নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ অক্টোবর, ২০২১

সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধে কঠোর অবস্থানে সরকার

দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার। এর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সহিংসতার বিষয়টি আলোচনা এলে সরকারপ্রধান এ নির্দেশনা দেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে মন্ত্রিসভার এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আজকের কেবিনেট মিটিংয়ে এটা স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে, খুব কঠোর অ্যাকশনে যেতে হবে। যারা যারা জড়িত আছে তাদের অবশ্যই ধরতে হবে। পাশাপাশি জনগণকে বলতে হবে যে রিঅ্যাকশন করা যাবে না। কেউ যদি কোরআনের অবমাননা করে, কোরআন আমাকে কোনো অথরিটি দেয়নি যে আমি গিয়ে তার ধর্মের কোনো কিছু গিয়ে ভাঙব।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমি প্রতিবাদ করতে পারি, সরকারের কাছে দাবি করতে পারি যে, ধরে বিচার করে তাকে শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য ইসলামে। এটা হলো ফিতনা। ফিতনা হলো সবচেয়ে বড় অপরাধ।’ আনোয়ারুল ইসলাম আরো বলেন, ‘হোম মিনিস্টিারের সঙ্গে আমরা গত কয়েক দিন ধরে এটা হ্যান্ডেল করছি। আজও হোম মিনিস্টারকে বলা হয়েছে, ইনস্ট্রাকশন দেওয়া হয়েছে টু টেইক অ্যাকশন। যারা এগুলোর সূত্রপাত করল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের ধরতে হবে। পাশাপাশি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যারা আছেন, তাদের বলা হয়েছে জনগণের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য যে, ছোটোখাটো কোনো কিছু কেউ করলে রিঅ্যাকশন করতে হবে- এটা ইসলাম অনুমোদন করে না।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, যারা এর সঙ্গে জড়িত আছে, তাদের অবশ্যই ধরতে হবে। পাশাপাশি জনগণকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে, রিঅ্যাকশন করা যাবে না। কুমিল্লা ও রংপুরের হামলার ঘটনায় জড়িতদের খুব দ্রুত খুঁজে বের করা (ফাইন্ড আউট) হবে।’

ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আজকে অলরেডি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, ইনস্ট্যান্ট অ্যাকশন নিতে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, যারা এগুলোর সূত্রপাত করল, তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেবেন। পাশাপাশি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বলা হয়েছে, ছোটোখাটো টুইস্টিং কেউ করলেই এভাবে রিঅ্যাকশন করা যাবে না। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ফেসবুক বন্ধের বিষয়ে কেবিনেট মিটিংয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়মিত ব্রিফ করছেন, সেখানে ইন্টেলিজেন্সও কাজ করছে।

এদিকে, কুমিল্লা ও রংপুরে হামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত খুঁজে বের করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইনস্ট্যান্ট অ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে জরুরি সভাও করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিষয়টি নিয়ে পৃথক সভা করেন ১৪ দলীয় নেতাদের সঙ্গেও। এ সভায় রাশেদ খান মেনন, দিলীপ বড়ুয়া, মাহবুবুল আলম হানিফসহ অন্য নেতারা এসেছিলেন সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক ঘটনার বিচারের দাবি নিয়ে।

এদিকে র‍্যাবের প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন শীর্ষক কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘যারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, উসকানি দিচ্ছেন, তাদের খুব শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে। তাদের জবাব দিতেই হবে। কুমিল্লার মূল অভিযুক্ত পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাকেও শিগগির গ্রেপ্তার করা হবে।’

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কুমিল্লার পূজাম-পে যে ঘটনা ঘটিয়েছে, তাকে আমরা শনাক্ত করেছি। সে বারবার তার অবস্থান পরিবর্তন করছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাকে আমরা ধরে ফেলতে পারব। কুমিল্লায় কেন সে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা আমরা জানতে পারব।’

দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের একটি মন্দিরে কোরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে কয়েকটি মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। এরপর চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয় হিন্দুদের উপাসনালয়, ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলার এসব ঘটনায় ৭১টি মামলা এবং ৪৫০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মন্ত্রিসভায় ‘জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন : মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, জাকাত তহবিল গঠন করা হবে। তহবিলের অর্থ সরকারিভাবে সংগৃহীত হবে। প্রবাসী বাংলাদেশি, বিদেশি যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অর্থ যেকোনো তফসিলি ব্যাংকের জাকাত ফান্ডে জমা দিয়ে জাকাত আদায় করতে পারবেন। আর একটি বোর্ড থাকবে। ধর্মমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন। জাকাত বোর্ডে সদস্য থাকবে ১০ জন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করে দেওয়া হবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বা ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে। কালেকশন ও ডিস্ট্রিবিউশনটা তারা করবেন। কাকে কাকে কীভাবে দেবে, এটা তারাই ঠিক করবে। তাদের একটি অ্যাকাউন্ট থাকবে, সেখান থেকে তারা অর্থ সংগ্রহ করবে।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া আইনটিতে ১৪টি ধারা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সরকারিভাবে জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণ করা হবে এবং আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারিভাবে জাকাত দানে উদ্বুদ্ধ করা হবে। জাকাত সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন, জাকাত দানে আগ্রহী ব্যক্তিদের জাকাতযোগ্য সম্পদের বিষয়টি খসড়া আইনে রয়েছে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সুরা তাওবায় প্রিসাইসলি সাতটি ক্যাটাগরি করে দেওয়া হয়েছে, প্রত্যেক ব্যক্তি যে জাকাতযোগ্য, সেই সাত ক্যাটাগরির যেকোনো একজনকে জাকাত দিতে পারবেন। বিভিন্ন ইসলামিক দেশগুলোতে বোর্ড আছে। অনেকেরই হয়তো ব্যক্তিগতভাবে দেওয়ার সুযোগ থাকে না, সে হয়তো জাকাত ফান্ডে দিয়ে দিলেন। তখন জাকাত ফান্ড তার পক্ষে জাকাত আদায় করে দেবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close