রংপুর ব্যুরো

  ১৯ অক্টোবর, ২০২১

পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লীতে হামলা অগ্নিসংযোগ, গ্রেপ্তার ৪২

রংপুরের পীরগঞ্জে এক হিন্দু তরুণের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে জেলেপল্লীতে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। মন্দির ও ২০-২২ বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এতে বাড়ির আসবাবপত্র ও অন্য জিনিসপত্রের পাশাপাশি গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগিও পুড়ে গেছে। আহত হয়েছে অর্ধশত নারী-পুরুষ। পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের বটেরহাট মাঝিপাড়ায় রবিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পীরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট রাতভর কাজ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাতেই অতিরিক্ত পুলিশসহ সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়। এ ঘটনায় ৪২ জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত রবিবার দুপুরে মাঝিপাড়ার ‘এক তরুণের ফেসবুক আইডি’ থেকে পবিত্র কাবাশরিফকে অবমাননা করে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। ওই পোস্টটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে বিকালে বটেরহাট মাঝিপাড়ায় হামলা করে একদল দুর্বৃত্ত। হামলাকারীরা একটি মন্দিরসহ বেশ কিছু বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। পরে রাতে আবারও শত শত লোক সংগঠিত হয়ে হিন্দুপল্লীতে অগ্নিসংযোগ করে। এতে ওই গ্রামের অনেক গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি আগুনে পুড়ে গেছে। এ সময় মাঝিপাড়া গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরে লুটপাটও চালায় দুর্বৃত্তরা।

সহকারী পুলিশ সুপার (ডি সার্কেল) কামরুজ্জামান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ফেসবুকে ওই গ্রামের এক হিন্দু তরুণ ‘ধর্মীয় অবমাননাকর’ পোস্ট দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলে গ্রামে উত্তেজনা ছড়ানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই তরুণের বসতবাড়ির আশপাশে অবস্থান নেয়। শেষ পর্যন্ত সেই বাড়িটি রক্ষা করা গেলেও হামলাকারীরা দূর থেকে কিছু বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। ভোরে পীরগঞ্জ থানার ওসি সরেস চন্দ্রের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪২ জনকে আটক করা হয়েছে। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। বাকি দুর্বৃত্তকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

পীরগঞ্জ উপজেলা হিন্দু ধর্মীয় নেতা অ্যাডভোকেট সন্তোষ কুমার বলেন, ‘কেউ যদি কোনো ধর্মকে অবমাননা করে তার জন্য দেশের প্রচলিত আইনে বিচারের ব্যবস্থা আছে। তবে এটি কেমন আচরণ যে, গোটা হিন্দুপল্লী জালিয়ে দিতে হবে। এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনাসহ জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। প্রতি পরিবারকে দুই হাজার টাকা দিয়েছেন দলের নেতারা। গতকাল দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেন।

বেলা ১১টার দিকে করিমপুর গ্রামটি পরিদর্শনে আসেন বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াব ভূঞা, পুলিশের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার, জেলা প্রশাসক আসিব আহসান ও র‌্যাব-পুলিশের কর্মকর্তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close