প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে স্বাধীনভাবে। ইসলাম ধর্মেও সে কথা বলা আছে। আমাদের সংবিধানেও সে নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমাদের লক্ষ্যও সেটাই। গতকাল মঙ্গলবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুক্ত হন।

মহানবী (সা.) উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নবী করিম (সা.) বলেছেন- ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না।’ কাজেই সে বাড়াবাড়ি যেন কেউ না করে, সেটাও আমরা চাই এবং এদেশে সব মানুষ যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে, আর যেন রক্তক্ষয়ী ঘটনা না ঘটে। ভৌগোলিক সীমারেখায় বাংলাদেশ ছোটো হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে অনেক বড় দেশ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই প্রত্যেকটি মানুষের জীবন যেন সুন্দর হয়, উন্নত হয়। প্রত্যেকটা মানুষ যেন অন্ন, বস্ত্র, পায়, উন্নত জীবন পায়। যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল, সেটা যেন আমরা পূরণ করতে পারি।’

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ের বিচার প্রক্রিয়া বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুনিদের প্রতি খালেদা জিয়ার এই যে পক্ষপাতিত্ব এটার কারণটা কী? কারণটা খুব স্পষ্ট। কারণ খুনি মোশতাকের সঙ্গে জিয়াউর রহমান সম্পূর্ণভাবে এই খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল। এই রাসেলকে সর্বশেষে হত্যা করা হয়। বলা হয়েছিল, ওই ছোট্ট শিশুটি যেন না বাঁচে। এই নির্দেশটা কে দিয়েছিল? কারা দিয়েছিল? সব শেষে- সবচেয়ে এটাই কষ্টের।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখনো চেষ্টা করেছি, এখনো চেষ্টা করি এই দেশের শিশুরা তাদের লেখাপড়া, তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, তারা যেন নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে। আজকে যেমন আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ, সেটা তৈরি করার জন্য তাদের প্রস্তুত করা, তাদের ট্রেনিং দেওয়া, সব রকম ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘শিশুর নিরাপত্তা, শিশু অধিকার আইন তো জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে করে দিয়ে গেছেন। প্রাথমিক শিক্ষাটাকে অবৈতনিক করে দিয়ে গেছেন, বাধ্যতামূলক করে দিয়ে গেছেন। কাজেই আমার বাবার আদর্শ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দেশের শিশুরা যেন আর এই নির্মমতার শিকার না হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, এখনো আমরা দেখি, সেই নির্মমতা এখনো মাঝে মাঝে দেখি। পরবর্তীতেও আমরা দেখেছি। কিন্তু এটা যেন না হয়। দেখেছি, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে কীভাবে হত্যা করা হচ্ছে জ্যান্ত মানুষগুলো, শিশুকে পর্যন্ত। এই খালেদা জিয়া বিরোধী দলে থাকতে অগ্নিসন্ত্রাস করে চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে। বাবা দেখেছেন নিজের চোখের সামনে আগুনে পুড়ে সন্তান মারা যাচ্ছে। সে রকম নিষ্ঠুর ঘটনা তো বাংলাদেশে ঘটেছে। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্য এই বাংলাদেশের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এইটুকু চাইব, এখানে মানবতার প্রশ্ন যারা তোলে, তারা যেন এ ঘটনাগুলো ভালোভাবে দেখে যে, বাংলাদেশে কী ঘটল। কিন্তু আমরা সরকারে আসার পর থেকে আমাদের প্রচেষ্টা- কোনো শিশু রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে না, টোকাই থাকবে না। তাদের যেন একটা ঠিকানা থাকে, তারা যেন একটু ভালোভাবে বসবাস করতে পারে। আমাদের একটাই লক্ষ্য- এই দেশের প্রতিটি গৃহহীন মানুষ একটা ঘর পাবে। প্রতিটি মানুষ শিক্ষা পাবে। চিকিৎসা পাবে। ভালোভাবে বাঁচবে। প্রতিটি শিশু তার যে মেধা, তার যে জ্ঞান, তার যে বুদ্ধি, সেটা যেন বিকশিত হতে পারে। বাংলাদেশকে তারা যেন সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সে চেষ্টাই আমি করে যাচ্ছি।’

"