রংপুরের পীরগঞ্জে স্থানীয় এক হিন্দু যুবকের ইসলাম ধর্ম নিয়ে ‘আপত্তিকর’ পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুকে ফলোওয়ার বাড়াতে উসকানিমূলক পোস্ট দেন সৈকত মন্ডল। এরপর হামলা স্থলের কাছাকাছি এক মসজিদ থেকে মাইকিং করেন তার সঙ্গী রবিউল ইসলাম। মাইকিংয়ে তিনি তৌহিদি জনতাসহ ধর্মপ্রাণ মানুষকে প্রতিরোধের ডাক দেন। এরপর সৈকত মন্ডল নিজে একটি উঁচুস্থানে দাঁড়িয়ে উত্তেজনাকর বক্তব্য দিয়ে হামলায় অংশ নেন। এরা দুজনই এই হামলার সহযোগী।

রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লীতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার অন্যতম উসকানিদাতা সৈকত মন্ডল (২৪) ও সহযোগী মো. রবিউল ইসলামকে (৩৬) গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব। সম্প্রতি গাজীপুরের টঙ্গী থেকে এ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল শনিবার দুপুরে কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ফেসবুকে ফলোয়ার প্রায় তিন হাজার। ফলোয়ার আরো বাড়াতে ও ব্যক্তিগত ইমেজকে প্রচার করতেই ‘এ মুহূর্তে গ্রাম পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া সংবাদ, হিন্দুদের আক্রমণে এক মুসলিমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে’ মর্মে উসকানিমূলক পোস্ট দেয় সৈকত মন্ডল। সেই পোস্টের সূত্র ধরে হামলাস্থলের ঠিক কাছাকাছি একটি মসজিদ থেকে মাইকিং করেন রবিউল ইসলাম। তিনি তৌহিদি জনতাসহ ধর্মপ্রাণ মানুষকে প্রতিরোধের ডাক দেন। পরে নিজে একটি ঢিবির ওপর দাঁড়িয়ে উত্তেজনাকর বক্তব্য দিয়ে হামলায় অংশ নেন।

মঈন বলেন, সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টায় কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ফেনী এবং রংপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির অপচেষ্টা করছে চক্রান্তকারীরা।

র‌্যাব জানায়, গত ১৭ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্টকে কেন্দ্র করে রংপুরে পীরগঞ্জের বড় করিমপুর গ্রামে দুর্বৃত্তরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই ঘটনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের অভিযোগে রংপুরে পীরগঞ্জ থানায় তিনটি মামলা হয়।

মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র‍্যাব-১৩ এর একটি আভিযানিক দল শুক্রবার রাতে টঙ্গী এলাকা থেকে রংপুরের পীরগঞ্জে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অন্যতম হোতা সৈকত মন্ডল (২৪) ও রবিউল ইসলামকে (৩৬) গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পীরগঞ্জে ঘটনায় তারা সংশ্লিষ্টতার তথ্য দিয়েছে।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অরাজকতা সৃষ্টি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের লক্ষ্যে হামলা-অগ্নিসংযোগসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার ও মাইকিং করে হামলাকারীদের জড়ো করে বলে জানায়।

গ্রেপ্তার সৈকত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণকে উত্তেজিত করে তোলে। সে হামলা ও অগ্নিসংযোগে অংশগ্রহণে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করে। তার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। সে গ্রেপ্তার রবিউলকে মাইকিং করে লোকজন জড়ো করতে নির্দেশনা দিয়েছিল বলে জানায়। ঘটনার পরপর সে আত্মগোপনে চলে যায়।

গ্রেপ্তার সৈকত মন্ডল রংপুরের একটি কলেজের স্নাতকে অধ্যয়নরত। সে বিভিন্ন সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা উসকানিমূলক এবং বিভ্রান্তিকর পোস্ট প্রদান ও শেয়ার করত।

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, এর আগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন পরিতোষ ও উজ্জ্বল। ফেসবুকে উসকানিমূলক মূল পোস্টটি দিয়েছিলেন পরিতোষ। পরিতোষ আর উজ্জ্বলের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক ছিল। পরিতোষ পোস্ট দিয়ে উজ্জ্বলকে বলে ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট দিলে তোর কেমন লাগে! এরপর পোস্টটি সে ডিলিট করলেও উজ্জ্বল তা কপি ও সেভ করে। এরপর সেটিই উজ্জ্বল নিজের ফেসবুক পেজ থেকে প্রচার করে। এরপর সেই পোস্টটি পিক করে সৈকত। সৈকতের মাধ্যমে সেটি জেনেই রবিউল মসজিদে মাইকিং করে ও হামলার নেতৃত্ব দেয় এবং নিজেও অংশ নেয়।

"