গাজী শাহনেওয়াজ, শিবালয় (মানিকগঞ্জ) থেকে ফিরে

  ২০ অক্টোবর, ২০২১

দুর্যোগে বিপদের বন্ধু পারিবারিক সাইলো

২৩ জেলার ৫৫ উপজেলায় ৩ লাখ সাইলো পাবে মানুষ

যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সংকটে দুস্থ ও অসহায় মানুষের নিরাপদ খাদ্য সংরক্ষণে বন্ধুর মতো পাশে থাকবে আওয়ামী লীগের ‘পারিবারিক সাইলো’। দেশের ৩ লাখ সুবিধাবঞ্চিত পরিবার এ সুবিধা পাবে। এ সাইলো টেকসই ও খাদ্য সংরক্ষণে নিরাপদ নিশ্চয়তার প্রতীক বলে জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, টানা ২ বছর পানি, ধান কিংবা চাল যেকোনো খাবারকে শুষ্ক ও সতেজ রাখতে সহায়ক। আর ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্যোগপ্রবণ উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য এটি হবে আশীর্বাদ।

সূত্র মতে, একটি সাইলোর মূল্য ১ হাজার ৮০০ টাকা, যা দুর্যোগপূর্ণ এলাকার মানুষ পাচ্ছেন বিনামূল্যে। এই সাইলোতে ধান রাখতে পারবেন ৪০ কেজি (এক মণ), ৫৬ কেজি চাল এবং ৭০ লিটার পানি। মাটিতে পুঁতে রেখে খাদ্য সংরক্ষণ করতে পারবেন উপকারভোগীরা। হঠাৎ বন্যা, প্রকৃতিক দুর্যোগ এবং বন্যায় সব কিছুই ভাসিয়ে একটি পরিবারকে নিঃস্ব করে দেওয়া বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিয়মে পরিণত হয়েছে। তবে আপদকালীন দুর্যোগের জন্য খাদ্য মজুত রাখা এই সাইলো ত্রাণকর্তার মতো কাজ করবে, যা খাদ্যের অভাব নিবারণে ভূমিকা রাখবে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশের আট বিভাগের ২৩ জেলার ৫৫ উপজেলা, সিটি ও পৌরসভায় ৩ লাখ পরিবারকে একটি করে পারিবারিক সাইলো দিচ্ছে সরকার। গতকাল মানিকগঞ্জের তিনটি উপজেলার (শিবালয়, দৌলতপুর ও হরিরামপুর) ১৩ হাজার পরিবারকে একটি করে বিতরণ করা হয়েছে। শিবালয় উপজেলা কমপ্লেক্সে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার উপস্থিত হয়ে সাইলো বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় এমপিরা উপস্থিত ছিলেন।

সরকারের এই সাইলো পেয়ে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী ও অসহায় মানুষের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটেছে। সাইলো পাওয়া কয়েক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা বলেন, এই সাইলো আমাদের বিপদের বন্ধু। আপদকালীন দুর্যোগে পেটের ক্ষুধা নিবরণে ভূমিকা রাখবে। একজন জামারুন। তিনি টেপরা গ্রামের অধিবাসী। বলেন, দুর্যোগে আমাদের ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যায়। খাবার সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অভাবে দিন কাটে। লোকে বলছে এই প্লাস্টিকের পটে খাবার রাখলে সহজে নষ্ট হয় না, এটা পেয়ে আমি অনেক খুশি। কারণ এটার মধ্যে জিনিস রেখে বিপদের সময় আমরা খামু। পাশেই দাঁড়ানো খোদেজা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাড়িতে পানি উঠে চাল-ডাল যা থাকে সব ভিজিয়ে দিয়ে যায়। এই ড্রামে চাল রেখে বন্যার সময় খেতে পারব। এটা পেতে কোনো টাকা লাগেনি। আমরা গরিব মানুষ; এটা পেয়ে আমাদের খুব উপকার হয়েছে। আর নারায়ণ চন্দ্র দাস বলেন, এটা নতুন জিনিস। খাদ্য জমিয়ে রেখে দুর্যোগের সময় চলা যাবে। জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এই সাইলোগুলো আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে। আপনি বাড়ির যেকোনো স্থানে পুঁতে রেখে তার মধ্যে খাদ্য সংরক্ষণ করলে দুর্যোগের পরও খাদে?্যর গুণগত মান অটুট থাকবে। সবচেয়ে বড় কথা, বীজ ধান সংরক্ষণ করা যায় এর মধ্যে। উপকূলীয় ও অল্পবৃষ্টিতেই প্লাবিত হওয়া এলাকার মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে এই সাইলো। দুই বছর পর্যন্ত খাদ্য সংরক্ষণ করা যায়। সারা দেশে এর আগে পাঁচ লাখ সাইলো বিতরণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় প্রকল্পের অধীন আরও তিন লাখ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এ বিতরণ চলছে।

শিবালয়ের এমপি নাইমুর রহমান দুর্জয় প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এটি সংকটকালীন অসহায় মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা সংরক্ষণ ও নিশ্চিত করার প্রকল্প। বিশেষ করে আমাদের নদীভাঙন এলাকার মানুষের জন্য এই খাদ্য সংরক্ষণের সুরক্ষিত সাইলো খুবই কাজে দেবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা তিনি দুস্থ-অসহায় মানুষের কথা চিন্তা করে এ ধরনের চিন্তাশীল প্রকল্পের মাধ্যমে অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর ব্যবস্থা নিয়েছেন।

সারা দেশের আট বিভাগের ২৩ জেলার ৫৫ এলাকায় এই বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মানিকগঞ্জের তিনটি উপজেলা (শিবালয়, হরিরামপুর ও দৌলতপুর ), টাঙ্গাইলের একটি (ভূঁঞাপুর), রাজবাড়ীর চারটি (সদর, কালুখালী, গোয়ালন্দঘাট ও পাংশা), পালগঞ্জের দুটি (টুংগিপাড়া ও কোটালীপাড়া), সাতক্ষীরার দেবহাটা, জামালপুরের তিনটি উপজেলা, শেরপুরের দুটি, চট্টগ্রামের দুটি, কক্সবাজারে দুটি, নোয়াখালীর দুটি এবং চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরে একটি করে, কুড়িগ্রামে দুটি, নওগাঁয় চারটি এলাকায়, রাজশাহী ও নাটোরে একটি করে, পাবনা ও সিরাজগঞ্জে দুটি করে, সুনামগঞ্জে চারটি, বরিশালের হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ ও মুলাদি, পটুয়াখালীর দশমিনা ও রাঙাবালী, বরগুনার আমতলী ও বামনা এবং ভোলার তজুমদ্দিন, লালমোহন, দৌলতখান, চরফ্যাশন ও মনপুরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close