মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, পটুয়াখালী

  ২৪ অক্টোবর, ২০২১

সাগর সঙ্গমে পায়রা সেতু

বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কের লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর নির্মিত পায়রা সেতু আজ রবিবার সকাল ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন স্বপ্নের পায়রা সেতু। উদ্বোধনের পরপরই যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পায়রা ফোরলেনের এই সেতুটি। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত সেতুটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতু।

পায়রা সেতু প্রকল্প পরিচালক আবদুল হালিম জানান, সেতুটি উদ্বোধনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। সাজ সাজ রব বিরাজ করছে সেতুর উভয় পাড়ে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। সেজন্য সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে বিশাল প্যান্ডেল প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে পটুয়াখালী জেলার পাঁচজন সংসদ সদস্য ছাড়া বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

পায়রা সেতু প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীর লেবুখালী নদীর ওপর পায়রা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। যার ৮২ ভাগ অর্থ বহন করছে কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট এবং এপেক ফান্ড। ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই শুরু হওয়া এ সেতুর এরই মধ্যে শতভাগ কাজ সম্পন্ন। ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের সেতুর উভয়পাড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক রয়েছে। নদী শাসনের কাজও প্রায় সম্পন্ন।

এই সেতুতে হেলথ মনিটরিং সিস্টেম ব্যবহার করার কারণ হলো নানা সুবিধা পাওয়া। ভূমিকম্প, বজ্রপাতসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা ওভারলোডেড গাড়ির কারণে ক্ষতিএড়াতে পূর্বাভাস মিলবে এই মনিটরিং সিস্টেম থেকে। এ ছাড়া এটি দেশের দ্বিতীয় ব্রিজ, যা এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল সিস্টেমে তৈরি করা হয়েছে। পায়রা সেতু নির্মাণে নদীর তলদেশে বসানো হয়েছে ১৩০ মিটার দীর্ঘ পাইল, যা দেশে সর্ববৃহৎ। ৩২টি স্প্যানের মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেস্ট পাইলসহ দশটি পিয়ার, পাইল ও পিয়ার ক্যাপের ওপর নির্মিত। এ ছাড়া ১৬৭টি বক্স গার্ডার সেগমেন্ট রয়েছে এটিতে। যার ফলে দূর থেকে সেতুটিকে ঝুলন্ত মনে হবে। জোয়ারের সময় নদী থেকে সেতুটি ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচুতে থাকবে। চার লেনের সেতুটির উভয় পাশে ১ হাজার ২৬৮ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর সেতুটি সড়ক যোগাযোগে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। স্বল্প সময়ে বরিশাল টু কুয়াকাটা ভায়া পটুয়াখালী যাতায়াত সহজতর হবে। তাছাড়া বরিশাল থেকে পটুয়াখালী আসতে সর্বোচ্চ সময় লাগবে মাত্র ১ ঘণ্টা। আর মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় বরিশাল থেকে কুয়াকাটায় যাওয়া যাবে।

পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা টু কুয়াকাটা ফেরিবিহীন সড়ক যোগাযোগে নবদিগন্ত সূচনা হবে বলে মনে করেন পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, সেতুটি চালু হওয়ায় পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দর, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইপিজেডে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ দেশের অর্থনীতিতে সেতুটি ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে পর্যটন খাতেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে সেতুর টোল নির্ধারণ নিয়ে পরিবহন সেক্টরসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৮ মার্চ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের (টোল অধিশাখা) উপসচিব ফাহমিদা হক খান স্বাক্ষরিত এক গেজেটে সেতুটির টোল নির্ধারণ করা হয়। অথচ ওই সেতুর নিচে লেবুখালী নদী পারাপারে ফেরি ভাড়ার তুলনায় সেতুর টোল নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় কয়েকগুণ বেশি।

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মো. রিয়াজ উদ্দিন মৃধা জানান, যদি টোল পুনর্নির্ধারণ করা না হয় সেক্ষেত্রে বরিশাল টু পটুয়াখালী রুটের পরিবহন ব্যবসা বন্ধ হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। কারণ লস দিয়ে পরিবহন ব্যবসা করা যাবে না। সরকার নির্ধারিত বরিশাল টু পটুয়াখালীর যে ভাড়া ৮০ টাকা সেটি বাড়ানো হোক আর না হয় টোল নির্ধারণ কমানো হোক। তিনি আরো বলেন, লেবুখালী ফেরির ভাড়ার থেকে সাতগুণ বেশি টোল নির্ধারণ করা হয়েছে এই সেতুর। এর প্রভাব তো পর্যটক খাতেও পরবে বলে আমি মনে করি। তিনি জানান, বিষয়টি পুনর্নির্ধারণের জন্য এরই মধ্যে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বরিশাল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন জানান, ফেরি ও সেতুর টোলের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। সড়ক পরিবহন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে টোল নির্ধারিত হয়ে থাকে। এতে আমাদের কোনো হাত নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close