নিজস্ব প্রতিবেদক
বিবৃতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
হামলার পেছনে স্বার্থান্বেষী মহল
দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্য একটি ‘স্বার্থান্বেষী মহল’ এই হামলা চালাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে অভিযোগ তোলার পাশাপাশি সরকারের তৎপরতা তুলে ধরে বলা হয়, সন্দেহজনক রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্য নির্দিষ্ট স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর পূর্বপরিকল্পিত এসব আক্রমণের ব্যাপারে সরকার সজাগ রয়েছে।
স্বার্থান্বেষী মহলের ব্যাখ্যায় বলা হয়, এটা দুঃখজনক যে স্থানীয় যে গোষ্ঠী ৫০ বছর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তারা এখনো সহিংসতা, ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তারা একটি ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসবে অনবরত হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক ও বহুত্ববাদী অবস্থানকে হেয় করার চেষ্টা চালাচ্ছে। দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের একটি মন্দিরে কোরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে কয়েকটি মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। এরপর চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয় হিন্দুদের উপাসনালয়, ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
গত সোমবার এক বিবৃতিতে হিন্দুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ এবং অপরাধীদের খুঁজে বের করতে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানান ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি বলেন, ধর্মীয় সংবেদনশীলতাকে লক্ষ্য করে উসকানি ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করা একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। দেশে সংখ্যালঘুদের এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার এসব ঘটনার সুস্পষ্ট নিন্দা জানিয়েছে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ভেতরে-বাইরের প্রতিক্রিয়া গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিচ্ছে। বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলার এসব ঘটনায় ৭১টি মামলা হয়েছে এবং ৪৫০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে এরই মধ্যে জানিয়েছে পুলিশ।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দুর্গাপূজা শেষ করার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়কে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি তাদের পাশে দাঁড়ানোয় সাধারণ মানুষকে অভিবাদন জানানো হয় বিবৃতিতে।
বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের একসঙ্গে বসবাসের বিষয়টি তুলে ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখায় সচেষ্ট। এই ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সব গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে পরবর্তী জটিলতা ও ভুল বোঝাবুঝি দূর করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে সরকার।
"