প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৫ অক্টোবর, ২০২১

পায়রা সেতু উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী

দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা হচ্ছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার দেশব্যাপী একটি শক্তিশালী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেলেও একটি শ্রেণি এই উন্নয়ন দেখে না। তারা নানা ঘটনার জন্ম দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়। কয়েকটি ঘটনা মাঝে মধ্যে ঘটছে। এগুলো ইচ্ছা করেই ঘটানো হচ্ছে। একই সঙ্গে অপপ্রচারও চালানো হচ্ছে। এদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সচেতন হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল রবিবার পটুয়াখালীর লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর নির্মিত চার লেনের সেতুর উদ্বোধন করেন। একই অনুষ্ঠানে তিনি ঢাকাণ্ডসিলেট এবং সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নতীকরণ প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করেন। খবর বাসস এবং পটুয়াখালী ও সিলেট প্রতিনিধি।

ঢাকায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পায়রা সেতুতে সশরীরে উপস্থিত থেকে যদি উদ্বোধনের এই আনুষ্ঠানিকতা সারতে পারতাম, যদি গাড়ি চালিয়ে সেতু পার হতে পারতাম, তাহলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম। কিন্তু মহামারির মধ্যে দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা হচ্ছেএকরকম বন্দি জীবনে তা সম্ভব হলো না।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে আর কখনো কেউ পেছনে টানতে পারবে না। কিছু কিছু ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটছে, ঘটানো হচ্ছে। ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হচ্ছে, সেটা আপনারা নিজেরাই টের পান। যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। সে সঙ্গে অপপ্রচারও চালানো হচ্ছে। আমরা যতই উন্নতি করি, ভালো কাজ করি, তারা দেশের বদনাম করতে ব্যস্ত।

আসলে এদেশে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক সেটা তারা চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হলে তাদের একটু কদর বাড়ে, সে জন্য তারা এই উন্নয়নটা দেখে না; বরং ধ্বংস করতে চায়।

ঢাকাণ্ডবরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের দুমকি উপজেলার লেবুখালী এলাকার পায়রা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে পায়রা সেতু। সেতুটি চালু হওয়ায় বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সঙ্গে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত সড়ক পথ ফেরিবিহীন হয়ে গেছে। অতীতে বরিশাল থেকে মহাসড়ক পথে কুয়াকাটা পৌঁছতে হলে ছয়টি স্থানে ফেরি পার হতে হতো। এর আগে পাঁচটি সেতুর পর ছয় নম্বরে পায়রা সেতু নির্মিত হওয়ায় এ অঞ্চলে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হলো।

সরকারের প্রথম মেয়াদে সর্বপ্রথম লাউকাঠি নদীতে পটুয়াখালী সেতু নির্মাণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে কীর্তনখোলা নদীর উপর শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতু (দপদপিয়া সেতু), খেপুপাড়ায় আন্ধারমানিক নদীর উপর শহীদ শেখ কামাল সেতু, হাজীপুরে সোনাতলা নদীর উপর শহীদ শেখ জামাল সেতু এবং মহিপুরে খাপড়াভাঙ্গা নদীর উপর শহীদ শেখ রাসেল সেতু নির্মিত হয়েছে। আর আজ পায়রা নদীর ওপর দৃষ্টিনন্দন পায়রা সেতু নির্মিত হলো। এর ফলে এখানে পর্যটনের সুযোগ যেভাবে বৃদ্ধি পাবে তেমনি তার সরকার পায়রায় যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগও সৃষ্টি হবে। আর সমগ্র বাংলাদেশেও একটা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি হয়ে যাবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুুল মোমেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের সচিব মো. নজর¤œল ইসলাম প্রকল্পগুলোর ওপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস গণভবন থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

অনুষ্ঠানে প্রকল্পগুলোর ওপর ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়। প্রকল্পের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালী এবং সিলেট প্রান্তে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত প্রশাসন, আওয়ামী লীগ নেতা এবং জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি, কেন্দ্র্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এমপি, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। আর পটুয়াখালী প্রান্তে ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ কামাল হোসেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল, পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এস এম আকতার¤œজ্জামান, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মো. আবদুস সবুর, বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ, সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য সৈয়দা র¤œবিনা আক্তার মিরা, পটুয়াখালী ১ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহজাহান মিয়া, পটুয়াখালী-২ আসনের আ স ম ফিরোজ, পটুয়াখালী-৩ আসনের এস এম শাহাজাদা, পটুয়াখালী-৪ আসনের মহিবুর রহমান মুহিব, সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য কাজী কানিজ সুলতানা হেলেন, বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদেক আবদুল্লাহসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সুধীজন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বরিশাল এবং পটুয়াখালীর সংযোগ স্থাপন করবে পায়রা সেতু। আর নদীর নামে একটা সেতু হলে নদীটারও একটা পরিচয় পাওয়া যাবে। যে কারণে এই নামটাই আমি পছন্দ করেছি। আর পায়রা শান্তির প্রতীক। কাজেই, এই সেতু হওয়ার মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের আর্থিক উন্নতি হবে। মানুষের মনে শান্তি আসবে এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের ফলে তারা ভালোভাবে বাঁচতে পারবে। খাল, বিল, নদী-নালার দক্ষিণাঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে। কাজেই, এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নতি যত দ্র¤œত আমরা করতে পারি ততই মানুষের জীবন মান উন্নয়নের সহায়ক হবে। ফলে, এর একটা বিরাট প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়বে এবং দেশটাকে আমরা আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।

এদেশের যতটুকু উন্নয়ন সেটা আওয়ামী লীগ সরকারই করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বাংলাদেশে একটি যোগাযোগের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য ’৯৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেই আওয়ামী লীগ সরকার ‘ধরলা সেতু’ নির্মাণ করে। যমুনা নদীর ওপর রেল যোগাযোগসহ বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই করা।

ঢাকাণ্ডসিলেট করিডোর সড়কের উন্নয়ন কাজ ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সারা দেশে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছি। সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও রেলস্টেশন আমরাই করে দিয়েছি। এবার সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক সড়ক সুন্দরভাবে করে দিচ্ছি। প্রবাসীরা দেশে এসে দেখবেন, এটা দেশের রাস্তা, নাকি লন্ডনের রাস্তা। দেশেই লন্ডনের রাস্তা দেখতে পারবেন প্রবাসীরা। যোগাযোগটা হলে পরে দেশ অনেকটা এগিয়ে যাবে।

উদ্বোধনকালে সিলেট থেকে সরাসরি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, হবিগঞ্জের সংসদ সদস্য মিলাদ গাজি, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান, জেলা প্রশাসক এম কাজি এমদাদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

সূত্র মতে, ঢাকাণ্ডসিলেট-তামাবিল জাতীয় মহাসড়ক দেশের অন্যতম গুর¤œত্বপূর্ণ সড়ক করিডোর। এ সড়কটি রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও দেশের অন্য অংশের সঙ্গে বৃহত্তর সিলেট বিভাগের সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর ও পর্যটন সমৃদ্ধ সিলেটের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থিত তামাবিল একটি প্রসিদ্ধ স্থলবন্দর। এ মহাসড়ককে কেন্দ্র করে কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে এ মহাসড়কটি অত্যন্ত গুর¤œত্বপূর্ণ। সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে বাংলাদেশ সরকার ও এডিবির অর্থায়নে সাসেক ঢাকাণ্ডসিলেট করিডোর উন্নয়ন প্রকল্প এবং বাংলাদেশ সরকার ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) অর্থায়নে সিলেট-তামাবিল সড়ক পৃথক এসএমভিটি লেনসহ ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close