শূন্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রক পদে বসার জন্য কয়েক দিন ধরে চলছে লবিং-গ্রুপিং; আছে জোর তদবিরও। তবে অনধিকার চর্চার কারণে যোগ্য, সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা শেষ মুহূর্তে এসে পিছিয়ে পড়েন কি না-এ শঙ্কায় অনেকে রয়েছেন আতঙ্কে। আবার ডিসেম্বরের মধ্যে শূন্য সচিব পদে কারো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ বাড়ছে কি না; তা নিয়েও শঙ্কায় আছেন পরবর্তী ধাপের সচিবের দৌড়ে এগিয়ে থাকা অনেকে। তবে সব শঙ্কা ও সংশয় নিয়ে আধাডজন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে পদোন্নতি হচ্ছে শিগগিরই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফ্রান্স সফরের আগে সব পরিষ্কার হবে। জানা যাবে সচিব হিসেবে কাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো; আর কাদের কপাল পুড়ল এ যাত্রায়। খবর জনপ্রশাসন সূত্রের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ছয়টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব পদ শূন্য আছে। এগুলো হচ্ছে পরিকল্পনা বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ, ভূমি আপিল বোর্ড, ভূমি সংস্কার বোর্ড, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। শূন্য এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকাদের মধ্যে আছেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, রাজউকের চেয়ারম্যান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন মহিলা কর্মকর্তা, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার। এ ছাড়া অগ্রাধিকার তালিকায় নাম শোনা যাচ্ছে ১১তম ব্যাচের সৎ, দক্ষ, মেধাবী ও সরকারের অনুগত এক কর্মকর্তার; যিনি সদ্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বদলি হয়েছেন। বর্তমানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাও সচিব হিসেবে অগ্রবর্তী তালিকায় রয়েছেন। তিনি ১১তম ব্যাচের প্রথম দিনের চৌকস কর্মকর্তার মধ্যে অন্যতম বলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন।

এদিকে, গত ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৬টি সচিব পদ শূন্য হয়েছে। এর বাইরে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আরো ৪ জন সচিব অবসরে যাচ্ছেন। তারা হলেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমান (৩০ ডিসেম্বর), বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (সচিব) মুনশি শাহাবুদ্দীন আহমেদ (৫ নভেম্বর), কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম (৩১ ডিসেম্বর) এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মান্নান (১৪ নভেম্বর)।

এ ছাড়া আগামী বছরের প্রথম ৬ মাসে অবসরে যাবেন যারা : স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ (২২ মে), স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া ও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব) সুলতানা আফরোজ (৯ এপ্রিল), জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন (১২ জানুয়ারি), প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল (৭ ফেব্রুয়ারি), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন (৩০ জানুয়ারি) এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ের সচিব মোছা. আছিয়া খাতুন (৩ জানুয়ারি)।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, শূন্য হওয়া সাপেক্ষে পদোন্নতি রুটিন দায়িত্ব। তবে সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্যতা, মেধা, চৌকস ও সততা অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এরই মধ্যে কয়েকজন সচিবের পদ শূন্য হয়েছে; সেখানে পদোন্নতির কাজ চলছে। আশা করছি, শিগগিরই সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আবার ডিসেম্বর এবং নতুন বছরের প্রথম ৬ মাসের মধ্যে আরো কয়েকজন সচিব অবসরে যাবেন। পর্যায়ক্রমে যোগ্য কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গত ৯ সেপ্টেম্বর তৃতীয়বারের মতো গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন শহীদ উল্লা খন্দকার। তিনিসহ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কর্মরত রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শেখ ইউসুফ হারুন, রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়–য়া, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোসাম্মত নাজমানারা খানুম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা।

মন্ত্রী, এমপিদের তদবির : শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত সচিব) নাসির উদ্দিন আহমেদকে সচিব পদে পদোন্নতি দিতে আধাসরকারি চিঠি দিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবু বকর সিদ্দিককে সচিব পদে নিয়োগের জন্য আধাসরকারি চিঠি দিয়েছেন ওই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। এ ছাড়া সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. তরুণ কান্তি শিকদারকে সচিব পদে পদোন্নতি দিতে সুপারিশ এসেছে নেত্রকোনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিলের কাছ থেকে এবং পিআরএল শুরু হওয়ার আগে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আহমদকে সচিব/গ্রেড-১ প্রদান করতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সপক্ষে প্রায় অভিন্ন যুক্তি দেখিয়েছেন।

নাসির উদ্দিন আহমেদের পক্ষে বলা হয়েছে-তিনি বিগত দিনে সচিবালয় ও মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন পদে অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্যজনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সচিব হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব যোগ্যতা অর্জন করেছেন। আরেকজনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সরকারের সচিব হিসেবে নিয়োগ পেলে উন্নয়নের মহাসড়কে ধাবমান বাংলাদেশের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সমর্থ হবেন।

যদিও ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মচারী তার চাকরি-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রভাব খাটাতে পারেন না। ‘সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা, ১৯৭৯’-এর ৩০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারী তাহার চাকরি-সংক্রান্ত কোনো দাবির সমর্থনে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সরকার বা কোনো সরকারি কর্মচারীর উপর রাজনৈতিক বা অন্য কোনো বহিঃপ্রভাব খাটাইতে বা খাটাইবার চেষ্টা করিতে পারিবেন না।’ একই আইনে তদবির করার জন্য সংসদ সদস্যদের কাছে যাওয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আইনটির ২০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারী কোনো ব্যাপারে তাহার পক্ষে হস্তক্ষেপ করার জন্য সংসদ সদস্য বা অন্য কোনো বেসরকারি ব্যক্তিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনুরোধ জানাইতে পারিবেন না।’ ১৯৫৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জারি করা এক স্মারকেও কোনো সরকারি কর্মচারী তার চাকরি-সংক্রান্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য কোনো মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যের কাছে তদবির করতে পারবেন না বলে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

এসব উদাহরণ সামনে থাকায় সচিব পদে আর যেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দেওয়া হয়, এজন্য উঠে পড়ে লেগেছেন নিয়মিত ব্যাচের কর্মকর্তারা। বিশেষ করে যারা পরবর্তী সচিব হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। সচিবদের অবসরে যাওয়ার বিষয়টি সামনে রেখে এই তৎপরতা আরো বেড়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close